গল্প নয় সত্য

এ, টি, এম আবু আসাদ
পরিচালক
বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ঢাকা।

জনাব মো: আতিকুর রহমান এর পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়া আটকে গেছে। একই নাম ও পরিচয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে পাসপোর্ট দেয়া যাবে না, এটাঁই গজচ সিষ্টেমের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং কোন ব্যক্তি প্রকৃত আতিকুর রহমান তা উদঘাটনের জন্য পুলিশ তদন্তে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ সুপার, নারায়নগঞ্জ প্রেরিত তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায় “বিগত ৭/৮ বছর পূর্বে দুবাই এর ভিসা পেতে হলে কমপক্ষে এসএসপি পাশের সনদ প্রয়োজন ছিল। তখন মো: আতিকুর রহমান এর গ্রামের আরেক ছেলে (মিজানুর রহমান যিনি অষ্টম শ্রেণী পাশ) আতিকুর রহমানের এসএসসি সনদ এর ফটোকপি গ্রহন করে এবং তার নাম, পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে প্রথমে হাতের লেখা পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই চলে যান ও পরে এমআরপি গ্রহন করেন। বর্তমানে তিনি দুবাই আছেন।” তদন্তে রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, “জনাব আতিক তার এসএসসি সনদের ফটোকপি সরবরাহ করে তার নাম, পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে গ্রামবাসী মিজানুর রহমানকে পাসপোর্ট প্রস্তুত ও বিদেশ যাওয়ার ভিসা করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে”।
পাসপোর্ট এর ভাষায় একজন অরেক জনের নাম কিংবা তথ্য ধারণ করাকে বলে Impersonations, যার প্রতিরোধ করাই হলো তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর উদ্দেশ্য। সুতরাং নিজের নাম পরিচয়ে অন্যকে পাসপোর্ট করতে দেয়ার মাধ্যমে জনাব মো: আতিকুর রহমান নিজেকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। পাসপোর্ট আইনে যা দন্ডনীয় বটে!
পাসপোর্ট কর্তপক্ষকে উকিল নোটিশ: আবেদনকারী জনাব আব্দুল আলী, পিতা-আবুল কাশেম, মাতা-শাহানা কাশেম, জন্ম তারিখ: ১৫/০৫/১৯৬২ খ্রি:, পেশা-ব্যবসা এর অনুকূলে তৎকালীন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ঢাকা হতে ২০০৫ সালে হাতে লেখা পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়; যা দ্বারা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা’র আবেদন করেন। তিনি জন্ম তারিখ ১৫/০৫/১৯৬২ এর পরিবর্তে ০১/০২/১৯৬৭ খ্রি: উল্লেখ পূর্বক ২০১১ সালে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, উত্তরায় পূর্বের হাতে লেখা পাসপোর্ট সমর্পন করে এমআরপি’র আবেদন করলে তার অনুকূলে একটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে তিনি নিজের নাম, পিতার নাম ও মাতার নামের  শেষে বংশীয় উপাধি “খান” সংযুক্ত করে পূর্বের পাসপোর্টটি বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ঢাকায় সমর্পন করে রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করেন। তার আবেদন মোতাবেক তার অনুকুলে ২০১৫ সালে আরেকটি এমআরপি ইস্যু করা হয়। জনাব আব্দুল আলী নিজেই তার হাতে লেখা পাসপোর্স থেকে একে একে জন্ম তারিখ, নিজ নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম সংশোধন করে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। ফলে হাতে লেখা পাসপোর্টের সাথে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দুটির বৈশাদৃস্য পরিলক্ষিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাকে ভিসা প্রদানে অস্বিকৃতি জানান। দূতাবাসের চাহিদা পূরণ পূর্বক ভিসা পাওয়ার প্রত্যাশায় তিনি নি¤œরূপ ঘোষণা দাবী করে পাসপোর্ট কর্তপক্ষকে উকিল নোটিশ প্রদান করেন।
My Client is in urgent need of an Order/ Letter from you declaring the Following. (a) The holer of 3 (three) passports hearing Nos. X —–, AA—– and BJ—— is a single person, I.E. My Client;
(b) The data of my Client is correct in the passport Nos. AA—- and BJ —— (both machine readable), and worng in the passport No. X —- (Hand written); and
© The Passport No. X —– (Hand written) Containing incorrect information of my Client is void ab initio and cancelled.

এ রকম বৈচিত্রময় অসংখ্য ঘটনার স্বাক্ষী আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস যার বর্ণনা দিতে গেলে এ লেখাটি পুস্তিকায় পরিনত হবে। কোন গাড়ী চালক যতই দক্ষ হোক না কেন, পথচারী বা অন্য গাড়ী চালকের ভুলে ধর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তদ্রুপ “পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার, নি:স্বার্থ সেবাই অঙ্গীকার” এ মন্ত্রে যতই আমরা উজ্জীবিত হয়ে কাজ করি না কেন ফাহমিদা-নাজমার মত আবেদনকারীদের পাসপোর্ট পাওয়ার ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে পারবো না যতদিন না তারা নিজেরাই সচেতন হন।
তথ্য পরিবর্তন কিংবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট তৈরীর ফলে বিদেশী দূতাবাসগুলোর নিকট বাংলাদেশ পাসপোর্টের উপর ক্রমান্বয়ে আস্তাহীনতা ও সন্দেহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রের সম্মানিত ব্যক্তিরাও অনেক সময় বিদেশ ভ্রমনে গিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েন। বাংলাদেশ পাসপোর্টে বর্ণিত তথ্যে  আস্থা রাখতে না পেরে অনেক বিদেশী দূতাবাস ভিসা দেয়ার পূর্বে বাংলাদেশী পরিবারের সদস্যদের ডি,এন,এ, টেষ্ট করে রক্তের সম্পর্ক নির্ণয় পূর্বক ভিসা দিচ্ছেন। যা আমাদের জন্য অবমাননাকরও বটে! ২০/০২/২০১৭ খ্রি: তারিখের “দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায়  “তীব্র ভিসা ভোগান্তিতে বাংলাদেশ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদদাতা জনাব জুলকার নাইন গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্য ভিত্তিক দীর্ঘ প্রতিবেদনে ‘বিশ্বের সর্বাধিক ট্যুরিষ্টের দেশে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ,’ ‘অন- অ্যারাইভালের দেশগুলোতে বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখলেই ভোগান্তি’ এবং ‘এক ডজনের বেশী দেশে বন্ধ ওয়ার্ক ভিসা’ বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
দৃশ্যত: আমাদের পাসপোর্টের রং লাল, নীল, সবুজ হলেও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সদস্য হিসেবে আমাদের কাছে সব “বাংলাদেশ পাসপোর্ট” এর অন্তর্নিহিত রঙ “রক্ত লাল” যা আমরা অর্জন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এ অমূল্য সম্পদের মর্যাদা রক্ষায় আমরা প্রত্যয়, আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রয়োজন সকলের সচেতনতা ও সহযোগীতা।
আমার এ লেখার প্রথমাংশে পাসপোর্টে তথ্য গরমিল হলে অর্থাৎ একেক সময় একেক তথ্যে পাসপোর্ট করে বিদেশ ভ্রমনেচ্ছুদের বিড়ম্বনার কথা এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পাসপোর্ট এর মর্যাদাহানির কথা প্রকারান্তরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মর্যাদাহানীর কথাটি বুঝানোর চেষ্টা করেছি। আর শেষে বিদেশে যাওয়ার অদম্য বাসনায় এদেশের কিছু অসচেতন নাগরিকের অপকৌশল ও তাতে সৃষ্ট বিড়ম্বনার কথাটিই বুঝানোর চেষ্টা করেছি।
এ লেখার উদ্দেশ্য কাউকে হেয় করা নয়; সজাগ ও সচেতন করাই মূল লক্ষ্য। দেশবাসী যেমন সত্য ও সঠিক তথ্যের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যান, বিদেশে দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখেন এবং মার্তৃভূমি বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.