ভালোবাসার সম্পর্ক

চঞ্চল মেহমুদ কাশেম॥ ক্ষুধার্ত মুহূর্তে লাঞ্চ করার জন্য হোটেলে ঢুকেছিলাম। এই হোটেলে যাতায়াত করতে করতে হোটেলের ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার, ম্যাসিয়ার, বয়-বেয়ারা, সকলের সঙ্গেই মোটামুটি একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। খাবারের অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সাঙ্গে ম্যাসিয়ার আমাকে খাবার এনে দিল। রুই মাছের বড় একটি টুকরো প্লেটে দিয়েছ। আমিও আয়েশের সঙ্গে ভাত মেখে, কেবল এক মুঠ মুখে পুরেছি, অমনি একটা বাসী গন্ধ পেলাম। ম্যাসিয়ারকে প্রশ্ন করলাম, কীরে এ তরকারি কি গতকালের? জবাবে ম্যাসিয়ার বলল, জ্বি স্যার।
তাহলে এই বাসী তরকারি আমাকে দিলি কেন?
সে বলল, কেন স্যার আপনি কি হোটেলে নতুন খাচ্ছেন? এতো পুরান খবর!
খাওয়া আর হলো না। অগত্যা মূল্য পরিশোধ করে খাবার ফেলে দিতে হলো।
অন্যেরা খাচ্ছে, দিব্বি খাচ্ছে। টের পাচ্ছে না বলেই হয়তো খাচ্ছে কিংবা তারা অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে।
এভাবেই চালিয়ে দেয়া হয় বাসী পচা যা কিছু। এখানে কাস্টমারদের সঙ্গে ওদের কেনা-বেচার সম্পর্ক। আন্তরিকতা কিংবা ভালোবাসার সম্পর্ক নয়। তাই নির্দিধায়, নির্বিঘেœ কাস্টমারদের মুখে এসব তুলে দিতে পারছে। দিতে পারছে নোংরা, আজর্বনা মিশ্রিত অস্বাস্থ্যকর খাবার। কেবল বাসী পচাই নয়, ৫০/৬০ জন কাস্টমারের জন্য রান্না, খোলা রাখা এই তরকারির পাত্রে যদি বড়সড়ো একটা ইঁদুরও পড়ে মরে থাকে, তা-ও ইঁদুরটি ফেলে দিয়ে, ওই তরকারি তারা পরিবেশন করবে। কারণ এগুলো ফেলে দিলে মালিকের লাভ কম হবে, হোটেল বয়দের চাকরি যাবে। অথচ এই একই খাবার তারা তাদের প্রিয়জনদের, আপনজনদের কিছুতেই খেতে দেবে না।
আমার ভালোবাসার কেউ কি জেনেশুনে এসব আমাকে খাওয়াতে পারতো? আমার মা, বোন, বান্ধবী, স্ত্রী, প্রেমিকা অথবা ভালোবাসার অন্য কেউ? কিছুতেই না, কক্ষণো না। ভালোবাসার মানুষের প্রতিটি স্পর্শের সঙ্গে মিশে থাকে আন্তরিকতা, শুভকামনা, কল্যাণকর চিন্তা। সংসারে একজন নারী যখন রান্না করেন, তার ভালোবাসা মিশ্রিত থাকে খাবারের সঙ্গে। পরিবেশনে থাকে পবিত্রতা। সন্তানকে স্কুলের জন্য প্রস্তুত করা, স্বামীর জন্য নাশতা তৈরি, কাপড় কাচা, রাতের বেলা সন্তর্পণে ঘুমন্ত স্বামী অথবা সন্তানের গায়ে চাদরটি টেনে দেয়া, এগুলোও একজন নারীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। যার কোনো কেনা-বেচা বা বিনিময় হয় না। টাকা হলেই আপনি এসবের গ্যারান্টি পাবেন না।
একজন পুরুষও যখন ঘরে ফেরার পথে মা, ভাই-বোন, স্ত্রী, সন্তান অথবা অন্যসকলের জন্য কিছু না কিছু হাতে করে নিয়ে আসেন তখন তার আন্তরিকতার প্রকাশ পায়। ছুটির দিনে ঘরের কাজে তাদের সাহায্য করা, সন্তানদের সঙ্গে খেলা করা, হাসি তামাশা, তাদের কথাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এসবও একজন পুরুষর ক্ষেত্রে ভক্তি-ভালোবাসারই খ-চিত্র। কেবল কাড়ি কাড়ি টাকা কামাই করলেই ভালোবাসার সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভূমিকা থাকা চাই। প্রেম ও হাসি ছাড়া আমাদের জীবনে প্রকৃত কোনো আনন্দ নেই। যদি বাঁচার আনন্দ নিয়ে বাঁচতে হয়, তবে প্রেম ও হাসির মধ্যদিয়ে বাঁচতে হবে।
টাকার বিনিময়ে, বিশ্বস্ততার দাবি নিয়ে চাকরবাকর রেখেছেন। তারা আপনার একান্ত বাধ্যগত। হুকুমের সঙ্গে সঙ্গে তারা নির্বিবাদে দায়িত্ব পালন করে যায়। কিন্তু বিকালে যে দুধের হাড়িতে বিড়াল মুখ দিয়েছিল আর সেই দুধ আপনাকে অথবা আপনার আদরের সন্তানকে খেতে দেয়া হয়েছে, তার খবর আপনি রাখবেন কি করে? এখানেতো তাদের সঙ্গে আপনার আন্তরিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। কেবল কাজের বিনিময়ে খাদ্য অথবা টাকার বিনিময়ে সে পুতুলের মতো রুল প্লে করে যায়। বিড়াল দুধ খেয়েছে একথা জানতে পারলে গৃহকর্তীর বকুনি খাওয়া অথবা রাগের মাথায় চাকরি যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। আছে ভয়, আছে আন্তরিকতার অভাব। ধরা পড়ার ভয়ে বিড়ালে খাওয়া দুধই আপনাকে অথবা আপনার আদরের সন্তানকে খাওয়ানো হয়েছে। এভাবে শুধু দুধ নয়, সকলের অজান্তে কত অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে যাচ্ছেন তাতো টের পাবার কথা নয়। কিন্তু আপনার ভালোবাসার মানুষটি হাজারো ঝগড়া, মনমালিন্য অথবা সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ভয় থাকলেও এসব জিনিস কস্মিনকালেও আপনাকে খেতে দেবেন না। এবং এটাই স্বাভাবিক, এটাই ভালোবাসার দাবি। ভালোবাসা পরস্পরের প্রতি নির্ভরতা এনে দেয়, এনে দেয় বিশ্বাস। যেখানে ভালোবাসা থাকে না, সেখানে আস্থাও থাকে না।
গৃহকর্তীও কম কিসে! টাটকা খাবারটি চাকরবাকরদের সহজে দিতে চান না। ঘরের সবাই খাওয়া-দাওয়ার পর উচ্ছিষ্ট বা অতিরিক্তটাই তাদের ভাগ্যে জোটে। দেখা গেছে, পচে যাওয়ার উপক্রম ফলগুলো নিজেদের পেট খারাপ হওয়ার ভয়ে, ফেলে না দিয়ে কাজের বুয়াকে দেয়া হলো। ক্ষুধার তাড়নায়, ভুখা পেটে সে তা-ই খেতে বাধ্য হলো। কি সাংঘাতিক মানসিকতা! অথচ এরাও মানুষ। এর কারণ হলো ভালোবাসার অভাব। যেখানে ভাব নেই সেখানেইতো অভাব, অসঙ্গতি। এভাবেই অধীনস্থদের আন্তরিক শ্রদ্ধা-ভক্তি থেকে বঞ্চিত হয় মালিক পক্ষ। অধীনস্থরাও তো ¯েœহ-ভালোবাসার কাঙাল।
অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিকে দেখেছি নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবহেলা করতে। স্ত্রীর মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে, নিজের-পৌরষত্ব ফলাতেও দেখেছি। টাকার অহংকার দেখিয়ে বলেছেন, টাকা হলে কত নারী পাওয়া যায়! হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক। আমাদের ক্ষয়িষ্ণু সমাজে পণ্য হিসেবে নারী অতি সহজেই পাওয়া সম্ভব। টাকার বিনিময়ে আপনি তার শরীরকে পাবেন হাতের মুঠোয়। কিন্তু ভালোবাসা বা হৃদয় পাওয়া যাবে কি? না, তা আদৌ সম্ভব নয়। টাকার বিনিময়ে যে নারীকে আপনার ভোগ দখলে নিতে চান, তাতো ক্ষণিকের জন্য শরীরি সম্পর্ক। সেখানে নেই হৃদয়বৃত্তি, নেই জীবনের নিরাপত্তা। যে নারীকে আপনি টাকার বিনিময়ে পাচ্ছেন, তার দেহে কতশত লম্পটের বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া বহন করে চলেছে, তার খবর কি আপনি রাখেন? তার সঙ্গে ক্ষণিকের শরীরি সম্পর্ক স্থাপনে, গোপনে নিয়ে এলেন দুষ্টক্ষত, মরণফাঁদ, ধ্বংসের ভয়াবহতা। যা আপনার পরবর্তী প্রজন্মকও পঙ্গু করে দিতে পারে।
আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী অথবা প্রেমিকার সঙ্গে কেবল দৈহিক সম্পর্কই নয়, সম্পর্ক রয়েছে জীবনের, যৌবনের, হৃদয়ের, স্বপ্নের, বিশ্বাসের, সুন্দরতম ভবিষ্যতের। ভালোবাসার কারণে পরস্পরের খবরা-খবর জানা যায়। সেখানে একে অপরের দেহের যতœ নেয়। কেনো গোপনীয়তা থাকে না। সমস্যাবলী নিয়ে পরস্পর খোলামেলা আলোচনা করা যায় নিঃসংকোচে। থাকে না ছল চাতুরী অথবা ভনিতা। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে কেবল দেহের কামনা-বাসনা বা যৌনতাই থাকে না, থাকে রোমাঞ্চ, থাকে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের ভাব বিনিময়। থাকে পরস্পরের প্রতি দৈহিক-মানসিক প্রশান্তির পরিপূর্ণতা। ভালোবাসা এমনই বিষয় যা শুধু মস্তিষ্কে নয়, বুকের প্রতিটি রক্ত কণিকার মধ্যে তা উপলব্ধি করতে হয়।
ভালোবাসার মধ্যে কেবল অঙ্গের সঙ্গ লাভই সবটা নয়। একটা পশুওতো কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে আরেকটা পশুর সঙ্গ কামনা করে। তার সঙ্গে আপনার পার্থক্য কোথায়? প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ কেবল ওই বিশেষ মুহূতর্টির জন্যই লালায়িত নয়। তার প্রয়োজন সামগ্রিকতা। সে চায় জীবনের ব্যঞ্জনা। আর এ জন্যই রুচিশীল হৃদয়ের অপেক্ষা দিনের পর দিন, মাস, বছর, যুগের পর যুগ। কতকাল, কত সাধনা। প্রতীক্ষা ভালোবাসার মানুষের জন্য। ভালোবাসা ছাড়াতো এসব সম্ভব নয়। আপনি একজন নারী অথবা পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেই ভাবছেন সব পেয়ে গেছেন? সে আপনার অধীন হয়ে গেল? তা-ও সম্ভব নয়। বিয়ে একটি সামাজিক এবং ধর্মীয় স্বীকৃতি মাত্র। ভালোবাসার সেতুবন্ধন গড়ে না উঠলে, এক ছাদের নিচে বাস করেও আপন হওয়া যায় না।
টাকা দিয়ে ফুলশয্যা রচনা করা যায়। গড়ে তোলা যায় সুরম্য অট্টালিকা, বিনোদনের জন্য রঙমহল। কিন্তু ভালোবাসা! সেতো ভিন্নজিনিস। তা কেবল টাকা কিংবা বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। অনেকে টাকাকে দ্বিতীয় ঈশ্বর ভেবে কথায় কথায় বলে ফেলেন, ‘অভাব যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায়, ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।’ না, তা ঠিক নয়। কবির এটা বিশেষ কোনো মুহূর্তের ধারণা হতে পারে। যদি তা-ই হতো, তবে লক্ষকোটি গরিবের সংসার টিকে আছে কীভাবে? প্রেমহীন সংসার কখনও সুখী হতে পারে না। আপনি হয়তো জানেন না প্রেমহীন সংসারে হৃদয় যন্ত্রণা কতটা ভয়াবহ। আপনার অর্ন্তষ্টিতে একবার তাকিয়ে দেখুন, প্রেমহীন জীবনে কতনা করুণ কান্না! প্রকাশহীনতার অভাবে কত মানুষের দীর্ঘশ্বাস বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। সমাজ-সংসারের অন্তরালে তাদের চাপাকান্না ঘুরপাঁক খাচ্ছে নিজেরই মাঝে। কত শিক্ষিত, মার্জিত নর-নারী দিনের পর দিন নীরবে সয়ে যাচ্ছে প্রেমহীনতার গোপন যন্ত্রণা। সে খবর আমরা কতটুকুইবা  রাখি! পাশ্চাত্য দেশের মতো আমাদের সমাজে ডিভোর্স যদি নিন্দনীয় না হতো, তবে দেখা যেতো ডিভোর্স কোর্টগুলোতে হাজারও দম্পতির কতনা ভিড়!
প্রশংসা এবং স্বীকৃতি একজন মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু ভালোবাসার অভাবে আমরা পরস্পর গুণের প্রশংসা করতে খুবই কার্পণ্য করি। একজন চাই না অন্যজনের পরিশ্রমের স্বীকৃতি দিতে। বরং অপরের শ্রম ও নিষ্ঠাকে তুচ্ছ করি। প্রশংসার পরিবর্তে সামান্য দোষ ও ভুলগুলো খুঁজে বেড়াই। সহমানবটির সঙ্গে সহমর্মী না হয়ে, বাড়িয়ে তুলি তিক্ততা। ফলে খিটমিট লেগেই থাকে। এতে মনের দিক থেকে ধীরে ধীরে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। সহমানুষটি খুঁজতে থাকে আত্মতৃপ্তির ভিন্নপথ, অন্যপথ। মানুষ তার কাজ একাগ্রতার জন্য প্রশংসা চায় এবং চাওয়াটা তার অমূলক নয়।
একজন পুরুষ মানুষের যেমন কর্মস্থলে প্রমোশন, বোনাস, বেতনবৃদ্ধি ইত্যাদি কাম্য এবং তা পেলে সে কাজের স্বীকৃতি পায়, কর্মজীবনে আরও উদ্যমতা বেড়ে যায় তার। তেমনি একজন গৃহিনীর কর্ম হয় ঘরমুখো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঘর গুছানো, সন্তান লালন-পালন, স্বামীর পরিচর্যা, হাতের কাজ, শখের কিছু কেনাকাটা ইত্যাদি। কিন্তু সেতো পুরুষের মতো প্রমোশন, বেতনবৃদ্ধি, বোনাস, ব্যাংকের চেক ইত্যাদি আশা করতে পারেন না। তাই স্বামী বা গৃহকর্তার আত্মীয়-স্বজনের সামান্য প্রশংসা, প্রীতিপূর্ণ আচরণ তার সারাদিনের ক্লান্তি অনেকটা মিটিয়ে দিতে পারে। বাড়িয়ে দিতে পারে জীবনের গতিময়তা। আর এই সামান্য স্বীকৃতির অভাবে একজন কর্মঠ রমণীর জীবনেও নেমে আসতে পারে ক্লান্তি, মানসিক অতৃপ্তি, হতাশা।
মাঝে মাঝে দুজন মিলে কোথাও বেড়াতে যাওয়া, শিক্ষিত হলে সভা-সমিতিতে যাওয়া, ঘরে বসে একসঙ্গে টিভিতে নাটক বা সিনেমা দেখা, সে বিষয়ে আলোচনা করা, প্রিয় অথবা পরিচিত লেখকের কোনো লেখা বা সাহিত্য বিষয়ে শেয়ার করা, প্রেমিক বা প্রেমিকাকে উদ্বুদ্ধ করা, একটু আধটু মজা করা, এভাবেও অন্যের জীবনে ক্লান্তি দূর করা সম্ভব। হাসি-তামাশার মাধ্যমে একে অপরের উপভোগ্য হওয়া কম রোমান্টিকতা নয়। শৌখিন অথচ সাধ্যের মধ্যে কিছু একটা গিফ্টও করা যায় ভালোবাসার মানুষটিকে। দিনের শেষে একসঙ্গে প্রার্থনা, বাইবেল পাঠও ভালোবাসার সহভাগিতা দেখানো।
মানুষতো আর যন্ত্র নয়। একঘেয়েমী জীবন তার ভালো লাগবে কেন? একজন পুরুষ কেবল টাকার পেছনে ছুটবে আর স্ত্রী কেবল ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত সংসার, সন্তান, আত্মীয়-পরিজন সামাল দেবে, এটাই কি জীবন? না, হাজারও অভাব-অনটনের মাঝেও রোমান্টিকতার দরকার হয়। প্রয়োজন হয় বৈচিত্র্যতার। নইলে জীবন বড় দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। এভাবে একঘেয়েমী  জীবন চলতে চলতে পুরুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে যায় যে, টাকাই সব। টাকার বাইরে সে আত্মীয়-পরিজন কিছুই চিনতে চায় না। মায়া-মমতা, ¯েœøহ-সহানুভূতি উঠে যায় তার জীবন থেকে। টাকা হলে সে সব পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে টাকার জন্য সে তার প্রিয়জনকেও ত্যাগ করতে দ্বিধাবোধ করে না। সাম্প্রতিক কালে পরকীয়া প্রেম, স্ত্রী বা প্রেমিকা হত্যার ঘটনাগুলো সেই সাক্ষ্যই বহন করে। অপরদিকে একজন স্ত্রীর ধারণা জšে§ যায় যে, বিয়ের মাধ্যমে স্থায়ী দাসীবৃত্তি, দীর্ঘমেয়াদী যৌনতা বা সন্তান উৎপাদনই জীবনের সবকিছু। কিন্তু সমস্যা হয় তাদের ক্ষেত্রে, যারা এসমস্ত মানসিকতার উর্ধ্বে থেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে ভালোবাসার স্বাদ নিতে চায়, শত বছরের দাসত্ব না করে আনন্দময় জীবন নিয়ে বাঁচতে চায় ক্ষণকাল। কারণ শুধু বেঁচে থাকাটাই জীবন নয়, এ জীবন অর্থবহ হতে হবে।
কাক্সিক্ষত ভালোবাসার অভাবে অনেকেই খিটখিটে মেজাজি হয়ে পড়ে। ক্ষুধা কমে যায়, ক্লান্তি এবং শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়, আত্মিক ক্ষমতা লুপ্ত হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, কঠিন অসুখে আক্রমণ করে। ভালোবাসার স্বীকৃতি ছাড়া বাঁচার ইচ্ছে থাকে না, নেমে আসে জীবনের স্থবিরতা । এক্ষেত্রে আত্মকেন্দ্রিকতা ভুলে, সকল রুক্ষতা পরিহার করে, প্রিয় মানুষটির মাঝে প্রতিরক্ষার মনোভাব গড়ে তোলা একান্ত বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় অবিশ্বাস, অশান্তি আর বিড়ম্বনাকেই বাড়িয়ে তোলে।
কীটস বলেছেন, “যে ভালোবাসা পেল না, যে কাউকে ভালোবাসতে পারল না, সংসারে তার মতো হতভাগা কেউ নেই।” সংসার টিকে থাকার জন্য ভালোবাসার একান্ত প্রয়োজন, প্রয়োজন বিশ্বাসের। আবেগ, অনুভূতি, রোমাঞ্চ, আকর্ষণ, শেয়ারিং, দায়বদ্ধতা, রুচির সমন্বয় এসব হচ্ছে ভালোবাসার উপকরণ। কাঠখোট্টা অতি বাস্তববাদী অন্তরে ভালোবাসা ধরে রাখা যায় না। টাকার পেছনে ছুটে চলাই জীবনের সবকিছু নয়। জানতে হবে প্রিয়জনের পছন্দ-অপছন্দ, স্বপ্ন-অভিলাষ। তবেই জীবন হবে সার্থক, সংসার হবে সুখের। কবি বলেছেন-   “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে, উপযুক্ত পতি যদি থাকে তার সনে”॥

Leave a Reply

Your email address will not be published.