রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবতাবোধ জাগ্রত হউক

টিআইএন॥ মানুষ মানুষের জন্য এবং আর্ত মানবতা মানুষকে বাদ দিয়ে নয়। সবাই আমরা মানুষ এবং তারপরে বিভিন্ন, ধর্ম, গুত্র। মানুষের ধর্ম এক আর তা হল সত্য ও ন্যায় পরায়নতা। বিশ্ব বিবেশ ও মানবতা আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ একটি আর তা হল আমরা যে মানুষ এবং আমাদের সবৈব পরিচয় যে সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাকলুকাত তা প্রায় ভুলতে বসা। আমরা এখন নিজেদেরকে মানুষ হিসেবে পরিচয় না দিয়ে বেশী উৎসাহিত হয় গোত্র, বর্ণ এবং ধর্মের বেড়াজালে পরিচিত করতে। ধর্মের প্রয়োজনে মানুষ আসেনি এবং ধর্ম গোত্র এসেছে মানুষের প্রয়োজনে আর এই সবই মানুষের চিন্তা প্রসুত সৃষ্টির ফল। এই ফলের রসায়নেই আজ মানবতা, মনুষত্ব, বিবেক পরাজিত। আসুন জাগিয়ে তুলি আমাদের মানবিক বিবেচনা প্রসুত বিবেক এবং ন্যায়পরায়নতা ও সত্যের সম্মিলন। তাহলেই ফিরে পাব সোনালী অতীত, সহনশীলতা এবং সহবস্থানের মানদন্ড। এই পাশবর্তী দেশ মিয়ানমার কি চরম বিপর্যয়ের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের বিবেক এবং মানবিকতা। যেখানে পাষবিকতা ও অসত্যের জোয়ারে রক্ত¯œাত হচ্ছে সমগ্র ভুমি। জাগ্রত হউক ন্যায়-পরায়নতার মহান বানী ও এর মানদন্ড।
মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলেছেন, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে না দিলে তারা যাবে কোথায়? এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আরও মানবিক হতে হবে।” বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দেয়া ও মিয়ানমার সীমান্তে বাড়তি বিজিবি মোতায়েন প্রসঙ্গে শনিবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেশের মানবাধিকার কর্মীরা এ কথা বলেন। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলেও দাবি করেছেন তারা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, “আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন অনুযায়ী কোনো শরণার্থী প্রবেশে আমরা বাধা দিতে পারি না। তাদের বাধা দিলে তারা যাবে কোথায়? তবে শুধু একটি কারণে রোহিঙ্গা প্রবেশে বাধা দেয়া যেতে পারে, সেটা হচ্ছে নিরাপত্তা। তবুও বিষয়টি নিয়ে ভাববার আছে। একদিকে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশে ঢুকতে গিয়ে দেখে সীমান্ত বন্ধ। তাহলে তাদের অবস্থাটা কী হবে, ভাবা যায়? এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে আরও মানবিক হতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের কষ্ট হলেও তাদের গ্রহণ করা উচিত। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকেও বলা উচিত, অসহায় এ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান।”
মানবাধিকার কর্মী খুশী কবিরের মতে, রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “একাত্তরে যদি ভারত আমাদের আশ্রয় না দিতো, তাহলে শহিদের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে কোটির ওপরে যেতো। আমাদেরও উচিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া। সরকার এক্ষেত্রে জঙ্গিবাদের অজুহাত দিচ্ছে। তাহলে নারী, শিশুরা কী দোষ করেছে? এমন অজুহাত মোটেও ঠিক নয়। বাংলাদেশের ভেতরেও তো জঙ্গিবাদ আছে। তাদের ঠেকাতে হবে আগে।” তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গা প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা যেতে পারে। যাদেরকে সন্দেহ হয়, তাদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদের ঢুকতে বাধা না দেয়া উচিত। তাদের জন্য আলাদা ক্যাম্প করে সেখানে বেষ্টনীর মধ্যে রাখলে আমাদের দেশের তেমন কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে তাদেরকে মেরে ফেলার অধিকার তো কারও নেই।”
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খানের মতে, মানুষের জীবনের প্রশ্নে পাশে দাঁড়াবো না এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, “দেশ থেকে কেউ স্বেচ্ছায় বিতাড়িত হয় না। বাধ্য হয়েই তারা দেশ ছাড়ছে। কাছাকাছি দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তাদের আশ্রয় দেয়া উচিত। এটা মানবিক বিষয়।” বাংলাদেশের নানা সমস্যা আছে এমন প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ে আমাদের অনেক সমস্যা আছে। রোহিঙ্গারা ঢুকলে আমাদের এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই বলে তাদেরকে ঢুকতে বাধা দিয়ে মেরে ফেলার কোনো অধিকার আমাদের নেই।”
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক টিকিয়ে রেখে মানবাধিকার বিষয়ে দেশটির সঙ্গে কথা বলে সমাধানেরও পরামর্শ দেন এ মানবাধিকার কর্মী। তবে ছোট ও দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে শরণার্থীরা যেন অতিরিক্ত বোঝা না হয়ে যায়, সে বিষয়ে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে নজর রাখা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের মতে, থাইল্যান্ড, কানাডা, রাশিয়াসহ বড় বড় যেসব দেশ রোহিঙ্গাদের প্রবেশে বাধা দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, চাপ প্রয়োগ করে সেসব দেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা উচিত।
রোহিঙ্গারা মানুষ এবং আর এই মানুষের প্রয়োজনেই পৃথিবীর এই নব্য সভ্যতার বিকাশ। আমাদের কথা একটাই মানুষ মানুষের জন্য আর জীবন জীবনের জন্য। এই কথার যথার্থতা প্রমানের সময় এখনই। খারাপ ভাল যাচাই-বাছাই করার সময় এখন নয়। এখন সময় জীবন রক্ষা এবং মানবতার অস্তীত্ব টিকিয়ে রাখা। তাই সবাই মিলে মিয়ানমারের এই সমস্যা সমাধান করে একই বিশ্বে সকলকে নিশ্চিন্তে বসবাসের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এখনই সময় পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলার। এখনই সময় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর। সকল নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.