একটি টাউান হলের বেঁচে থাকার আর্তনাদ

রংপুর প্রতিনিধি (লিটন ভাই) ॥ অনেক ইতিহাসের সাথে আপনার নামও লেখা হবে, কারণ এই মঞ্চে নূরুলদীনের সারাজীবনে নূর ভাই আপনি অভিনয় করেছেন। আপনার দল নাগরিক ঈর্ষা ও দেওয়ান গাজীর কিস্সা মঞ্চস্থ করেছে। আপনার একটি পরিকল্পনায় ঐতিহ্যবাহী টাউন হলটি বেঁচে থাকতে পারে আরো অনেকদিন।
নূর ভাই, আমি ভীষন অসুস্থ :—-
কেউ আমার অসুস্থতার খবর রাখে না।নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিয়ে কাটছে জীবন । জরাজীর্ণ অবস্থা আমার শরীরের, তবুও নিস্তার নেই। বয়স আমার একশ বিশ বছরের কাছাকাছি। ১৮৯৬ সাল থেকে দিনের পর দিন মানুষের বিনোদনের প্রয়োজনে আমাকে ব্যবহার করে হচ্ছে। কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন রায় জনগণের বিনোদনের জন্য আমাকে সৃষ্টি করে, চলে গেছেন স্বর্গে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ” শর্মিষ্ঠা ” নাটক দিয়ে শুরু হলো আমার নরক যন্ত্রণা। তখন অবশ্য আমার নাম ছিল “রংপুর নাট্য সমাজ গৃহ” । সব কষ্ট মেনে নিয়েছি আমার এই অঞ্চলের মানুষের চোখে মুখে আনন্দ দেখে। কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেনে রংপুর স্টেশনে নামলেন শরৎবাবু, মানে আমাদের শরৎচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা একজন।
সোজা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে আমার কাছে, তার লেখা “দত্তা ” নাটক দেখতে । রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া নিবাসী কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস সাহেবের আমন্ত্রণে ।  কত নাট্য ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতা নেত্রী, লেখক বুদ্ধিজীবী , সাংবাদিকের পদচারণা ছিলো আমার বুক জুড়ে। তুলসী লাহেরী , সৈয়দ শামসুল হক, হাসান ঈমাম, রামেন্দ্র মজুমদার —- বাংলাদেশের নাট্য জগতের শীর্ষ পর্যায়ের এমন কেউ নেই , যাদেরকে আমি স্থান দেইনি। আজ জীবনের শেষ প্রান্তে কেনো এতো কষ্ট নিয়ে বেচে থাকবো?  দেশ বিভাগের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা চলে গেলেন ওপার বাংলায় । শিল্পীর অভাব ঘটলো, আমার নাম পরিবর্তন করে রাখা হলো “মর্ডান হল”  শুরু হলো আর এক বিভীষিকাময় নরক যন্ত্রণা। সিনেমা দেখানো হতো । মাঝে মধ্যে চলতো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। সকল প্রকার আন্দোলন, রাজনৈতিক কর্মসূচি , শিক্ষামূলক কর্মকান্ড , ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, গণ জাগরণ মঞ্চ সহ সকল প্রকার কর্মসূচির সূতিকাগার আমার এই টাউন হল চত্বর।
একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প গড়ে উঠে আমার বুকে ।এমন কোনো পৃথিবীর নিকৃষ্ট কাজ নেই, যা ওরা করে নাই , যার নিরব সাক্ষী আমি নিজে। শুনেছি নূর ভাই মন্ত্রী হয়েছেন, আমাদের আসাদুজ্জামান নূর সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী । জীবনের অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার বুকে মাথা রাখতে ভুল করেননি। এখনো বছরে দুই একবার পা রাখেন আমার এই টাউন হল চত্বরে (স্বাধীনতা পরবর্তী নাম)।  আমি জানি, আপনার এখন অনেক ক্ষমতা। এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আমি যদি নূন্যতম ভূমিকা রেখে থাকি ,তাহলে আমার চিকিৎসার সব দ্বায়িত্ব গ্রহণ করুন সেই সঙ্গে মশিউর রহমান রাঙা এবং এরশাদ সাহেব সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বে আছেন। আমাদের ঘরের ছেলে এই দাবী নিয়ে, নিশ্চয়ই আমার বিষয়ে নূর ভাইয়ের কাছে জোরালো ভাবে উপস্থাপন করবেন।
আমি রংপুর টাউন হল,
আমি আরো শত বছর থাকতে চাই ,
রংপুরের বিনোদন প্রেমি মানুষের সাথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.