পুলিশের নিয়মিত হয়রানির একটি এটি

পুলিশের নিয়মিত হয়রানির একটি এটি

এখসানুর রহমান॥আমার পরিবারের সবার পাসপোর্ট আজ ডেলিভারি নিয়ে আগারগাও থেকে রিকশা যোগে লালমাটিয়ার দিকে যাওয়ার পথে রসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের ঠিক পেছনে তাজমহল রোডে ঢোকার মুখে বজ্র কন্ঠে এই রিকশা দাড়াও, শুনে রিকশা থামালাম, তখন বাজে বিকাল ৪টা… তারপরই শুরু হাসির কিন্তু  চরম বিরক্তিকর নাটকের! এস আই সেলিম (যতদুর মনে পড়ে) সহ ৫ সদস্যের টহল পুলিশের দল ঘিরে ধরলো আমাকে, উদ্দেশ্য চেক করবে, আমি বাড়িয়ে দিলাম সহযোগীতার হাত… নিজেই পকেট থেকে বের করে দিলাম সবকিছু, কিন্তু তারা সন্তুষ্ট না, নিজেরাই হাত ঢুকিয়ে চেক করবে রাজী হলাম, ভাগ্যিই প্যান্টের বেল্ট পড়া ছিলো, নাহলে ইজ্জএতর দফা-রফা হয়ে যেত। আমার পকেটে যা ছিলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোল ৪টি পাসপোর্ট- যেগুলো বের করে দেয়ার সাথে সাথেই একজন কনষ্টেবল খপ করে আমার এক হাত ধরে ফেললো এমনভাবে যেন জংগী তামিম চৌধুরীর সেকেন্ড ইন কমান্ড কে ধরে ফেলেছে! পরিচয় জিজ্ঞাসা করায় আমার প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকরির পরিচয়ে তাদের সন্দেহ ঘনীভূত হয়ে কালো মেঘের আকার নিলো, এমন সময় আরো তিনজন আনসার দলে যোগ দিয়ে শক্তিবৃদ্ধি করলো, শুরু হলো জেরা… প্রশ্ন: আপনার কাছে এতগুলো পাসপোর্ট কেন? উত্তর: এই মাত্র ডেলিভারি নিয়ে আসলাম। প্রশ্ন: এগুলো সহ আপনাকে থানায় নিয়ে যাচাই –বাছাই করতে হবে? উত্তর: ক্যানো, এই দায়িত্ব কি আপনাদের? পুলিশের উত্তর: এতগুলো পাসপোর্ট নিয়া চলাফেরা করার আইন নাই। আমার উত্তর: এগুলো তো আমার স্ত্রী-সন্তানদের, দেশের কোন আইনে আছে পাসপোর্ট নিয়া চলা-ফেরা করা যাবে না? ইতিমধ্যে একজন দুজন করে পাবলিক জড়ো হওয়া শুরু করেছে। পুলিশ এরা যে আপনার পরিবারের তার প্রমান কি? আমি পাসপোর্টগুলোতে স্বামী এবং বাবা হিসাবে আমার নাম আছে, এছাড়া আমার পাসপোর্ট ও এখানে আছে… আর কি প্রমাণ লাগবে? পুলিশ ঠিক আছে থানায় গিয়ে এগুলো যাচাই হবে। পুনরায় পুলিশ: আপনার পকেটে এতো টাকা ক্যান (সব মিলিয়ে ৫০০০/- মতো হবে)? আমি মাত্র ৫০০০/- হতে পারে নাও হতে পারে, এটা বহন করা নিষেধ নাকি? পুলিশ: কোথায় পাইছেন? আমি: আমার জরুরী একটা কাজ আছে, আপনারা আমার সময় নষ্ট করছেন এবং আমাকে বিনা কারণে নাযেহাল করছেন, আমার সরকারী পরিচয়ে আপনাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কথা। পুলিশ: আপনি সরকারি অফিসারই হোন আর ভি আই পি হোন এগুলো দেয়া যাবে না, আচ্ছা আপনি বললেন এই মাত্র ডেলিভারি আনছেন, ডেলিভারি স্লিপ দেখান! আমি হাসবো না কাইন্দা দিবো বুঝতে পারছিলাম না, এতো জাদরেল পুলিশ জানেই না যে… ডেলিভারি স্লিপ জমা নিয়াই পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়! এরই মধ্যে উতসাহী জতা পরামর্শ দিলো পাসপোর্ট এর তথ্যগুলো আমি না দেখে বলতে পারি কিনা তা পরীক্ষা করলেই ঝামেলা মিটে যায়। আমি তাদের সহযোগীতায় মুগ্ধ, কারণ অনেকেই বুঝে গেছে পুলিশ অন্য কিছুর আশায় ঝামেলা করছে, তাই তারা আগ বাড়িয়ে আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। শুরু হলো নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ, একজন কনষ্টেবল পি এস সি-র চেয়ারম্যানের ভাব নিয়ে প্রশ্ন শুরু করলো, সবগুলোর সঠিক উত্তর দিয়ে যখন আমিও বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ভাব ধরতে যাবো তখনই বাধলো বিপত্তি… । শেষ প্রশ্নে গেলাম আটকে! প্রশ্ন: আপনার শ্বশুরের নাম? আমি: চান মিয়া। সেই চেয়ারম্যান ভাবধারী পুলিশ: স্যার ধরা খাইছে, পুরা মুখস্ত করতে পারে নাই। এস আই: ক্যান মিলে নাই? চেয়ারম্যান ভাবধারী: না স্যার নামের শুরুতে “ল্যাটা” আছে সেইটা বলতে পারে নাই, ভুইলা গেছে।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন এমআরপি তে সকল তথ্য ইংরেজীতে লেখা থাকে, সেই মতো আমার শ্বশুরের নাম লেখা লেইট চান মিয়া! আমাকে প্রশ্নকারী চেয়ারম্যান ভাবধারী পুলিশ সাহেব লেইট মানে “প্রয়াত” কে ল্যাটা ভেবে এটিকে নামের অংশ ধরে নিয়ে আমার ভূল ধরে ফেলেছেন… বুঝতেই পারছেন বিদ্যার টাইটানিক এক একজন! আমি তখন তাকে বললাম… ভাইয়া এটা ল্যাটা হবে না, লেট হবে মানে প্রয়াত! ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০ মিনিট পেরিয়ে গেছে এবং উপস্থিত জনতার মধ্যে একধরনের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, পরিস্থিতির অবনতি আচ করতে পেরে তারা আমাকে বিদায় দেয়।
আমার জিজ্ঞাসা: ১। আমাদের দেশে নিজের এবং পরবারের সদস্যদের পাসপোর্ট বহন কোন আইন দ্বারা নিষিদ্ধ কিনা? ২। ৫০০০/- টাকা সাথে বহন করার জন্য পুলিশের আগাম অনুমতি লাগে কিনা? ৩। ইচ্ছে করলেই পুলিশ সাধারণ নাগরিককে নাযেহাল করার ক্ষমতা ধারণ করে কিনা? ৪। পথে-ঘাটে পাসপোর্ট যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব/ ক্ষমতা/ যোগ্যতা পুলিশের আছে কিনা? ৫। প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকুরে পরিচয় পাওয়ার পরও ৩য় শ্রেণীর পদ মর্যাদা ধারী এই সব পুলিশ এভাবে নাযেহাল করার অধিকার বহন করে কিনা? যদি এগুলোর উত্তর না বোধক হয় তবে আমার অনুরোধ উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ দৃষ্টিদিয়ে ব্যবস্থা গহ্রণ করুন এবং সাধারণ মানুষ সচেতন হউন। পরে রিকসা চালকের কাছে শুনেছি ঐ এলাকায় এই ঘটনাটি নিত্য দিনের ঘটনারই ন্যায় একটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.