প্রিয় শহর ময়মনসিংহে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাহবুবুল হক শাকিল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি॥ প্রিয় শহর ময়মনসিংহের ভাটিকাশর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কবি ও লেখক মাহবুবুল হক শাকিল। বুধবার বিকালে কাচিঝুলি আঞ্জুমান ঈদগাহ্ মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাযার পর তার দাফন সম্পন্ন হয়। শাকিলের মরদেহ দুপুর আড়াইটায় তার বাঘমারা বাসায় পৌঁছায়। সেসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাবা-মাসহ স্বজনরা। তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে ভীড় করেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় মানুষ। বিকাল ৪ থেকে ৫টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল মাঠে তার মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ছাত্র সংগঠন।
জানাযার আগে বক্তৃতা করেন, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শাকিলের বাবা এডভোকেট জহিরুল হক। বাদ মাগরিব তার জানাযায় হাজার হাজার মানুষসহ অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, কাদের সিদ্দিকী এবং সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরআগে বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে মাহবুবুল হক শাকিলের নামাজে জানাযায় অংশ নেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ রাজনীতিবিদ, তার কাছের বন্ধু, সংস্কৃতিক ও গণমাধ্যম কর্মিরা।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে মাহবুবুল হক শাকিলকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার বয়স হয়েছিল ৪৮। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, মা-বাবা এবং এক ভাই ছাড়াও রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক অনুসারী এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ওইদিন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয় তার মরদেহ। বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। হৃদপিন্ড স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড়। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ভিসেরা সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে সিআইডির রাসায়নিক ল্যাবে।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাকিলের মৃত্যুর কারণ জানতে কয়েকদিন সময় লাগবে জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ। শাকিল এক সময় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। স্কুল জীবনেই ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। নব্বই’র ছাত্রগণঅভ্যুত্থান ও পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে উঠা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শাকিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা শাকিল ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরের বাঘমারায় জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তার বেড়ে উঠা। ময়মনসিংহের জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার আইনজীবী বাবা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক এবং মা স্কুলশিক্ষক নুরুন্নাহার খান। বাবা-মা দু’জনই ময়মনসিংহে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
শাকিলের স্ত্রী একজন আইনজীবী। তাদের একমাত্র মেয়ে আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নিজ দলের বাইরে অন্য দলের নেতা-কর্মীদের কাছেও তিনি সজ্জন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দেশের শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনেও প্রিয় এক নাম ছিল মাহবুবুল হক শাকিল। গত বছরের (২০১৫) একুশে বইমেলায় তার প্রথম কবিতার বই ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’ প্রকাশিত হয়। আর ২০১৬ বইমেলায় প্রকাশ হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের গাড়ি’। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা শাকিলের সর্বশেষ স্ট্যাটাসটিও একটি কবিতা। আগামী বইমেলার জন্য তার একাধিক বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরি হয়ে আছে। এমনকি কবিতার বইটির প্রকাশনা উৎসবের তারিখ ঠিক হয়ে আছে ৬ ফেব্রুয়ারি। তার আগে তার জন্মদিন ২০ ডিসেম্বর।

Leave a Reply

Your email address will not be published.