সংশোধিত এডিপি অনুমোদন

টিআইএন॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) মূল বরাদ্দ ঠিক রেখে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত আরএডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ থাকছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
গত মঙ্গলবার শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে (এনইসি) এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। বৈঠকের শুরুতে আরএডিতে এক লাখ চার হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশন। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিনিয়োগ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা মেটাতে বৈঠকে মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ না কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ কারণে আরএডিপিতে প্রস্তাবিত বরাদ্দের সঙ্গে বাড়তি ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, বাড়তি বরাদ্দ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বন্টন করা হবে। নতুন ৩০৩টি প্রকল্পসহ সংশোধিত এডিপিতে মোট প্রল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৮১টি। এ ছাড়া আরও ৯১০টি বরাদ্দহীন ও অননুমোদিত প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকবে সংশোধিত এডিপিতে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার অর্থায়নের বরাদ্দ ১২ হাজার ৬৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে আট হাজার ৫৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা করা হয়েছে। সংস্থার অর্থায়নসহ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত আরএডিপির আকার দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মূল এডিপিতে সংস্থার অর্থায়নসহ মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, সাধারণত সব সময়ই আএডিপিতে বরাদ্দ কমে। কিন্তু এবার কমেনি। তাই এবারের আরএডিপি ব্যতিক্রম। এছাড়া চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। পাঁচ বছরের এডিপির বাস্তবায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী বলেন, এবারের আরএডিপিতে বরাদ্দ না কামানোর পেছনে মূল কারণ এডিপি বাস্তবায়নের এই হার বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, এনইসি বৈঠকে ১১ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকার বাড়তি চাহিদা দিয়েছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বাড়তি সাত হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। যে পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা কমানো হয়েছে তা সরকারি তহবিল থেকে পূরণ করা হচ্ছে।
এদিকে, বৈদেশিক সহায়তা কেন কমানো হয়েছে তা গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল পরিকল্পনামন্ত্রী। ওই দিন বৈদেশিক সহায়তা কামানোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিহামলার কারণে মেট্রেরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এমনকি পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকেও বিদেশিরা চলে গিয়েছিল। এ কারণে বড় অংকের বিদেশি সহায়তা কেটে ফেলতে হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প। এ কারণে চলতি অর্থবছরের যে পরিমাণ অর্থ এই প্রকল্পে ব্যয় করা সম্ভব হবে তাই বরাদ্দ হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত (২০১৫-১৬) অর্থবছরে ৯৭ হাজার কোটি টাকার মূল এডিপি থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা (৬ শতাংশ) কমিয়ে আরএডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৯১ হাজার কোটি টাকার। ওই সময় এডিপিতে স্থানীয় উৎস থেকে সাড়ে ৬২ হাজার কোটি থেকে কমিয়ে ৬১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা করা হয়। অন্যদিকে মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ পাঁচ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা কিমিয়ে চূড়ান্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.