“কড়–ই তলার উপাখ্যান”

নারায়ণগঞ্জের “বুস কেবিন” যেখানে কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজী শুভাষ বোস চা পান করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “মধুর কেন্টিন” যেখান থেকে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একষট্টির হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের আন্দোলন সত্তোরের দশকে ছাত্র সমাজের ১১ দফা প্রনয়ন সহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা গড়ে উঠেছিল। কিন্বা পুরনো ঢাকার “বিউটি বোর্ডিং” যেখানে কবি সামছুর রাহমান, সব্য সাচী লেখক সৈয়দ সামছুল হক, কবি আসাদ চৌধুরীর সুরকার ও কন্ঠশিল্পীর মতো মনিষীদের পদ চারনায় মুখরিত হত।
পাঠক, তেমনি একটি স্থান যদিও উল্লেখিত মহা মনিষীদের মত নয় সে-স্থান কসবা উপজেলা সদরের “কড়–ই তলা” এখানে প্রতিদিন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, রিক্সা চালক হতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষজনের আনাগুনা হয়ে থাকে। এখানে খোলা আকাশের নিচে বসে চায়ের মেলা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতার আড্ডা জমে থাকে। কড়–ই তলার বিশেষ আকর্ষন বাহারি রঙ্গের চায়ের মৌ মৌ গন্ধে ভূলিয়ে দেয় সকল কর্ম ক্লান্তি। এখানে বসে তৈরি হয় রাজনৈতিক কর্ম পন্থা কিন্বা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্থানান্তর/অপসারণ সহ জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদান্ত। মাঝে মধ্যে  মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব এলে, উপচ্ছে পড়ে ভীড়। দেখে মনে হয় যেন কুম্বের মেলা (যদিও সাধু সন্যাষী)।
শত শত প্লাষ্টিকের চেয়ারে বসে চলে নিরন্তর খোশ গল্প। কারো মেরুদন্ডের ব্যাথ্যা থাকলে তার জন্য বরাদ্দ হয়ে থাকে হাতাঅলা চেয়ার। দূর দূড়ান্ত হতে তরুন যোবারা আসে মোটর বাইকে, বাহারী চায়ের স্বাধে আশ্বাদিত হতে। এ যেন এক মিলন মেলা।
স্বাধীনতার ৪৬ বৎসর পেরিয়ে গেলেও এখানে নেই কোন সম্বৃদ্ধ পাবলিক লাইব্রেরী, নেই পার্ক কিন্বা প্রেক্ষা গৃহ। বিনোদনের একমাত্র ভরসা স্থল “কড়–ই তলা”।
মুক্তিযুদ্ধের তীর্থ ভূমি কসবা, শত শহীদের রক্তে রঞ্জিত কসবার উর্বর ভূমি, এখানে আজও গড়ে উঠেনি কোন “স্মৃতি সৌধ” অথবা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স।
সত্তোরের নির্বাচনে সংখ্যা গড়িষ্ট আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্থান্তর নিয়ে পাকিস্থান সরকার যখন তাল বাহানা করছিল, তখন দেশে টান্ টান্ উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ সময় এতদাঞ্চলের লোকজন তরি ঘড়ি করে সারাদিনের কাজ শেষে বিকেল বেলায় বি বি সি, ভয়েস অব এমেরিকার সংবাদ শূনার জন্যে কসবা পুরান বাজারের প্রয়াত সুধীর রঞ্জন সাহার “পপুলার মিষ্টান্ন ভান্ডারে” স্টেনজিস্টারের সংবাদ শুনার জন্যে ঘরে বাইরে ভীড় করত।  ঐ সময় পপুলার মিষ্টান্ন ভান্ডারেই একটি মাত্র ৪ ব্যান্ডের ফিলিপস স্টেনজিস্টার ছিল।  যাহা হতে উচ্চ স্বরে ভীড় জমিয়ে সংবাদ শুনত সমবেত জনত।
উল্লেখ্য উপ সাগরীয় অঞ্চলের  (ইরাক-ইরান) যুদ্ধের সময় ফ্ল্যাটশেল্টারে কসবা প্রেস ক্লাবে দলে দলে লোকজন সমবেত হয়ে পত্রিকা ও টেলিভিশনে উপ সাগরীয় যুদ্ধের সংবাদ পড়তে ও দেখতে ভিড় জমাত। সকলের জন্য ছিল প্রেস ক্লাবের দ্বার উন্মুক্ত।  হালে প্রেস ক্লাব সু উচ্চ ভবনে স্থানান্তর হওয়ার কারণে সাধারন মানুষ বা সাংবাদিকেরাও তেমন নিয়মিত তথায় আসা যাওয়া করেন না।
কসবার প্রাণ কের্ন্দের “কড়–ই তলাই” এখানকার গণ মানুষের বিনোধন  বা আড্ডার একমাত্র স্থান। মাঝে মাঝে সড়ক জনপথ বিভাগের কর্মচারীরা ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে চা’য়ের মেলায় ভাংচুড় করিয়া দেয়। বেরসিক জনপথ কর্মকর্তাদের এহেন আচরণে কড়–ই তলার আগন্তকেরা পরে বিপাকে।
পিয়, পাঠক, ছুটির দিনে অথবা, অবসরে আসুন্না। আর রবিবারে এলে তো কথাই নেই। কড়ই তলার চা’ পর্ব শেষে নোম্যান্স ন্যান্ডের বর্ডার হাটে বেড়িয়ে গেলে ক্ষতি কি দু’ বাংলার জনতার মাঝে!
লেখক-ঃ  বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এইচ শাহ্ আলম, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published.