আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ বারাক ওবামার নিয়োগ করা সব মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগেই তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কূটনীতিকের বরাত দিয়ে ফক্স নিউজ এ খবর দিয়েছে। এসব কূটনীতিক জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মার্কিন দূতাবাসে এক আকস্মিক তারবার্তা পাঠায়। ওই বার্তায় কোনো ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়া সব রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এমন সময় এ নির্দেশ দেয়া হলো, যখন তার আগের প্রেসিডেন্টরা সাধারণত রাষ্ট্রদূতদের দেশে ফিরে আসার জন্য অন্তত তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত সময় দিতেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিয়োগ করা রাষ্ট্রদূতদের হঠাৎ করে দেশে ফেরত আনার ফলে ব্রিটেন, জার্মানি ও কানাডার মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে আমেরিকার পক্ষ থেকে যথাযথ কোনো প্রতিনিধি থাকবে না।
ট্রাম্প এ পর্যন্ত শুধু ইসরাইল ও চীনের জন্য পরবর্তী রাষ্ট্রদূতের নাম ঘোষণা করেছেন। বাকি দেশগুলোতে নিয়োগ পেতে যাওয়া রাষ্ট্রদূতদের নাম ঘোষণা না করেই আগের রাষ্ট্রদূতদের ফেরত আসার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তার পক্ষ থেকে মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কাছে চিঠি লিখবেন বলে জানা গেছে। তারা মনে করছেন, এভাবে হঠাৎ করে দেশে ডেকে পাঠানোর ফলে তাদের ব্যক্তিগত জীবন মারাত্মকভাবে বিঘিœত হবে। বিশেষ করে ট্রাম্পের ছেলের স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে যখন নিউ ইয়র্কের বাসভবনে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে তখন রাষ্ট্রদূতদের তলব করা অন্যায়। যুক্তরাষ্ট্রের রীতি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকেই ফার্স্ট লেডি হিসেবে তার স্ত্রীকে হোয়াইট হাউসে উঠতে হয়। কিন্তু মেলেনিয়ার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে।
গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনের সময় চালানো সাইবার হ্যাকিং ওই নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় সাইবার হামলা প্রতিরোধে একটি বিশেষ দল গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। তবে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সহযোগিতা করার জন্য সাইবার হামলা চালানো হয়। হ্যাকিং-এর ঘটনায় জড়িত রুশ গুপ্তচরদের সনাক্ত করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া, চীনসহ অন্যান্য দেশ এবং বাইরের কিছু পক্ষ আমাদের সরকারি কার্যক্রম ও সাইবার জগতে হানা দেয়ার চেষ্টা করেছে। তারা ডেমোক্র্যাট দলের জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু এসব কর্মকান্ড মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলেনি। যারা আমাদের ক্ষতি করতে চেয়েছিলো, এটা শুধু তাদেরকে লাভবান করেছে। ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণে দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে বিদায়ী ওবামা সরকার ও অন্তবর্তী প্রশাসনের দ্বন্ধ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হ্যাকিং-এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর শুক্রবার ২৫ পৃষ্ঠার একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সিআইএ, এফবিআই এবং এনএসএর যৌথ এ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন উপায়ে গত নভেম্বরের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে রাশিয়া। আর সেগুলো হলো ডেমোক্র্যাট দলের জাতীয় কমিটির ইমেইল হ্যাক করে তথ্য প্রকাশ, উইকিলিকসকে ব্যবহার করে ডেমোক্র্যাট দলের গোপন তথ্য প্রচার ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমকে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারণা চালানো। আর এসব কিছুই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে করা হয় বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনে। এসব ঘটনায় জড়িত রুশ চরদের পরিচয় সনাক্তের দাবি করা হলেও; তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে শুক্রবার পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানদের বৈঠককে গঠনমূলক হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তবে বাইরের বিভিন্ন পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলার চেষ্টা চালালেও; নির্বাচনের এর কোনো প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন তিনি। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর ৯০ দিনের মধ্যে হ্যাকিং ঠেকাতে আলাদা একটি দল গঠনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।
এদিকে আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের আগে সব দেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।