কসবায় ঐতিহ্যবাহী প্রথম মিনারটি ভেংগে ফেলায় ॥ এলাকায় চরম অসন্তোষ ॥

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবা উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতি বিজরিত প্রথম শহীদ মিনারটি  ভেংগে ফেললো কসবা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল চেয়ারম্যান, মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথে ওই বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ ঐতিহ্যবাহী শহীদ মিনারটির ভঙ্গুর দৃশ্য দেখে ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজাখোঁজি করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগন তৎকালীন সংসদ সদস্য এডভোকেট সিরাজুল হকের (বর্তমান আইনমন্ত্রীর বাবা) নির্দেশে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ নিজেরা চাঁদা দিয়ে কসবার প্রথম শহীদ মিনার গড়ে তোলেন। তৎকালীন কসবা ক্লাবের বিস্তির্ন মাঠের পশ্চিম প্রান্তে শহীদ মিনারটি তৈরি করা হয়। তৎকালীন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাইয়ুম বলেন, সংসদ সদস্য মরহুম এডভোকেট সিরাজুল হক থেকে শুরু করে এ যাবত দেশের বহু গুণী ব্যক্তিগনসহ এলাকাবাসী এখানে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে সকল শহীদানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এই শহীদ মিনারটিই কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আবদুল কাইয়ুম বলেন; শহীদ মিনার ভাঙ্গার নায়ক প্রধান শিক্ষকসহ দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
তৎকালীন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এম.পি অধ্যাপিকা মমতাজ বেগমের ছোট ভাই এডভোকেট আজিজুল ইসলাম বলেন; এই শহীদ মিনারে আমার ব্যক্তিগত অর্থও রয়েছে। আমরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে এই শহীদ মিনার নির্মান করি। শহীদ মিনারের নিচে বহু শহীদ মুক্তিযোদ্ধার হাড়-মাংস রয়েছে। তিনি এ বিষয়টিকে বর্তমান আওয়ামী লীগের দুরবস্থা বলে উল্লেখ করেন।
কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি মো.সোলেমান খান বলেন: কসবা প্রথম শহীদ মিনারটি দেশ বিদেশের ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। এটাকে ধ্বংশ করে এলাকার মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের পাঁজরে আঘাত করা হয়েছে। তিনি প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনকে মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিরোধী মানুষ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন হেলাল উদ্দিনের মতো লোক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ভাবতে লজ্জা হয়। প্রেসক্লাব সভাপতি এ ঘৃন্য কাজের তীব্র নিন্দা জানান। কসবা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান লীগের আহ্বায়ক তারেক মাহমুদ বলেন; এ ঘটনাটি আমাদের অস্তিত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। আমরা মাননীয় আইনমন্ত্রীর দিক নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব ফিরোজ বলেন; কসবা পুলিশ স্টেশনের পনের ফুট দুরত্বে কসবা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। অথচ পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় শহীদ মিনার ভেংগে স্কুল কর্তৃপক্ষ যে দৃষ্টতা দেখিয়েছেন তা কোন ক্রমেই মেনে নেওয়া যায়না। এ ঘটনা জেনে লন্ডন থেকে বিশিষ্ট কুটনৈতিক রিপোর্টার আবু হাসান বলেন; ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভেংগে ফেলেছিল। এখন স্বাধীন দেশে কসবার মতো এলাকায় শহীদ মিনার ভেংগে স্কুল কর্তৃপক্ষ যে কাজটি করেছেন তা পাকিস্তানীদের হার মানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন; আমি ভঙ্গুর শহীদ মিনারটি দেখেছি এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলেছি শহীদ মিনারটি পুনরায় মেরামত করে পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে। শহীদ মিনারের যে অংশ ভেংগে ফেলে শ্রেনি কক্ষ ও টয়লেট নির্মানের কাজ করা হচ্ছে তা ছেড়ে দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। এ ঘটনায় পুরো কসবার সচেতন মানুষ ফুঁসে উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.