শেখ হাসিনার চেয়ে খালেদা জিয়ার আয় বেশি

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আয় বেড়েছে। ফলে চলতি ২০১৬-১৭ করবর্ষে অতীতের চেয়ে এবার আয়করও বেশি দিয়েছেন এই দুই শীর্ষ রাজনীতিক। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে বাড়তি আয় থাকায় এবারও কর বেশি দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
দেশের অন্যতম করদাতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকার কর অঞ্চল ৬-এ নিয়মিত আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দাখিল করেন। তার আয়কর সংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলো দেখভাল করেন তার ব্যক্তিগত আয়কর উপদেষ্টা এম. মনিরুজ্জামান খোন্দকার। তিনি গতকাল বলেন, গত ২০১৫-১৬ করবর্ষের চেয়ে এবার ২০১৬-১৭ করবর্ষে শেখ হাসিনা আয়কর বেশি দিয়েছেন। বিভিন্ন খাতভেদে আয় আগের চেয়ে বেশি হওয়ায় আয়করও বেশি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ২০১৫-১৬ করবর্ষে রিটার্ন দাখিলের সময় শেখ হাসিনা প্রায় ৪০ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা কৃষি, সম্মানী ও সম্মানী ভাতা এবং বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি খাতের আয় থেকে সরকারি কোষাগারে তখন ১৪ লাখ টাকা আয়কর দেন। এসব খাতে আয় বাড়ায় চলতি ২০১৬-১৭ করবর্ষে বেশি আয়কর দেওয়ার তথ্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কর উপদেষ্টা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৮০’র দশকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করে আসছেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সচেতন করদাতা হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ রিটার্ন দাখিল করছেন। তিনি প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিটার্ন জমা দেন। একজন সৎ করদাতা হিসেবে স্বচ্ছতার সঙ্গে সব ধরনের আয় প্রদর্শন করে আইন অনুযায়ী সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব পরিশোধ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকার কর অঞ্চল ৮-এ নিয়মিত আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দাখিল করেন। তার আয়কর সংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের আইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আজম খান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’। আজম খান বিএনপি চেয়ারপারসনেরও উপদেষ্টা। গতকাল আহমেদ আজম খান বলেন, গত ২০১৫-১৬ করবর্ষের চেয়ে এবার ২০১৬-১৭ করবর্ষে আয় বেশি হওয়ায় অতীতের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা বাড়তি আয়কর দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এবার তার আয় এক কোটি টাকার বেশি হওয়াতে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা অ্যাকাউন্ট-পে চেকের মাধ্যমে আয়কর হিসেবে জমা দেওয়ার তথ্য দিয়েছেন এই উপদেষ্টা।
এনবিআর সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৫-১৬ করবর্ষে রিটার্ন দাখিলের সময় খালেদা জিয়া তার বাড়ির ভাড়া, এফডিআর ও সঞ্চয়ী হিসাব খাত থেকে পাওয়া সর্বমোট ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ২৩৪ টাকা আয়ের বিপরীতে তিনি কর হিসেবে ২৭ লাখ টাকার অ্যাকাউন্ট-পে চেক প্রদান করেছিলেন। এসব খাতের আয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় চলতি ২০১৬-১৭ করবর্ষে খালেদা জিয়া প্রায় ১০ লাখ টাকা বেশি আয়কর দেওয়ার তথ্য দিয়েছেন আহমেদ আজম খান।
তবে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, বিগত ১০ বছর যাবৎ করদাতা হিসেবে খালেদা জিয়ার কাছে প্রাপ্য রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। কারণ গত ১০ বছর যাবৎ খালেদা জিয়ার মোট ৮টি ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকায় প্রতিটি করবর্ষে আয়কর পরিশোধের জন্য অ্যাকাউন্ট-পে চেক প্রদান করে আসছেন তিনি। কিন্তু এনবিআর সেসব চেক নগদায়ন করে আয়কর গ্রহণ করেনি।
অভিযোগ রয়েছে, কোনো কর মামলা না থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার আটটি ব্যাংক হিসাব ২০০৭ সাল থেকে জব্দ করে রেখেছে এনবিআর। বিগত ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিক-ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করতে নেপথ্যে ভূমিকা রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.