গল্প নয় সত্যি; বাড়ি বাড়ি থালা-বাসন মেজে তিনি বানিয়ে ফেললেন গরীবের জন্য এক হাসপাতাল

আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার হংসপুকুর এখন অনেকেই চেনেন। চেনেন সুভাসিনী মিস্ত্রী নামের অতি সাধারণ এক নারীর কারণে। অতি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সুভাসিনীর বিয়ে হয়েছিল এক দিনমজুরের সঙ্গে। সভাসিনীর বয়স তখন ১২। বাধ্য হয়ে বাল্যবিয়ে করা মেয়েটি বিধবাও হয় মাত্র ২৩ বছর বয়সে। প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান স্বামী। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বেশ কয়েক বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে থালা-বাসন মেজেছেন। তাতে যে আয় হতো তার পুরোটা ব্যায় করেননি, এক পয়সাও হাতে থাকলে তা জমিয়েছেন সুভাসিনী। জমিয়েছেন একটি স্বপ্ন পুরণের জন্য স্বামীর মৃত্যুর পরই যে ভেবেছিলেন, ‘সব গরিবকে আর এভাবে মরতে দেয়া যাবে না, গরিবের জন্য একটা কিছু করতে হবে।’ ওই একটা কিছু করা মানে, একটা হাসপাতাল গড়া। বাড়ি বাড়ি গিয়ে থালাবাসন মেজে, সবচি কেটেকুটে দিয়ে যেটুকু আয় হয় তা থেকে কয় পয়সাই বাঁচে যে হাসপাতাল গড়বেন। আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো এমন চিন্তা করলে তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না। কিন্তু সুভাসিনী, সুভাসিনীর স্বপ্ন, তার প্রতিজ্ঞাটা যে অনন্য সাধারণ গরিবের জন্য হাসপাতাল গড়াই সেই স্বপ্নটাকে কখনো ফিকে হতে দেননি সুভাসিনী।
স্বামীর মৃত্যুর সময় দিনে মাত্র ৫ পয়সা আয় করতেন সুভাসিনী। ঘরভাড়া বাবদ দু’পয়সা দিতেন বাড়িওয়ালাকে, দুপয়সা যেত খাওয়া-দাওয়ায় আর বাকি এক পয়সা জমাতেন। এক সময় শাক-সবজি বিক্রি শুরু করলেন। আয় কিছুটা বাড়লেও বিলাসিতার জন্য কখনো একটা পয়সাও ব্যয় করেননি। এভাবে অল্প অল্প করেই জমে যায় এক লাখ ভারতীয় মুদ্রা। সেই টাকায় হংসপুকুরের এক একর জমি কিনলেন। নিজের মাথা গোঁজার জন্য নয়, গেিবর চিকিৎসার জন্য। বড় ছেলে ততদিনে ¯œাতক হয়েছে। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছিলেন না বলে মেজ ছেলে অজয়কে অনাথ আশ্রমে দিয়েছিলেন সুভাসিনী। অজয় ততদিনে ডাক্তার হয়েছে। সুভাসিনী অজয়কেই বললেন, ৪০ বছর ধরে লালন করে আসা স্বপ্নটির কথা। শুরু হলো ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘরে গরিব রোগীদের চিকিৎসা।
অজয়ের ডাক্তার বন্ধুরাও যোগ দিয়েছিলেন বিনা পারিশ্রমিকে গরিবদের চিকিৎসা সেবা দেবার কাজে। প্রথম দিনে বিনা খরচে চিকিৎসা পেয়েছিল ২৫২ জন মানুষ। এতগুলো মানুষকে সার বেঁধে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মৃত স্বামীর কথা মনে পড়েছিল, নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলেছিলেন সুভাসিনী মিস্ত্রী। এখন দুঃস্থ রোগীদের মুখে হাসি ফোটান সুভাসিনী। একজন সৎ, নিষ্ঠাবান মানুষের মানবকল্যাণের স্বপ্ন পূরণের সংকল্প এবং প্রয়াস দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। ১৯৯৩ সালের সেই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটি তাই আজ আয়তন এবং খ্যাতিতে অনেক বড়। তিন একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুভাসিনীর স্বপ্নের সেই হাসপাতাল। ২৩ বছর বয়সে বৈধব্য বরণ করা সুভাসিনী, ঘরে ঘরে গিয়ে থালাবাসন মেজে, পথে পথে শাক-সবজি বিক্রি করে এক পয়সা দু’পয়সা করে জমানো সুভাসিনী তার স্বপ্নের হাসপাতালটির নাম রেখেছেন, হিউম্যানিটি হসপিটাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.