পলিটিশিয়ান অব দ্য ইয়ার শেখ হাসিনা

জুলকার নাইন॥ কয়েক বছর ধরে দেশ ও দেশের বাইরে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট রাজনীতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। ২০১৬ সালেও ছিল সেই ধারাবাহিকতা। তবে আগে বিভিন্ন বছর নানান রাজনৈতিক উত্তাপ থাকলেও এ বছর সেগুলোর লেশমাত্র ছিল না। নিজের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে দেশকে শুধুই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। বছরের মাঝামাঝি জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ হলি আর্টিজানে ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলেও শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্সের কারণে তা সফল হয়নি। বরং প্রায় সমূল উৎপাটিত হয়েছে নব্য জেএমবি নামের অপশক্তি। এ নিয়ে বিদেশিদের কূটনৈতিক দৌড়-ঝাঁপও সামলেছেন বলিষ্ঠ হাতে। ফলে বাংলাদেশে আইএসের সম্পৃক্ততার তিলক আঁকতে পারেনি বিশ্বের পরাক্রমশালী কোনো রাষ্ট্রই। দুই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হলেও কোনো টুঁ শব্দ হয়নি বাংলাদেশে। এসব কারণেই ২০১৬-তে পলিটিশিয়ান অব দ্য ইয়ার শেখ হাসিনা। ঘটনাপ্রবাহ অনুসারে, ২০১৬ সালের শুরু থেকেই বিদেশিদের নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করে। স্পষ্ট বিভক্তি দেখা যায় কূটনৈতিক অঙ্গনে। তবে এই বিভক্তিতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সবই ছিল বিপক্ষ শিবিরে। কিন্তু ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বন্ধুত্ব কাজে এসেছে বাংলাদেশের। রেখেছে পরিস্থিতি উত্তরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক তৎপরতায় পরে একে একে ঢাকা সফর করেছেন হেভিওয়েট বিদেশি রাষ্ট্র-নেতারা। ঐতিহাসিক সফরে এসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ সফর এসে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। জানা যায়, শুধু জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক বিষয়াদি নয়, সরাসরি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায়ও নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। ১ জুলাই গুলশানের রেস্তোরায় হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান পুরোটা নিজে তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর হলি আর্টিজানের ঘটনার তদন্ত ও দেশ থেকে জঙ্গিবাদীদের উৎপাটনে বিশেষ টাস্কফোর্সও তার সার্বক্ষণিক নির্দেশনাতেই কাজ করেছে। ফলে মাত্র দুই মাসের মাথায় দেশের ঘাড়ে চেপে বসা জঙ্গিবাদের ভূত দূর করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। তাই তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের মানুষ একাট্টা। এই ভয়ঙ্কর ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। দেশীয় জঙ্গিদের ওই হামলার পর জনগণকে সচেতন করতে সরকারের গৃহীত কর্মসূচি এবং তাতে সাড়া পেয়ে আমি আশাবাদী, বাংলাদেশের মাটি থেকে সন্ত্রাসীরা সমূলে উৎখাত হবে। তবে আমি সন্ত্রাসী এবং উগ্রবাদীদের অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রের জোগান বন্ধ এবং তাদের প্রতি নৈতিক এবং বৈশ্বিক সমর্থন না দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছি। ’ আর গত ২৮ ডিসেম্বর ইউনেসকো মহাপরিচালক পদপ্রার্থী ড. হামাদ বিন আবদুল আজিজ ঢাকায় এসে বলেছেন, ‘অন্যদের উচিত তাকে (শেখ হাসিনা) অনুসরণ করা’। অন্যদিকে ২০১৬ সালজুড়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছিল নির্বাচনী আমেজ। একের পর এক স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। একে একে হয়েছে পৌরসভা, ইউপি ও জেলা পরিষদের নির্বাচন। ইউপিতে নৌকা-ধানের শীষের লড়াই দেখেছে দেশ। আগের নির্বাচনগুলোতে যথেষ্ট প্রাণহানির পর যে কোনো মূল্যে সহিংসতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। এর প্রতিফলন দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। অবশ্য নারায়ণগঞ্জে প্রার্থী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রতিফলন দেখেছে জাতি। বিচক্ষণতা দেখা গেছে অক্টোবরে দলীয় কাউন্সিলে। দলীয় কর্মকান্ডে গতি এসেছে নতুন সাধারণ সম্পাদক ও তরুণ নেতৃত্বে। পাশাপাশি নতুন ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় জমে উঠেছে রাষ্ট্রপতির সংলাপ। টানা প্রায় আট বছর সরকারপ্রধানের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কাজও সরাসরি মনিটরিং করছেন। পদ্মা সেতু, রূপপুর, মেট্রোরেল, রামপালের কাজ এগিয়ে চলছে তার তত্ত্বাবধানেই। আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়ে দেশকে করেছেন সম্মানিত। ২০১৬ সালে শেখ হাসিনা পেয়েছেন ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’। ‘নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’। আর ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম। পুরস্কারগুলো অবশ্য বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দফতরে পুরস্কার গ্রহণের পর শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই পুরস্কার আমি বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ করছি, যারা আমার পরিবর্তনের দর্শনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.