মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত নিয়ে আজও দাড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ‘কসবা ওয়াল’

ভজন শংকর আচার্য্য কসবা থেকে॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কসবা রেলওয়ে ষ্টেশনের নিরাপত্ত্বা দেয়াল ঐতিহাসিক কসবা ওয়াল নামে পরিচিত। চীনের গ্রেট ওয়ালের সমান না হলেও কসবা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত আছে, কসবা ওয়ালের অনেক স্মৃতি যা আজও রয়েছে অম্লান। কসবা ওয়ালের আয়তন প্রায় ৫০০ গজ লম্বা। তার পূর্ব পার্শ্বে ১৫ গজ দূরে ভারতীয় ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা। সীমান্তের ওপারে রয়েছে ঐতিহাাসিক কমলা রাণীর দিঘি, তার পূর্ব পাড়ে শ্রী শ্রী কালী মাতার মন্দির ও ভারতীয় পর্যটন কমপ্লেক্স। জানা যায় ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় কসবা ষ্টেশনকে ভারতীয় আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কসবা ওয়াল নির্মাণ করে এক রাতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আজও কসবা ওয়াল বয়ে বেড়াচ্ছে। জানা যায় ২১ অক্টোবর ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদকে (মাইজখার) হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী কসবা ওয়ালের উপর বাঁশে বেধে ঝুলিয়ে রাখে। তখন পাক হানাদার বাহিনী কসবা ওয়ালের পশ্চিম পাশ থেকে চেচিয়ে বলতে থাকে ‘মুজিব কা ছাওয়াল কেয়া করতা হে তুম ? হাতিয়ার বি ঢাল দাও’। ল্যা. সামছুল হকের  নেতৃত্বে এফ.এফ জমসিদ মিয়া (গাববাড়ি), মোঃ বেগর আলী (চাপিয়া), আবু তাহের (নেমতাবাদ), আনোয়ার হোসেন (ষোলঘর) সহ ৪০/৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে কসবা ওয়ালের পূর্ব পাশের দু’প্রান্তে  অবস্থান নেয়। পাক বাহিনী ষ্টেশন মাষ্টারের রুমের পূর্ব পাশের জানালার দিয়ে মর্টার সেল তাক করিয়ে রাখছিল। যাহাতে মুক্তিযোদ্ধারা কসবা ষ্টেশন এলাকা দখলে আসতে না পারে। আনুমানিক বেলা ১১:০০ ঘটিকার দিকে ভেরেন্ডাসেল ফাটিয়ে ওয়ালের দক্ষিণ পাশ ভেঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা দখলে নেয় কসবা ষ্টেশন সহ আস পাশের এলাকা। এই যুদ্ধে সে. ল্যা. আজিজ জীবিত এক পাঞ্জাবীকে পাকড়াও করেছিল বলে জানা যায়। কিন্তু পাশের এক পাঞ্জাবীর গুলির আঘাতে সে. ল্যা. আজিজ ও ধৃত পাঞ্জাবী মৃত্যুবরণ করেন। ঐ যুদ্ধে ৩ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং সে. ল্যা. আজিজ ও আবেদ দু’জন শাহাৎ বরণ করেন। কসবা ওয়ালটি নোম্যান’স ল্যান্ডে হওয়ায় পর্যটকদের জন্য বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে। কসবা ওয়ালের পূর্ব পাশে গেলেই দেখা যায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ের সারি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতি, মানুষকে। ঐতিহাসিক কমলা রাণীর দিঘিও আন্তর্জাতিক সীমানা হওয়াতে সীমানায় নরমাল কাটা তারের বেড়া রয়েছে যা দেয়ালের পূর্ব পাশে গেলেই দিঘির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ভারতীয় অনেক পর্যটক আসেন কসবা ওয়ালকে দেখার জন্য বিশেষ করে রবি ও সোমবারে কমলা রাণীর দিঘির পশ্চিম পাড়ে শত শত পর্যটক দাড়িয়ে কসবা ওয়াল ও কসবা ষ্টেশনকে উপভোগ করেন। কসবা ওয়ালের বর্তমান অবস্থা নাজুক। মেরামতের অভাবে অনেক জায়াগা ভেঙ্গে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাঙ্গা জায়গাটি আজও রয়েছে অক্ষত। কসবা ওয়াল তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে যদি মেরামত করা না হয়। হারিয়ে যাবে মুক্তিযোদ্ধের একটি গর্বিত স্মৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.