মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক ও জাতির গর্বিত সন্তানদের একজন মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল আজিজ

টিআইএন॥ গাংনীর তেরাইলে আব্দুল আজিজ জন্মেছিলেন ইংরেজি ১৯১৪ সনে। মৃতুবরণ করেছেন ২০০৭ সনের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে। ৯৩ বছরের এক সুদীর্ঘ জীবনে একজন মানুষ ‘জীবনকে দখল করে জীবন কিভাবে বিলিয়ে দিতে হয়’ তা তিনি তার কর্মযঞ্জ দিয়ে দেখিয়ে গেছেন। জোতদার পরিবারের ধনীর দুলাল আব্দুল আজিজ গ্রামীণ জীবনের সাদামাটা সাদা মনের মানুষ ছিলেন। জন্মগতভাবেই ছিলেন মানবপ্রেমী ও স্বাধীনচেতা। ভাষা আন্দোলনে পরবর্তী সময়ে ১৯৫৩ সনে প্রথমবার এবং ১৯৬০ সনে দ্বিতীয়বার ইউনিয়ন কাউন্সি ল মেম্বার নির্বাচিত হয়েচিলেন। স্বশিক্ষিত আব্দুল আজিজ ছিলেন দূর্দান্ত সংগঠক। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ’৬৮-’৬৯ সনে গণসংগ্রামের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি আওয়ামী লীগকে গ্রাম পর্যায়ে, ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েচিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম কমিটি গঠনে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে তারমত পরিশ্রমী কর্মী আর ে দখা যায় নি। মার্চ মাসে কুষ্টিয়াতে পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি চিলেন একজন সংগঠক যোদ্ধা। গাংনী মেহেরপুর এলাকার বাঙ্গালী আনছার, মোজাহিদ, ছাত্র- যুবদের সংগঠিত করে কুষ্টিয়া প্রেরণ করেন। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খাদ্য সরবরাহ করেন। ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন দেশ ত্যাগ করছে বর্ডার অঞ্চলে তাদের পূর্ণ সহযোগীতা দিয়ে দেশের মাটিতে ঝুঁকি নিয়ে থেকে গিয়েছিলেন। দেশের মাটিতে থেকে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য প্রত্যয় ঘোষণা করেন। করিমপুর বর্ডার কাছে হওয়ায় তিনি দুদিকেই সহযোগিতা দিতে পেরেছিলেন। দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করে পাঠানো আবার মুক্তিযোদ্ধারা দেশের ভেতরে এলে তাদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া, জীবন বাজী রেখে নয় মাস ধরে সেই কাজ করেছিলেন। মতিন রাজাকারের তাকে ধরা পড়তে হয়েছিলো। জীবনের ঝুকি নিয়ে সেখান থেকে ’৭১ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বেরিয়ে ভারতে চলে যান। বিজয়ের পর দেশ গড়ার সংগ্রামে আবার নিজেকে নিয়োজিত করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭৭-১৯৮০ এবং ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জনপ্রিয় এই মানুষটি জোড় পুকুরিয়া হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, তেরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভরাট হাইস্কুল, ভরাট মাদ্রাসা, জেটিএস হাইস্কুলের সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৪৫ বছরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মেহেরপুর জেলার পক্ষ থেকে জাতির এই গর্বিত বীর সন্তানকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করছে। সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.