অন্য এক শেখ হাসিনার গল্প

শর্মিলা সিনড্রেলা …  রাষ্ট্রনায়ক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার এই দুটি পরিচয় সবারই জানা। আর গণমাধ্যমের কল্যাণে তার জনদরদী গুণটিও প্রায় সবার জানা। কিন্তু এর বাইরেও তার আরো অনেক গুণ রয়েছে। আছে তাকে নিয়ে অনেক ছোট ছোট সব গল্প। সেসব কিছু মিলিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারো মা আবার কারো প্রিয় আপা।

তাকে নিয়ে ক্যামেরার সামনে বা পত্রিকার পাতায় আমরা যেটুকু গল্প শুনি তার বাইরেও থাকে ছোট-বড় অনেক ঘটনা। সেসবই মূলত প্রতিফলিত করে সত্যিকারের শেখ হাসিনাকে। সেই গল্পগুলোই শোনালেন দীর্ঘসময় ধরে আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী বিট কভার করা কয়েকজন সাংবাদিক। শোনালেন শেখ হাসিনাকে নিয়ে পর্দার পেছনের কিছু গল্প।

ঘুম থেকে উঠেই হাসুকে একটা ফুল দিয়েছি: দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি উত্তম চক্রবর্তী শোনালেন শেখ হাসিনার কোনো এক জন্মদিনের গল্প। বললেন, ‘উনি কখনোই জন্মদিনে আড়ম্বর পছন্দ করেন না। এত এত বছর ধরে তার রিপোর্ট কাভার করছি কোনোদিন দেখিনি তিনি কেক কেটে জন্মদিন পালন করেছেন। দেশের বাইরে আছেন বলেই না, দেশে থাকলেও তিনি সেটা করেন না। শুধু ফুল এবং শুভেচ্ছাবার্তা গ্রহণ করেন। একবার তার জন্মদিনে গেছি সুধাসদনে। ওয়াজেদ মিয়া মারা যাওয়ার ২-৩ বছর আগে। তিনি তখনও নিচে নামেননি। ওয়াজেদ মিয়া নেমেছেন। জানতে চাইলাম, জন্মদিনের পরিকল্পনা কি, হাসিমুখে বললেন, ঘুম থেকে উঠেই হাসুকে একটা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেলেছি। তার আরেকটি বড় গুণ তার আতিথেয়তা। নিজে রান্না করে বা পাতে তুলে দিয়ে খাওয়াতে ভালোবাসেন। বাঙালী নারীর যেসব গুণ থাকার কথা তার সবই তার মধ্যে আছে।’

যেখানে আমরা যেতে ভয় পেতাম সেখানেও তিনি যেতেন: এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার আরাফাত সিদ্দিকী সোহাগের কাছ থেকে জানা গেলো শেখ হাসিনার চরিত্রের অন্য একটি দিক। তার ভাষায় ‘একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার মনে হয়েছে তার সবচেয়ে বড় গুণ তিনি অসাধারণ স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন একজন মানুষ। কখনো কোনো তথ্য তিনি ভুলে যান না। কোথাও গেলে যা যা তিনি দেখেন তা যেন শুধু দেখেন না, পর্যবেক্ষণও করেন। ছোট ছোট তথ্য আমরা ভুলে গেলেও তিনি অনেক সময় স্মরণ করিয়ে দেন। লিখিত বক্তব্যেও অনেক ছোট ছোট ভুল তার চোখ এড়ায় না। তাছাড়া তার সাহসও আমাকে মুগ্ধ করে। ২০১৩-১৪ সাল বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের জন্য খুবই কঠিন একটা সময় ছিলো। সেসময় তিনিও সারাদেশ ভ্রমণ করেছেন। তখন আমরা সাংবাদিকরাই দেশের কিছু কিছু জায়গায় যেতে ভয় পেতাম। কিন্তু তিনি সেসব জায়গাতেও চলে যেতেন। মানুষের কথা শুনতেন। তার নিরাপত্তা নিয়ে যেখানে সবাই উদ্বিগ্ন, সেখানে তিনি কোনো কিছু ভালো লাগলেই শিডিউলের বাইরে সেখানে চলে যেতেন। যদিও সেটা খুবই ভয়ঙ্কর তার জন্য এবং তার নিরাপত্তারক্ষীদের জন্যও।’

সেই ছোট্ট বিষয়টাও উনি মনে রেখেছিলেন:  শুধু আড়ম্বর বিমুখ বা সাহসীই নন, প্রচণ্ড যত্নশীলও বঙ্গবন্ধুকন্যা। বিটিভির নির্বাহী প্রযোজক সাখাওয়াত মুন শোনালেন তেমনই একটি ঘটনার গল্প। ‘সেবার রাশিয়া, বেলজিয়াম আর জাপান ট্রায়াঙ্গেলে সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে অনেকজন সাংবাদিক। রাশিয়া গিয়েই আমি আমার লাগেজ হারিয়ে ফেললাম। অনেক চেষ্টা করেও সেটা আর পেলাম না। পরে বেলজিয়ামে গিয়ে আবার ফেরত পেলাম। এর মধ্যে সফরে উনার সঙ্গে দেখা হলেই উনি আমাকে লাগেজের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। মজা করে বলেছেন, ভালোই হয়েছে, ক্লেইম করো বেশি টাকা ফেরত পাবা। এত ছোট একটা বিষয় উনি মনে রেখেছেন দেখে আমি খুবই আপ্লুত ছিলাম। তার মানবিকতার গুণটিতো কারো অজানা নয়। নায়িকা বনশ্রীকে ডেকে নিয়ে সহায়তা করা বা চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের চিঠির জবাব দেওয়াটাও কিন্তু সব প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশা করা যায় না। আর উনি তো কেবল প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি আমাদের সবার অভিভাবক। পরিবারের বড় সদস্য যেমন সবাইকে আগলে আগলে রাখেন, তিনিও দেশের প্রতিটি মানুষকে সেভাবেই আগলে রাখতে চান।’

নৌবিহারের ঘটনাটা খুব মনে পড়ে: সেবার দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণে গেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে অনেক অনেক সাংবাদিক। সেই সময়েরই স্মৃতিচারণ করলেন জাতীয় দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার অমরেশ রায়। ‘হাং নদীতে নৌবিহারের কথা খুব মনে পড়ে। সেবার সফরের শেষের দিন নৌবিহারের আয়োজন ছিলো। নৌবিহারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ছিলো। কেউ কবিতা আবৃতি করছিলো, কেউবা গান গাইছিলো। প্রধানমন্ত্রীও তাদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সারাদেশের সঙ্গে এভাবেই তিনি যোগাযোগ করতেন। সেই সময় কভারেজের জন্য আমরা ৪-৫ জন সাংবাদিক ওখানে থাকতাম। দেখা যেত তিনি তখনও নিজের হাতে খাবার তুলে দিতেন। আবার কখনো সামনাসামনি বসে অনেক গল্প করছেন।’

কোনো সমস্যার কথা তার কানে গেছে কিন্তু সমাধান হয়নি, এমন কখনোই হয়নি: মমতাময়ী শেখ হাসিনার কথাই আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলেন চ্যানেল আইয়ের জয়েন্ট অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর তারিকুল ইসলাম মাসুম। বললেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) জেনেছেন মানেই সেই সমস্যার সমাধান হবে। তিনি জেনেছেন কিন্তু সমস্যাটির সমাধান হয়নি এমন কখনো দেখিনি। শুধু তার কান পর্যন্ত যেতে হবে , তাহলে সমাধান আসবেই। আরেকটি বিষয় হলো, সংবাদ সম্মেলনে আমরা তাকে অনেকবারই পেয়েছি। সেখানে তাকে একটি প্রশ্ন করলে ওই বিষয়ে পাল্টা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুতি মাথায় নিয়ে তবেই প্রশ্ন করতে হয়।’

এমনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের স্বার্থে নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল, কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড মায়াময়ী। জন্মদিনে গল্পগুলো শোনানো শেষে সবারই প্রত্যাশা, শেখ হাসিনা যেন অনেকদিন বাঁচেন। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ঠিক রাখার জন্য তার দীর্ঘদিন বেঁচে থাকাটা খুবই জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.