ই-কামার্সে মোবাইল অপারেটরদের ঠেকাতে একসেঙ্গ দেশীয় উদ্যোক্তারা

টিআইএন॥ বেসিস ষ্ট্যান্ডিং কমিটির ১ম মিটিং করতে গিয়ে দেখি দেশের সব ই-কমার্স উদ্যোক্তারা জরুরী মিডিয়া কনফারেন্সে ব্যস্ত। আমিও যোগ দিলাম বৈকী। দেমের ই-কমার্স বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হ্েচছ। আর সেই বাজার ধরতে যেমন দেশীয় উদ্যোক্তারা ঘাম ঝরাচ্ছে তেমনি সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশের লোভ সামলাতে পারছে না মোবাইল অপারেটররা। তবে ই কমার্সে মোবাইল অপারেটরদের ঠেকাতে একজোট হয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন দেশীয় ই-কমার্স উদ্যোক্তরা। একই সঙ্গে এসব উদ্যোক্তারা বিদেশি ই কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল অপারেটরদের থেকে স্বতন্ত্র হয়ে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করার কথাও জানিয়েছেন। শনিবার বেসিস মিলনায়তনে বেসিস ও বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্স আয়োজিত দেশীয় ই কমার্স শিল্পের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা: নেট নিউট্রালিটি ও সুষ্ঠু প্রতিযোগীতা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে একজোট হয়ে কাজ করতে এমন দাবি জানান উদ্যোক্তারা। বেসিসের গোল টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সম্প্রতি দেশের প্রথম সারির একটি মোবাইল অপারেটরের ই-কমার্স ব্যবসাকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেন। অপারেটরটি ডিজিটাল সার্ভিসের নামে এখন ই-কমার্স ব্যবসায় নেমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুমকীর মুখে ফেলে দিচ্ছে বলে মতামত দেন তারা।
বিদেশী এবং টেলিকম অপারেটরদের ঠেকাতে প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কাজ করতে থাকা ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সরে আসবে বলেও বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে একটি প্রেজেন্টেশনে আজকের ডিল এবং বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ই কমার্সের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকা। ই-কমার্স কোম্পানিসহ এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ধরণের ৫ হাজার উদ্যোক্তা রয়েছে, যাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র। এছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের খুচরা বাজারগুলোর ২ থেকে ৩ শতাংশ অনলাইনে আনা সম্ভব হলে অনলাইন বাজারের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। যেখানে অন্তত ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হবে। তবে সম্ভাবনাময় এই খাতে ইতোমধ্যেই বড় বড় বিদেশী কোম্পানী বিশেষ করে টেলিকম অপারেটরদের সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয়েছে। তারা টেলিকম সেবাদানের অনুমতি নিয়ে ই কমার্সে ব্যবসা শুরু করেছে। যা দেশের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য হুমকীস্বরূপ বলে বলেন অংশগ্রহণকারীরা। এসব কোম্পানির অবৈধভাবে অত্যধিক বিনিয়োগের ফলে বাজারে একটি অসম প্রতিযোগীতা শুরু হচ্ছে। তারা নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সম্ভাব্য ভোক্তাদের বিনামূল্যে সাইট ভিজিট করতে দিচ্ছে। এছাড়া লোভনীয় নানা অফার দিয়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলেও জানান বক্তারা। তাদের কাছে দেশীয় কোম্পানীগুলোর টিকে থাকা দায় হবে। কারণ তারা এ ধরণের সেবা দিতে পারছে না।
বক্তারা আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ধরণের সুযোগ নেই। কোনো টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া, বিদেশী ই কমার্স সাইটগুলো দেশীয় পন্য বিক্রি করতে পারবে না এমন নানা উদাহরণ রয়েছে। যথাযথ গাইডলাইন না থাকার কারণে টেলিকম অপারেটররা সরাসরি বিনিয়োগ করে বাজারকে অস্থির করে তুলছে। দেশের উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে ও সম্ভাবনাময় খাতকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ আইন বা নীতিমালা করে টেলিকম কোম্পানীকে দেশের ই কমার্স বাজারে প্রবেশে প্রতিহত করা এবং কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হলে দেশীয় কোম্পানীর সঙ্গে অন্তত ৫০ শাতাংশ শেয়ার ভাগাভাগি করে কাজ করতে হবে এমন দাবী জানান উদ্যোক্তরা। গোলটেবিল বৈঠক থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), সংশ্ল্ষ্টি মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতরগুলোতে বৈঠকের মাধ্যমে উপস্থাপন করবে বেসিস। প্রয়োজনে এ বিষয়ে খসড়া নীতিমালা প্রদান করা হবে বলেও জানায় বেসিস ও বেসিস ই কমার্স অ্যালায়েন্স। গোলটেবিল বৈঠকে বেসিস সভাপতি মোস্তফা জব্বারের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের জ্যৈষ্ঠ সহ সভাপতি, রাসেল টি আহমেদ, সহ-সভাপতি এম রাশিদুল হাসান, পরিচালক উত্তম কুমার পাল, মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, বেসিসের ডিজিটাল কমার্স সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সেয়দা কামরুন আহমেদ, আজকের ডিলের পরিচালক ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহম মাশরুর, ব্যারিষ্টার ইন ল’ এবিএম হামিদুল মিসবাহ, মাষ্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক আলী কামরান আল জাহিদসহ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ষ্টেকহোল্ডার, জাতীয় গণমাধ্যম ও সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.