সৈয়দ আশরাফই সাধারণ সম্পাদক

প্রধান প্রতিবেদক॥ আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠীত হচ্ছে। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে দলের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন কারা আসছেন, কে কোথায় ঠাঁই পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন। তবে কাউন্সিলকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও এবার বড় ধরনের তেমন কোনো চমক থাকছে না। কারন দলের শীর্ষ দুই পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো পরিবর্তন যে আসছে না তা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে কমিটির কলেবর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবং নতুন বিভাগ হওয়ায় পুরনোদের সাথে নতুন করে কিচু মুখ যোগ হতে পারে। আর সক্রিয় নেতাদের কারো কারো পদোন্নতিও হতে পারে। এ ছাড়া তেমন কোনো চমক বা পরিবর্তন থাকছে না এবারের সম্মেলনে।
‘৭৫-এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দলীয় সভাপতি নির্বাচিত হন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। সেই থেকে গত ৩৫ বছর ধরেই দলেল কান্ডারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আগামী জাতীয় সম্মেলনেও তিনিই সভাপতি থাকছেন এটা নিশ্চিত। কারণ গত প্রায় তিন যুগ ধরে এই পদে শেখ হাসিনার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করেননি কেউ। এবারো এ পদে প্রার্থী ঘোষণার মতো অবস্থানে নেই আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। স্বাভাবিকভাবেই এর পরের আকর্ষণ সাধারণ সম্পাদক পদ। ২০০৯ সালের জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পরের বারের জাতীয সম্মেলনেও তিনিই নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বড় কোনো ‘দুর্ঘটনা’ না হলে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান পদে সৈয়দ আশরাফের থাকার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এর পরও এ পদের জন্য চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অনেকেই।
সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই দলীয সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের ব্যক্তি। দলের দু:সময়ে তার ভূমিকার কারণে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এ পদে তাকে বেশ পছন্দ করেন। কিন্তু সৈয়দ আশরাফ এ পদে না থাকার বিসয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে দলের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলেছেন। এতে এবারের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন তা নিয়ে গুঞ্জনের ব্যাপক ডালপালা ছড়ায়। সাধারণ সম্পাদক পদের দৌঁড়ে নামেন দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা। তারা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করে বিভিন্ন মাধ্যমে শীর্ষ পর্যায়ে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এসব নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিপে গোপনে সোচ্চার প্রকাশ্যে আবার ততটা নন। তবে সম্প্রতি দলীয় সভাপতির আগ্রহ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের পছন্দের কথা বিবেচনা করে সাধারণ সম্পাদক পদে আরেক মেয়াদে থাকার ব্যাপারে সম্মতি দেন সৈয়দ আশরাফ। এতে সাধারণ সম্পাদকের দৌঁড়ে থাকা নেতারা অনেকটাই ছিটকে পড়েন।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা আলাপকালে বলেন, দুইবারের সাধারণ সম্পাদক হলেও সবসময়ই পর্দার আড়ালে থেকেছেন আশরাফুল ইসলাম। সব সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। আশরাফ মনে করেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব শক্তিশালী হলে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হবে, বাংলাদেশ শক্তিশালী হবে। আর বিষয়টি মাথায় রেখে সৈয়দ আশরাফ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সুদৃঢ় করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে গেলে আওয়ামী লীগকে যেসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে তার জন্য শেখ হাসিনার পাশে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো নেতার প্রয়োজন। ইত:পূর্বে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শেখ হাসিনার আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন সৈয়দ আশরাফ। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কেউ কোনো দুর্নীতি, অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি। তা ছাড়া বিরোধী রাজনীতিক এবং সাধারণ মানুষের কাছেও নিজেকে বেশ গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তাই এ পদে আপাতত কেউ নন, সৈয়দ আশরাফকেই উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করা হচ্ছে। আর বিষয়টি অনেকটাই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলো নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্মেলনের মধ্যদিয়েই নেতা নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগকে গতিশীল করতে কাকে নেতা বানানো যায় তা কাউন্সিলররা ঠিক করেন। তবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইতোমধ্যে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি গত দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করেছেন। আমার জানা মতে, শেখ হাসিনার আস্থাও অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তাই এ পদে তিনি যে প্রায় চূড়ান্ত সে কথা বলাই যায়। সে জন্য যারা নানা মাধ্যমে এ পদে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা আসলে স্বপ্নের ঘোরের মধ্যেই আছেন।’
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে আগামী সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই নন, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা আছেন তাদের বেশির ভাগই থেকে যেতে পারেন। তবে নতুন পদ সৃষ্টি হওয়ায় কিচু নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। এসব পদেও অবশ্যই তেমন কোনো চমক থাকছে না। যারা নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে তারা গত কয়েক মাস ধরেই সরকার বা দলে গুরুত্ব পেয়ে আসছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.