গল্প নয় সত্য

এ, টি, এম আবু আসাদ
পরিচালক
বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ঢাকা।
পাসপোর্ট এমন একটি দলিল যার উপযোগীতা প্রথমত বিদেশে। পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশ ভ্রমন কল্পনাই করা যায় না। যদিও দেশের অভ্যন্তরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে দেশের মধ্যে নিজের পরিচয় উপস্থাপন করা যায়। কিন্তু বিদেশে কোন ব্যক্তির প্রদান পরিচয়পত্র হল পাসপোর্ট। বিদেশে পাসপোর্টের মাধ্যমেই ব্যক্তির নিজ পরিচয় দিতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় পরিচয় উপস্থাপন করতে হয়। বর্তমানে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধির পেক্ষাপটে প্রতিটি দেশ তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভূয়া পরিচয়ে কেউ যেন সে দেশের প্রবেশ ও অবস্থান করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি দেশই সজাগ রয়েছে। বিদেশে পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার্য্য পাসপোর্ট এর তথ্যের সাথে ভ্রমনকারীর যেন মিল থাকে সেজন্য ক্রমান্বয়ে অধিকতর নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত পাসপোর্টের উন্নততর ভার্সন চালু করার চেষ্টা চলছে। ইমিগ্রেশন কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনায় ভ্রমনকারীর ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট, আইরিশ ইত্যাদি বায়োমেট্টিক ফিচার সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করছেন। ফলে কোন ব্যক্তি তথ্য পোপন বা পরিবর্তন পূর্বক পূর্বে ভ্রমন করেছেন এমন দেশে পুনরায় প্রবেশ করতে চাইলে তারা সেটাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে।
পাসপোর্টের তথ্য বার বার পরিবর্তনে পাসাের্টের বাহক সম্পর্কে বিশেষ সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। ফলে পাসপোর্ট বাহক দূতাবাস কিংবা বিদেশের ইমিগ্রেশনে নানা দুর্ভোগের শিকার হন। প্রসঙ্গত: দু’ একটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো:
জনৈক বাংলাদেশী নাগরিকের নাম ও জন্ম তারিখ অংশিক পরিবর্তনের কারনে ভ্রমণ ভিসা প্রদান করতে অস্বীকার করে সিঙ্গাপুর। উল্লেখ্য যে, তার পূর্বের পাসপোর্টে নাম Hossain Mohammad Kabir  জন্ম তারিখ: ০১/১২/১৯৭১ খ্রী:  এবং পরবর্তী পাসপোর্টে তার নাম Md Kabir Hossain জন্ম তারিখ: ০১/১২/১৯৭১ খ্রি: এর পরবর্তী পাসপোর্টে তার নাম  Md kabir Hossain  জন্ম তারিখ: ০১/১২/১৯৭০ খ্রি:।  সিঙ্গাপর  ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জনাব কবির হোসেন-কে প্রদত্ত পত্রে দাবী করে “An official letter from the Bangladeshi Authority Stating which is your actual identity”।
আরেক বাংলাদেশী Mr Mohammad Julhas  জন্ম তারিখ: ০১/০৬/১৯৮৩ উল্লেখ করে ইস্যুকৃত হাতের লেখা পাসপোর্ট নিয়ে মরিশাস ভ্রমন করেন। পরে তিনি কেবল মাত্র জন্মসাল ১৯৮৩ এর স্থলে ১৯৮২ উল্লেখ পূর্বক মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নিয়ে পুনরায় মরিশাস গমন করেন। তিনি সে দেশে রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদন করলে মরিশাস পাসপোর্ট ও  ইমিগ্রেশন অফিস থেকে  Mr Mohammad Julhas এর জন্ম তারিখের অমিল দূর না করা পর্যন্ত তার রেসিডেন্ট পারমিট প্রদানের আবেদন বিবেচনা করা হবে না মর্মে বাংলাদেশী নাগরিকের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান-কে নোটিশ প্রদান করে। নোটিশে বলা হয় “Your attention is brought to the fact that no consideration will be given to the application unless the discrepancy is cleared”।
বাংলাদেশী নাগরিক জনাব জাহাঙ্গীর বাউল এর হাতের লেখা পাসপোর্টে জন্ম তারিখ ছিল ০১/০৩/১৯৬৮ খ্রি:। পরে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে মিল রেখে ০৩/১০/১৯৬৮ খ্রি: জন্ম তারিখ উল্লেখ করে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। বিলেত ভ্রমনের প্রত্যাশায় ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনে ভিসার আবেদন করলে তারা জানায় “ Your Application is refused owing to there being different dates of birth recorded in your passports”.
আর আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে যারা ভ্রমন করেছেন তারা ভালভাবেই জানেন, এক যুগ আগেও যদি আপনি ভারত ভ্রমন করে থাকেন তবুও এক যুগ আগের পাসপোর্ট ও আজকের এমআরপি’র মধ্যে যদি তথ্যগত অমিল থাকে তবে আপনার পক্ষে ভিসা নিয়ে ভারত ভ্রমন সহজসাধ্য হবে না। আপনার মেয়াদ উত্তীর্ণ অকেজো পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করে এমআরপি’র সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ না করা পর্যন্ত আপনি ভিসা পাবেন না। যদিও মেয়াদ উত্তীর্ণ  বাতিলকৃত হাতের লেখা পাসপোর্টে কোন তথ্য সংযোজন/বিয়োজন করা যায় না।
এক ফাহমিদার কাহিনী: জনাব ফাহমিদা আহমেদ ২০১০ সালে আবেদন করে একটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে নাম Fahmida Ahamed  এর বদলে  Fahmida Ahmed এর জন্ম তারিখ ১৮/১০/১৯৮৭ এর বদলে ০১/০১/১৯৯০ উল্লেখ করে দ্বিতীয় এমআরপি গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় এমআরপিটি হারানো ঘোষণা দিয়ে একই তথ্যে তৃতীয় এমআরপি গ্রহণ করেন। তৃতীয় এমআরপিতে উল্লেখিত বাবার নাম Faiz Ahamed   এর পরিবর্তে Faiz Ahmed  এবং মায়ের নাম Alpina Ahmed এর পরিবর্তে Alpona Ahmed করে চতুর্থ এরআরপি গ্রহণ করেন। চতুর্থ এমআরপি সমর্পন করে পূর্বের পাসপোর্ট হিসেবে এমআরপি’র বদলে পূর্বের হাতে লিখা পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করে পঞ্চম এমআরপি গ্রহণ করেন। পঞ্চম এমআরপি তে উল্লেখিত জন্ম তারিখ দ্বিতীয়বারের মত ০১/০১/১৯৯০ এর বদলে ১৮/০৯/১৯৯০, মায়ের নাম Alpona Ahmed  এর বদলে Halima Akter, স্থায়ী ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ষষ্ট এমআরপি’র অঅবেদন করেন যা বর্তমানে পেন্ডিং আছে। ফাহমিদা আহমেদ হাতের লিখা সহ ৬টি পাসপোর্ট করেও তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন নি। তিনি তার সপ্তম পাসপোর্টের মাধ্যমে স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছতে পারলে আমরা খুশী হবো। এরূপ কয়েকজন ফাহমিদা থাকলে পাসপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা ধুলোয় মিশাতে বেশী সময় লাগবে না।
নাজমা বেগমের কাহিনী: জনাব নাজমা বেগম ২০১২ সালে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, রাজশাহীতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এর আবেদন করেন। তার স্থায়ী ঠিকানা নাটোর জেলায়। কিন্তু তিনি আবেদনপত্রে সে তথ্য (স্থায়ী ঠিকানা) গোপন করার কারনে পুলিশ প্রতিবেদনে আপত্তি থাকায় প্রার্থীত পাসপোর্টটি পাননি। পরবর্তীতে তিনি স্থায়ী ঠিকানা গাজীপুর এবং বর্তমান ঠিকানা কাজীপাড়া, ঢাকা উল্লেখ পূর্বক বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, আগারগাঁও, ঢাকা’য় পুনরায় আবেদন করেন। কিন্তু আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করার সময় তিনি পূর্ববর্তী আবেদনের (রাজশাহী) তথ্য লাকুনোর কারণে আগারগাঁওয়ের আবেদনপত্রটি সিস্টেমে আটকা পড়ে। দীর্ঘদিন পাসপোর্ট না পাওয়ার বিষয়টি অফিস কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত না করেই নাজমা বেগম আগষ্ট/২০১৬ সালে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কার্যক্রমের উপর দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত গন-শুনানী-তে পাসপোর্ট না পাওয়ার বিষয়ে হয়রানির অভিযোগ তোলেন। এরপর নাজমা বেগমের আবেদন বিশেষ বিবেচনায় নিষ্পত্তি করে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। কিন্তু পাসপোর্ট বিতরনকালে নাজমা বেগমের পাসপোর্টে পিতার নাম ও স্থায়ী ঠিকানা সম্পূর্ণ ভুল হয়েছে মর্মে ধরা পড়ে। নাজমা বেগম তখন এফিডেভিট করে সঠিক পিতার নাম ও সঠিক স্থায়ী ঠিকানা গাজীপুরের স্থলে নাটোর উল্লেখ করে পাসপোর্ট  পুন: ইস্যুর আবেদন করেন। পিতার নাম ও স্থায়ী ঠিকানা সম্পূর্ণ পরিবর্তনের কারণে আবেদনপত্রটি নিস্পত্তির নিমিত্তে বিধি মোতাবেক পুলিশের মতামতের জন্য প্রেরণ করা হয়। এবার পুলিশ বর্তৃপক্ষ তার বর্তমান ঠিকানা সঠিক নয় মর্মে মতামত প্রদান করেন। এভাবে নাজমা বেগম তার অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারনে সঠিক তথ্যে পাসপোর্ট পেতে জটিলতার জালে আটকা পড়েন।
বিয়ের আগে ডিভোর্স: জনাব আবু রায়হান মাহমুদ ২০০৬ সালে বিয়ে করেন এবং ২০১৩ সালে স্ত্রীকে তালাক দেন। তালাক থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করার পূর্বেই প্রবাসী জনৈকা দিলশাদ রহমান-কে স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ পূর্বক ০১/০৩/২০১৬ খ্রি: তারিখে তিনি বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, আগারগাঁও, ঢাকা অফিস থেকে একটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) গ্রহণ করেন। তিনি ঐ পাসপোর্ট দ্বারা প্রবাসী স্ত্রীর স্পন্সর কাজ লাগিয়ে এক পশ্চিমা দেশে যাবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্ত্রী প্রবাসে ও আবেদক বাংলাদেশে, বিবাহ কিভাবে হল এ প্রশ্নে দূতাবাস সন্দেহ পোষণ করেন। জনাব আবু রায়হান প্রথম স্ত্রীর ডিভোর্স লেটার সংযুক্ত করে দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম পাসপোর্ট থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আগারগাঁও অফিসে রি-ইস্যুর আবেদন করেন। ভূল তালাকনামা দেয়ায় তার আবেদনপত্রটি আগারগাঁও অফিসে অনিস্পন্ন থাকে। এবার পূর্বের পাসপোর্টের সবকিছু  লুকিয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, উত্তরায় নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। তথ্য গোপনের কারনে তার পাসপোর্ট ইস্যু পত্রিকয়া সিষ্টেমে আটকে যায়। তার প্রবাসী সম্ভাব্য স্ত্রী এখন বাংলাদেশে। বর্ষ বিদায়ের প্রাক্কালে ৩০শে ডিসেম্বও, ২০১৬ খ্রি: তারিখে তিনি কাঙ্খিত নারী-কে বিয়ে করেন এবং ১ শে জানুয়ারী, ২০১৭ খ্রি: তারিখে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা পূর্বক ক্ষমা প্রার্থনা করে পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় আগারগাঁও অফিস কর্তৃপক্ষের স্মরণাপন্ন হলে তার আবেদনপত্র নিষ্পত্তি করা হয়। আবেদনকারীর অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারনেই কাঙ্খিত তথ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি জটিলতার জালে জড়িয়ে যায়।
অকৃত্রিম ভালবাসা ! জনাব মো: আতিকুর রহমান সরকারী চাকুরী করেন মর্মে কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি সনদ নিয়ে পাসপোর্টের জন্য আগারগাঁও অফিসে আবেদন পত্র জমা করেন। MRP System  এ তথ্য যাচাই বাছাই পর্যায়ে উদঘাটিত হয়, জনাব মো: আতিকুর রহমান এর নাম, পরিচয় ব্যবহার করে আরেক ব্যক্তি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নারায়নগঞ্জ থেকে MRP গ্রহণ করেছেন। ফলে সরকারী চাকুরিজীবি হওয়া সত্ত্বেও জনাব মো: আতিকুর রহমান এর পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়া আটকে গেছে। একই নাম ও পরিচয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে পাসপোর্ট দেয়া যাবে না, এটাঁই MRP সিষ্টেমের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং কোন ব্যক্তি প্রকৃত আতিকুর রহমান তা উদঘাটনের জন্য পুলিশ তদন্তে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ সুপার, নারায়নগঞ্জ প্রেরিত তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায় “বিগত ৭/৮ বছর পূর্বে দুবাই এর ভিসা পেতে হলে কমপক্ষে এসএসপি পাশের সনদ প্রয়োজন ছিল। তখন মো: আতিকুর রহমান এর গ্রামের আরেক ছেলে (মিজানুর রহমান যিনি অষ্টম শ্রেণী পাশ) আতিকুর রহমানের এসএসসি সনদ এর ফটোকপি গ্রহন করে এবং তার নাম, পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে প্রথমে হাতের লেখা পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই চলে যান ও পরে এমআরপি গ্রহন করেন। বর্তমানে তিনি দুবাই আছেন।” তদন্তে রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, “জনাব আতিক তার এসএসসি সনদের ফটোকপি সরবরাহ করে তার নাম, পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে গ্রামবাসী মিজানুর রহমানকে পাসপোর্ট প্রস্তুত ও বিদেশ যাওয়ার ভিসা করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে”।
পাসপোর্ট এর ভাষায় একজন অরেক জনের নাম কিংবা তথ্য ধারণ করাকে বলে Impersonations, যার প্রতিরোধ করাই হলো তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর উদ্দেশ্য। সুতরাং নিজের নাম পরিচয়ে অন্যকে পাসপোর্ট করতে দেয়ার মাধ্যমে জনাব মো: আতিকুর রহমান নিজেকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। পাসপোর্ট আইনে যা দন্ডনীয় বটে!
পাসপোর্ট কর্তপক্ষকে উকিল নোটিশ: আবেদনকারী জনাব আব্দুল আলী, পিতা-আবুল কাশেম, মাতা-শাহানা কাশেম, জন্ম তারিখ: ১৫/০৫/১৯৬২ খ্রি:, পেশা-ব্যবসা এর অনুকূলে তৎকালীন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ঢাকা হতে ২০০৫ সালে হাতে লেখা পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়; যা দ্বারা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা’র আবেদন করেন। তিনি জন্ম তারিখ ১৫/০৫/১৯৬২ এর পরিবর্তে ০১/০২/১৯৬৭ খ্রি: উল্লেখ পূর্বক ২০১১ সালে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, উত্তরায় পূর্বের হাতে লেখা পাসপোর্ট সমর্পন করে এমআরপি’র আবেদন করলে তার অনুকূলে একটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে তিনি নিজের নাম, পিতার নাম ও মাতার নামের  শেষে বংশীয় উপাধি “খান” সংযুক্ত করে পূর্বের পাসপোর্টটি বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ঢাকায় সমর্পন করে রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করেন। তার আবেদন মোতাবেক তার অনুকুলে ২০১৫ সালে আরেকটি এমআরপি ইস্যু করা হয়। জনাব আব্দুল আলী নিজেই তার হাতে লেখা পাসপোর্স থেকে একে একে জন্ম তারিখ, নিজ নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম সংশোধন করে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। ফলে হাতে লেখা পাসপোর্টের সাথে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দুটির বৈশাদৃস্য পরিলক্ষিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাকে ভিসা প্রদানে অস্বিকৃতি জানান। দূতাবাসের চাহিদা পূরণ পূর্বক ভিসা পাওয়ার প্রত্যাশায় তিনি নি¤œরূপ ঘোষণা দাবী করে পাসপোর্ট কর্তপক্ষকে উকিল নোটিশ প্রদান করেন।
My Client is in urgent need of an Order/ Letter from you declaring the Following. (a) The holer of 3 (three) passports hearing Nos. X —–, AA—– and BJ—— is a single person, I.E. My Client;
(b) The data of my Client is correct in the passport Nos. AA—- and BJ —— (both machine readable), and worng in the passport No. X —- (Hand written); and
© The Passport No. X —– (Hand written) Containing incorrect information of my Client is void ab initio and cancelled.
এ রকম বৈচিত্রময় অসংখ্য ঘটনার স্বাক্ষী আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস যার বর্ণনা দিতে গেলে এ লেখাটি পুস্তিকায় পরিনত হবে। কোন গাড়ী চালক যতই দক্ষ হোক না কেন, পথচারী বা অন্য গাড়ী চালকের ভুলে ধর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তদ্রুপ “পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার, নি:স্বার্থ সেবাই অঙ্গীকার” এ মন্ত্রে যতই আমরা উজ্জীবিত হয়ে কাজ করি না কেন ফাহমিদা-নাজমার মত আবেদনকারীদের পাসপোর্ট পাওয়ার ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে পারবো না যতদিন না তারা নিজেরাই সচেতন হন।
তথ্য পরিবর্তন কিংবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট তৈরীর ফলে বিদেশী দূতাবাসগুলোর নিকট বাংলাদেশ পাসপোর্টের উপর ক্রমান্বয়ে আস্তাহীনতা ও সন্দেহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রের সম্মানিত ব্যক্তিরাও অনেক সময় বিদেশ ভ্রমনে গিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েন। বাংলাদেশ পাসপোর্টে বর্ণিত তথ্যে  আস্থা রাখতে না পেরে অনেক বিদেশী দূতাবাস ভিসা দেয়ার পূর্বে বাংলাদেশী পরিবারের সদস্যদের ডি,এন,এ, টেষ্ট করে রক্তের সম্পর্ক নির্ণয় পূর্বক ভিসা দিচ্ছেন। যা আমাদের জন্য অবমাননাকরও বটে! ২০/০২/২০১৭ খ্রি: তারিখের “দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায়  “তীব্র ভিসা ভোগান্তিতে বাংলাদেশ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদদাতা জনাব জুলকার নাইন গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্য ভিত্তিক দীর্ঘ প্রতিবেদনে ‘বিশ্বের সর্বাধিক ট্যুরিষ্টের দেশে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ,’ ‘অন- অ্যারাইভালের দেশগুলোতে বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখলেই ভোগান্তি’ এবং ‘এক ডজনের বেশী দেশে বন্ধ ওয়ার্ক ভিসা’ বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
দৃশ্যত: আমাদের পাসপোর্টের রং লাল, নীল, সবুজ হলেও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সদস্য হিসেবে আমাদের কাছে সব “বাংলাদেশ পাসপোর্ট” এর অন্তর্নিহিত রঙ “রক্ত লাল” যা আমরা অর্জন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এ অমূল্য সম্পদের মর্যাদা রক্ষায় আমরা প্রত্যয়, আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রয়োজন সকলের সচেতনতা ও সহযোগীতা।
আমার এ লেখার প্রথমাংশে পাসপোর্টে তথ্য গরমিল হলে অর্থাৎ একেক সময় একেক তথ্যে পাসপোর্ট করে বিদেশ ভ্রমনেচ্ছুদের বিড়ম্বনার কথা এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পাসপোর্ট এর মর্যাদাহানির কথা প্রকারান্তরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মর্যাদাহানীর কথাটি বুঝানোর চেষ্টা করেছি। আর শেষে বিদেশে যাওয়ার অদম্য বাসনায় এদেশের কিছু অসচেতন নাগরিকের অপকৌশল ও তাতে সৃষ্ট বিড়ম্বনার কথাটিই বুঝানোর চেষ্টা করেছি।
এ লেখার উদ্দেশ্য কাউকে হেয় করা নয়; সজাগ ও সচেতন করাই মূল লক্ষ্য। দেশবাসী যেমন সত্য ও সঠিক তথ্যের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যান, বিদেশে দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখেন এবং মার্তৃভূমি বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.