বাংলাদেশিসহ প্রায় আড়াই লাখ অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ গত অর্থ বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার ২৫৫ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরমধ্যে সহস্রাধিক বাংলাদেশীও রয়েছেন। সরকারী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগের অর্থ বছরের চেয়ে এ সংখ্যা ২ শতাংশ বেশী। তবে ২০১২ অর্থ বছরের চেয়ে তা প্রায় অর্ধেক। ২০১২ অর্থ বছরে বহিষ্কার করা হয় ৪ লাখ ১০ হাজার অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থ বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৪ জনকে নিজ নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২ লাখ ১০ হাজার ৬৫৯ জন বেআইনীভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময়েই ধরা পড়ে এবং নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয় হয়। অবশিষ্টরা বহিষ্কার হয়েছেন ইমিগ্রেশন কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট আরো জানায়, ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পৌণে ৮ বছরে (প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে) মোট ২৭ লাখ ৫০ হাজার জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে এদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর এ সংখ্যা হচ্ছে আগের যে কোন প্রেসিডেন্টের আমলের চেয়ে অনেক বেশী। ইমিগ্র্যান্টদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মকর্তারা ওবামাকে ‘ডিপোর্টার ইন চীফ’ হিসেবে অভিহিত করলেও রিপাবলিকানরা ওবামার সমালোচনা করে বলেন, ওবামা সীমান্তকে নিরাপদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং ওবামা বরাবরই অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের পক্ষে রয়েছেন।
ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল’ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ম্যারিয়েলিনা হিনক্যাপি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘ওবামা প্রশাসনের চেয়ে ইমিগ্রেশন বিরোধী আর কোন প্রশাসন আমরা দেখিনি। একদিকে তিনি অবৈধদের কঠিন শর্তে বৈধতার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, অপরদিকে অবৈধদের বহিষ্কারে সবচেয়ে বেশী সক্রিয় ছিলেন।’ ২০১৪ সাল থেকেই অপরাধে লিপ্ত ইমিগ্র্যান্টদের বহিষ্কারে কঠোর পন্থা অবলম্বন করে ওবামা প্রশাসন। গত অর্থ বছর পর্যন্ত বহিস্কৃতদের মধ্যে ৮৪% ছিল গুরুতর অপরাধী। অর্থাৎ তারা আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল অথবা জনজীবনের নিরাপত্তার হুমকি ছিল কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে বেআইনীভাবে সীমান্ত অতিক্রমের সময় ধরা পড়েছিল। মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হওয়া একটি বিধির পরিপ্রেক্ষিতে ওবামা এমন কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেন।
এদিকে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, ২০ থেকে ৩০ লাখ অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে তিনি বহিস্কার করবেন, যারা অপরাধী। যদিও ২০১৫ সালে মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের হিসাব অনুযায়ী এক কোটি ১০ লাখ অবৈধ ইমিগ্র্যান্টের মধ্যে মাত্র ৮ লাখ ২০ হাজার জন হলেন অপরাধী বা ক্রিমিনাল। অবৈধ ইমিগ্র্যান্টের মধ্যে লাখ খানেক বাংলাদেশী থাকলেও, অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্তদের মধ্যে সে সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোণা। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত রক্ষী কর্তৃক ধরা পড়ার পরই নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সাম্প্রতি বছরগুলোতে বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। ক্যালিফোর্নির্য়া-আরিজোনা অঞ্চল হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ পথ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের। সেই এলাকায় গত অর্থ বছরে ধরা পড়ে মাত্র ৪ লাখ ৮ হাজার ৮৭০ জন। এ সংখ্যা হচ্ছে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
সেনসাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনীভাবে ঢুকতে আগ্রহীদের চেয়ে অনেক বেশী সংখ্যক মেক্সিকান সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছে। ২০০৯ সাল থেকেই বার্ষিক গড়ে এক লাখ মেক্সিকানের বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকার আগ্রহ কমেছে। ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বার্ষিক গড়ে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ মেক্সিকান বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে। তবে, সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহ থেকে বেআইনী পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকার প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে জানা গেছে। ২০১৪ অর্থ বছরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে বেআইনীভাবে অতিক্রমের সময় গ্রেফতার হওয়া বিদেশীর মধ্যে অধিকাংশই ছিল সেন্ট্রাল আমেরিকান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.