একজন মমতাময়ী মা-ই পারেন…. রিয়াদ আলী

প্রশান্তি অনলাইন ডেক্স ॥   \   বিমানে হঠাৎ দেখি প্রধানমন্ত্রীর কোলে আমার মায়ের মাথা
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে উড়ল আকাশে।জানালা দিয়ে নিচের ছোট ছোট বাড়িঘর দেখছি।হঠাৎ কে যেন বলে উঠল,আপনাকে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করছেন।ঠিক সেই মুহূর্তে আমি অত্যন্ত দ্রুততায় পৌঁছে গেলাম ঘটনাস্থলে তথা বিমানের সামনের দিকে। প্রধানমন্ত্রী বসে আছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোলে আমার মায়ের মাথা। আমার মায়ের নিঃশ্বাস বইছে প্রচণ্ড ধীরলয়ে। তার সারা শরীর ধীরে ধীরে গ্রাস করছে বরফ শীতলতা। আমি জানি না কী হতে যাচ্ছে। আমি হতবিহ্বল। হঠাৎ কানে এলো, ‘দাঁড়িয়ে দেখছ কী! তাড়াতাড়ি পায়ে মালিশ শুরু কর। ওনার শরীর দ্রুত তাপমাত্রা হারাচ্ছে।’ কথাটি বললেন কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নন। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে। তারপর সবাইকে বললেন আমার মাকে বিমানের সিটে তুলে দেওয়ার জন্য। এরপর প্রধানমন্ত্রী বিমানবালাদের বললেন কুসুমগরম পানিতে এলাচ, লবণ ও চিনির মিশ্রণে শরবত বানাতে। এ শরবত পান করানো হলো আমার মাকে। মায়ের শরীরের তাপমাত্রা তখনো স্বাভাবিক হয়নি। আমি মায়ের পায়ে মালিশ করে চলছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর শরবত পানীয় আর স্যালাইন পানি খাওয়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উৎকণ্ঠা দেখে বাংলাদেশ বিমানের ক্রুরা ছিলেন মনিটরিংয়ে ব্যস্ত। তারা স্যালাইন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত শরবত তৈরি করছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ব্যস্ত মাকে নিয়ে। ১০ মিনিট অন্তর ব্লাড প্রেসার এবং পালস পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন তিনি। প্রতিবার পর্যবেক্ষণ করে তা আবার জানিয়ে আসছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতেই ক্ষান্ত ছিলেন না, পাশাপাশি আমার কাছেও ১০ মিনিট পরপর অবস্থা ‘এখন কেমন?’ জানতে চাচ্ছিলেন। এভাবে তিন ঘণ্টা যায়; ধীরে ধীরে আমার মা চোখ খুললেন। তার শরীর তখন আস্তে আস্তে ফিরে পাচ্ছে কিছুটা তাপমাত্রা। এই টানা তিন ঘণ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছুই নিলেন না মুখে। ক্ষুধা, পিপাসা, ঘুম, বিশ্রাম কিছুই যেন আর তাকে স্পর্শ করছে না। মুখজুড়ে তার সে কী উদ্বেগ আর ব্যাকুলতা। নিজের ব্যক্তিগত ব্যাগ খুলে বের করে দিলেন কিছু ওষুধ। আসলে ততক্ষণে দিবালোকের মতো আমাদের কাছে পরিষ্কার যে, দেশের স্নেহময়ী মা থাকলে আর দরকার নেই কোনো সার্টিফিকেটধারী পাস করা ডাক্তার। আসলেই তো তাই! পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জননেত্রী আমাকে বললেন, পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় ভুটানের অধিবাসীরা উঁচু জায়গায় গিয়ে লো প্রেসার হলে এই পানীয়ের শরণাপন্ন হয়। আমাদের দেশের মায়ের এই আচরণে আমার চোখ দিয়ে কেবল অঝর অশ্রুই বের হলো। কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনো ভাষা যে আমার জানা ছিল না। আমার এই জীবন দিয়ে ঋণ শোধ করলেও তা তো প্রয়োজনের চাইতে অনেক কম। একজন প্রধানমন্ত্রী কোথায় আর আমি কোথায়? ব্যবসায়ী পরিবারে আমার জন্ম। আমার মা মনোয়ারা হাকিম আলী এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি। আমিও ব্যবসা করছি। মা-ছেলে দুজনই এবার প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরের সঙ্গী ছিলাম। বিমানে মা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি আসনে। বাথরুম থেকে ফেরার পথে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজে ছুটে গিয়ে মাকে বুকে জড়িয়ে নেন। তার ভালোবাসার পরশে সুস্থ হয়ে ওঠেন আমার মা মনোয়ারা হাকিম আলী। অতীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়াবী কাজের অনেক গল্প শুনেছি। এবার আমার মায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী যা করলেন এর কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমাদের পরিবারের নেই। শুধু বিমানে নয়, ইতালি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিনই খোঁজ নিয়েছেন মায়ের।এমনকি দেশে আসার পরও খবর নিয়েছেন কেমন আছেন আমার মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.