ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের উপর ভ্যাট আরোপ অবৈধ ঘোষণা

ইসরাত জাহান লাকী॥ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র উপর ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের যে সিদ্ধান্ত রয়েছে তা অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।  এ সংক্রান্ত এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল গ্রহণ (যথাযথ) করে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন। রায়ের ফলে জানুয়ারি মাস থেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভ্যাট দিতে হবে না বলে জানান আইনজীবী।
রিটকারী আইনজীবী শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের জানান, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র উপর সাড়ে ৭ শতংশ ভ্যাট আরোপ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দুই অভিভাবকের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র উপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আদেশ দেন। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফাইজুল ইসলাম ও সেলিম আজম ভ্যাট প্রদানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন। রিটে বিবাদী করা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব, শিক্ষা সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে।
রিট আবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ভ্যাট আরোপের কারণে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার সুযোগ সঙ্কুচিত হয়েছে। এছাড়া এটি বৈষম্যমূলকও। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ওপর সরকার ভ্যাট আরোপ করেছিল তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ফলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর ওপর ভ্যাট আরোপ ন্যায় সংগত নয়।
২০১২ সালে সরকার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করারোপ করে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের টিউশনের ওপর। এ বছর তা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিন্ধান্তের পর থেকে কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। এর আগে শিক্ষার্থীদের টানা বিক্ষোভের মুখে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে।
মোদ্দাকথা হলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শুধু যে ধনীক শ্রেণীর ছেলে মেয়েরাই পড়ছে তা কিন্তু নয়, বরং মধ্যবিত্তের বা নি¤œ মধ্যবিত্তের ছেলে মেয়েরাও পড়ছে। সকলেই চেষ্টা করছে উন্নত শিক্ষা এবং বহিবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে এমনকি ক্রস-কালচার বা ওয়াল্ড ভিউ’র সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে। এই যে জাতীর আকাঙ্খা তা কিন্তু বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই ভ্যাট আরোপের ফলে। কেউ হয়তো একটি ছেলে বা মেয়েকে পড়াচ্ছে বা ধার দেনা করে কোন রকম টিকে আছে বিশ্ব প্রতিযোগীতায়। কিন্ত সরকার যদি ভ্যাগ মওকুফ করে তাহলে মনে হয় পরিবারগুলো একটু স্বচ্ছন্দে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আর বৈষম্য দুর হবে; ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম এবং বিশ্ববিদ্যালয় (সরকারী এবং বেসরকারীর )মধ্যে। যারা এই ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিশেষ করে বাঙ্গালী তাদের বেশির ভাগই নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সিমায়। আর এই সকল লোকজন সবাই আওয়ামী পরিবারের। তাই আন্দোলন বা কোন যামেলায় না গিয়ে বরং সরকারের কাছে দাবি এই ভ্যাট ঝামেলার অবসান যেটা হয়েছে সেটাকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষণার মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তির এবং উদারতার ক্ষেত্র সুপ্রসস্থ করুক। হাইকোটের রায়ের প্রয়োজন নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই যথেষ্ট শিক্ষা ব্যবস্তার উন্নয়নের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.