শান্তি, আনন্দ ও বেদনা এবং আমাদের করনীয়

বাংলাদেশের মানুষ এখন যে শান্তিতে, নিরাপদে বসবাস করছে এর কোন সন্দেহ নেই। বরং আশা-আকাঙ্খার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। শেখ হাসিনার সরকার যখনই এসেছে শান্তি দিতে চেষ্টা করেছে কিন্তু শয়তান এবং দেশের দুশমনদ্বয় দ্বারা শান্তি বিঘিœত হয়েছে মাত্র। বর্তমানে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো শান্তির পথে সফল হয়েছে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের মনেও শান্তির দোলা বইয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আগামী দিনে এই শান্তির মাত্রাবৃদ্ধিকল্পে আরো নতুন এবং সুদুরপ্রসারী পদক্ষেপ দরকার। কারণ দেশের দুশমন এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীরা এই শান্তির মাঝেও পথ খুজে কিভাবে আবার অশান্তি সৃষ্টি করা যায়। বিশেষ করে শয়তান সব সময় ব্যস্ত থাকে অশান্তি সৃষ্টির জন্য।
আনন্দ একটি মহা উপাদান শান্তি প্রকাশের। আর আমাদের দেশের মানুষ মহা আনন্দে তাদের নিত্যদিনের কাজ কর্ম সম্পাদন করে নিশ্চিন্ত মনে শান্তি উপভোগ করে যাচ্ছে দিন কি দিন। এইতো গতসপ্তাহের সারা দেশ গুরে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আগত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সম্মানিত অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই শান্তি এবং আনন্দের জলন্ত স্ফুলিঙ্গ দেখে আভিভুত হলাম। পাশিপাশি গতকালের সেই স্বতস্ফুস্ত আনন্দের জোয়ার দেখলাম এয়ারপোর্ট থেকে গণভবন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা, ভালবাসা এবং বিশাল অর্জনের জন্য গণ সংবর্ধনা দেয়ার গণজমায়েত দেখে। এই যে আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দিপনা আমাদের জীবনে প্রতিয়মান তা কিন্তু এমনিতেই আসে না। এর পিছনে রয়েছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার বিশাল ভুমিকা। যখন এইগুলি শক্ত ভিত্তির উপর দাড়াতে পারে আর তখনই মানুষের জীবনে শান্তি উপচে পড়ার মত কিছু ঘটে। তা খুবই আশার এবং এই আশা নিয়েই বাঙালী ঝাপিয়ে পড়ে করেছিলে দেশ স্বাধীন। সবচেয়ে বড় করা হলো আমাদের এই অর্জনের পিছনে যারা কাজ করছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। তাদের কাজকে মূল্যায়ন করার মত মানুষিকতা তৈরী হউক আমাদের জাতীয় এবং রাজনৈতিক জীবনে। তাহলে আরো উন্নত মম শীরে দাড়িয়ে গর্ভবোধ করে এগিয়ে যাবে দেশ ও দেশের সকল নাগরিক জীবন।
আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা যেখানেই যায় সেখানেই দেশের মাথা উচুর করার কাজ করে যাচ্ছে এটি কিন্তু সামনের শুভদিনের লক্ষণের বহি:প্রকাশ মাত্র। সেই ময়মনসিংহের মেয়ে জাতিসংঘে ১৭ তরুন নেতার একজন। গৌরব আর উন্নতি এবং সত্যের প্রকাশকে কখনো ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না এবং যাবেও না। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চতুর্থ শ্রেণীর স্কুল ছাত্রের চিঠির উত্তর এবং সমস্যার সমাধান কি জাতিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার দিশা দেখায় না। তিনি সবকিছুরই খবর রাখেন এবং দেখেন। তাঁর কাছে কেউ ছোট কেউ বড় নয়; দেশের সকল মানুষই তাঁর কাছে সমান এবং সবার জন্যই তিনি কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সেবকের ভুমিকায় রয়েছে। আমাদের কর্তব্য তাকে সেবা করার সুযোগ দেয়া এবং তাঁর সেবা গ্রহন করা।
আমাদের এই আনন্দ এবং শান্তির মাঝেও কিছু কিছু বেদনাদয়ক ঘটনা ঘটে যা আমাদেরকে ভাবায় এবং এর মধ্যথেকে শক্তি খুজে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এইতো সেদিন চলে গেলেন সৈয়দ হক সাহেব। যার জন্য আমরা বিষন্ন এবং মনোবেদনায় আক্রান্ত হয়েছি। তবে আগমন এবং প্রস্থান এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া আর এই প্রক্রিয়া থেকে কেউ রেহাই পেতে পারে না। আমি বলি তারা চলে গিয়ে নতুন অধ্যায়ের সুচনা তৈরী করে দিয়ে গেছেন আগামীর জন্য। আর তাদের জীবদ্দশার জীবন থেকে আগামী প্রজন্ম শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের বর্তমানের বিবেচ্য বিষয়। হান্নান শাহ চলে গেলেন অভিমান নিয়ে। কিন্তু রাজনৈতিক মাঠে চিৎকার, ফাঁক বুলি আওরানোর এবং মিথ্যাকে সত্যবলে প্রতিষ্ঠা করতে না পাড়ার যে বেদনা তা তিনি বুঝতে পেরেছেন বৈকি। তারপরও তো রাজনৈতিক মাঠ গরমের রাজনীতিতে তিনি পটু ছিলেন। যা হারিয়ে বিএনপি আপাত দৃষ্টিতে আনন্দিত। কারণ তাদের রাজনৈতিক দৈওলিয়াত্বের দাড়প্রান্তে এসে তারা এখন দিশাহারা গন্তর্বের পথিক। হান্নান শাহ কি ছিল তারা এখনও বুঝতে পারেনি বা চেষ্টাও করেনি। তাদের দলে নতুনদের সামনে কোনো আদর্শের দৃষ্টান্তও রাখেননি। কারণ মরতে মরতেই দল তাদের ভুলে গিয়ে নতুন আনন্দের বন্যায় ভাসছে। শোক, দু:খ, দীর্ঘদিনের স্মৃতিচারণ এবং ভালকাজের স্বীকৃতি সবই জেন আজ তাদের কাছে ম্লান আর এই ম্লান অবস্থানই তাদের তরী ডুবানোর জন্য দায়ী।
রাজনৈতিক দেওলিয়াত্বের আরো দৃষ্টান্ত যে একজন সর্বজন স্বীকৃত সম্মানী ব্যক্তি হক সাহেব যিনি কিনা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন আর তাঁর সম্মানে এবং মর্মবেদনায় আওয়ামী লীগ নেত্রী তার আনন্দের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন; দেশবাসী শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন কিন্তু বিএনপি এর বাইরে থেকে কোন সভ্যতার ইতিহাসা রচনা করলেন! তা কারোরই অজানা নেই। তারপরও বলব সঠিকপথে এগিয়ে গেলে আগামী প্রজন্ম হয়ত দলকে মনে রাখবে; না হয় ডুবন্ত অবস্থায় থেকে আর উত্তোলিত হওয়ার কোন পথই থাকবে না। আমাদের সহনশীলতা এবং সহবস্থান যেভাবে পুনসংযোগের মাধ্যমের সুদৃঢ় হচ্ছে তা খুবই ভাল এবং ভালদিকের জন্য দীর্ঘস্থায়ী।
বিভিন্ন বিষয়ের আলোকে আজ আমার গর্ববোধ করছি। পাশাপাশি একটি সুন্দর দৃষ্টান্তের সৃষ্টি হচ্ছে যে আমাদের মন্ত্রীরা নিজে দোষ না করেও নিজকাধে দোষ নেয়ার ইচ্ছা গোষণা করছে যা অতি মঙ্গলের কাছে পৌঁছারই লক্ষণ। এগিয়ে যাক এই ধারাবাহিকা। মন্ত্রী এবং সরকারী প্রশাসনের কর্ণধারদের বিনীতভাবে বলছি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অফিস চলমান রয়েছে বিশেষ করে সফটওয়ার বা আইটি ফার্মগুলো সেগুলোকে রক্ষা করার জন্য। সেই অফিসগুলোকে আবাসিক এলাকা থেকে বিতাড়িত না করে বরং সুযোগ দিয়ে বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক বাজারে টিকে থেকে বাংলাদেশকে আরো সামনে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিতে। সফটওয়ার বা আইটি ফার্মগুলোতো কোন যানটন বা গেঞ্জাম করার স্থান নয় বরং মেধা বিকাশের এক উর্বর স্থান। যেখানে দেশের সর্বো”্চ মেধাগুলি একজায়গায় বসে এর বিকাশ ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করে। মাঝে মাঝে দেখি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হুমকি ধমকি আসে অফিস সড়ানোর জন্য কিন্তু কোথায় যাবে এবং যেখানে দু এক জায়গা রয়েছে সেখানে যাওয়ার মাত অতিরিক্ত অর্থ যথেষ্ট মওজুত নেই কোম্পানীর হাতে। কারণ বিশাল খরচ এবং কোম্পানী চালানোর রসত জোগার করতে করতেই মালিক পক্ষের হা-পিত্যেস চলছে। আমি মনে করি সফটওয়ার বা আইটি ফার্মগুলোকে সুযোগ দিয়ে এগিয়ে নেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ট্রেড লাইসেন্স এখন আর নবায়ন হয় না এটা খুবই দু:খের বরং প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় এনে নবায়ন করা বা যেখানে অবস্থান সেই অবস্থানে ঠিকানা পরিবর্তন করে দেয়া সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব; তাই দয়া করে মাননীয় মেয়রদ্বয় মানবিক দৃষ্টি দিয়ে এর আশু সমাধান করে দিবেন।
শত আনন্দ, শান্তি ও বেদনার মধ্যেও আমাদের করণীয় রয়েছে। আমরা আনন্দের সাগরে বিলিন না হয়ে আনন্দকে স্থীতিশীল করে রাখার ব্যবস্থা আমাদেরকে স্বউদ্যোগে করতে হবে। শান্তিকে স্থীতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী করে উপভোগ করার ব্যবস্থা আমাদেরকে স্বউদ্যোগে করতে হবে। বেদনার সময় শান্তনা খুজতে হবে এবং একসঙ্গে বেদনাকে ভাগ করে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ঘরে বসে থেকে অন্যকেউ করেদিবে বা সরকার করে দিবে তা না ভেবে বরং নিজেকে প্রস্তুত রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। খেউ এসে খাইয়ে দিবে না বা করে দিবে না। বরং নিজেই করতে হবে এবং খেতে হবে। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। নিজের চেষ্টায় সম্মানের এবং ভাল জায়গায় জেতে হবে। তাহলেই আমাদের আজকের অর্জন টেকশই এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। এগিয়ে যাবে দেশ, এগিয়ে যাবো আমরা। এই হউক আমাদের প্রত্যয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.