বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন ত্রীধা বিভক্ত

এইতো গত সপ্তাহে হয়ে যাওয়া কুমিল্লার নির্বাচন নিয়ে হয়ে গেলো এক তুগলকি কান্ড। যা হওয়ার তাই হয়েছে এবং এটা হওয়া প্রয়োজনও ছিল। নেতাদের মনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি এসেছে। কারন সবাই দেখেও না দেখার ভান করে সবকিছুই করে যাচ্ছিল। বুঝেও না বুঝার ভান করে এগুচ্ছিল। কিন্তু কি কারো কিছু করার ছিল না? হয়ত ছিল কিন্তু কেউ গায়ে মাখতে চাইনি। সবাই মনে করছিল যা হওয়ার হউক, গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল ভাব চলছিল সর্বত্রই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে আজ কেউ এমপি, কেউবা মন্ত্রী, কেউবা সম্মানীত স্থানে অধিষ্ঠিত। কিন্তু আপনারা কি ভেবে দেখেছেন শেখ হাসিনা বীহিন দলে এবং সরকারে আপনাদের অবস্থান কি? শেখ হাসিনা বিহীন আওয়ামী লিগের অবস্থান কি? কান্ডারী বিহীন নৌকার যেমন অবস্থা হয় মধ্য সাগরে ঠিক তেমনী অবস্থার মুখোমুখি না হওয়ার জন্য কুসিক নির্বাচন ছিল ৯ নম্বর বিপদ সংকেত। এই সংকেতকে সামনে নিয়ে এগিয়ে আসুন আগামীর ত্রীধা বিভক্ত আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে এবং নিজে বাঁচতে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদের ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ের অর্জীত ষড়ঋতুর দেশ আমাদের প্রীয় বাংলাদেশকে ৬০ বছর পিছনের দিকে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে এখনই উপযুক্ত সময়। আসুন স্বাধীনতার পক্ষের ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক হিসেবে উপযুক্ত কাজে নেমে পড়ি। নতুবা আবার আমাদের হাতে পরাধীনতার গ্লানী শিকল পড়াবে।
আওয়ামী লীগ এখন নিরবে নিবৃত্তে কাঁদছে কারণ তারা না পাচ্ছে সরকারের মূল্যায়ন না পাচ্ছে লোকাল নেতাদের সম্মান ও যোগ্য স্থান। কিন্তু এই আওয়ামী লীগই ভোটার টানতে পারঙ্গম। এদের পদচারনাই দলের বিপদ মুক্ত হয়। এদের শক্ত অবস্থানেই দল ক্ষমতায় আসে। এই লোকগুলোই দলের প্রাণ ভোমরা; এরাই নেতা ও নেত্রী এমনকি দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিশ্বস্তভাবে এরা কাজ করে যায় না পাওয়ার আশায়। এই লোকগুলোকে যদি একটু সম্মান ও যোগ্য স্থানে বসানো হয় তাহলে দলের যেমন মঙ্গল হয় তেমনি দেশেরও উন্নতি হয়। পাশাপাশি নেতৃত্বে একটি শৃঙ্খলা ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির চর্চার ব্যবহার হয়।
সাবেক এমপি লীগ ( যারা নমিনেশন পাননি)। এই এমপি লীগ এর কাজ হলো দলের ক্ষতি করা। বর্তমান সাংসদ সদস্য বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো এবং জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যকলাপ পরিচালিত করে যাওয়া। দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে রাখা। বিশেষ করে বর্তমান এমপি বা মন্ত্রীমহোদয়ের ক্ষতির লক্ষ্যে কাজ করা। জনমত গড়ে তোলা এবং সর্বপরী সরকার ও উন্নয়ন লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত করা এমনকি সরকারকে ক্ষমতাচুত্য করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া।
এপি এস লীগ। এই লিগ হলো সমস্ত ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে শর খাওয়ার পায়তারায় লিপ্ত। অনৈতিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত করা। অর্থের মোহে অন্ধ হয়ে নীতি বিসর্জন দিয়ে এমনকি অন্যায়ক সম্মান দিয়ে যাবতীয় কাজ  করে যাচ্ছে। এদের কর্মকান্ডে দলের ত্যাগী নেতারা হতাশ এবং লজ্জিত। এপিএস লীগের দাপটে মুল নেতা বা কর্মীদের অমুল্যায়ন এবং অবমাননাকর কর্মকান্ডে দলের গতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। উন্নয়ন এর সুফল এর বিপরীতে কুফলই বয়ে আনছে শতকরা ৬০ভাগ। এত উন্নয়ন এবং সফলতা এখন পর্যবসীত হচ্ছে গলার কাটা হিসেবে। স্থানীয় মন্ত্রী বা এমপি মহোদয়গণ এপিএসের প্ররোচনায় বা ভুল বুঝানোতে একমত হয়ে এই দলীয় আসল কর্মীদের অমূল্যায়ন বা অমর্যাদা করে দলের বৃহৎ ক্ষতি সাধন করছেন। কোন কোন আত্মীয় বা পরিচিত জনের জন্যও দলে ক্ষতি হয়। দলীয় এমপি বা মন্ত্রী হয়তো জানেনই না যে এইরকম ঘটনা ঘটছে বা দল পিছিয়ে যাচ্ছে।
এই ত্রিধা বিভক্তির মূলে রয়েছে লোভ এবং ক্ষমতা। এই ক্ষমতার মোহে লোভে পরাভূত হয়ে আজ আগামীর গনজোয়ারে আসছে বিশাল প্রতিবন্ধকতা। সাবেক এমপি লীগ + এপিএস লীগ + আওয়ামী লীগ= বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই তিনের সংমিশ্রনের ফলে যে শক্তি সঞ্চিত হবে তা পর্যবসীত হবে আগামী দিনের বিজয়ী বিরের আনন্দের ঝর্ণাধারায়। এখন এই তিনকে কিভাবে এক করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। সকলকে একসঙ্গে বসে কাজ করতে হবে। দলের প্রতীক, নেত্রী এবং আগামীর বাংলাদেশের উন্নয়ন এইগুলো মাথায় রেখে ব্যক্তিস্বার্থ্য, লোভ-লালসা বিসর্জন দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নতুব সম্ভব নয়।
আসুন তিন : এক ফর্মূলায় এগিয়ে যায়। যেমন প্রথমে গুরুত্ব দিতে হবে আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদেরকে যারা ক্ষমতার বাইরে এবং ভোট ও জনমত সৃষ্টির ভিতরে। তাদেরকে আগে নিয়ে এসে সম্মান ও যোগ্য স্থানে অধিষ্ঠিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত সাবেক এমপি লীগের লোকদেরকে সম্মান ও উপযুক্ত স্থানে পদায়ন করে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত এপিএস গ্রুপকে ক্ষমতাহীন করে সাধারণের সঙ্গে মিলিয়ে কম গুরুত্ব দিয়ে কাজ পরিচালনা করতে হবে। প্রথম আওয়ামী লীগ+সাবেক এমপি লীগ + এপিএস লীগ। এই তিনের সমন্বয়ে কাজ করে এগিয়ে গেলে বিজয় সুনিশ্চিত। এই তিনের সমন্বয় ঘটানোর জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা এবং দেশপ্রেম ও দলপ্রীতি এমনকি নেত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধ ও ভালবাসা। মন্ত্রী মহোদয় ও এম পি মহোদয় আপনাদেরকে সবিনয় আবেদন করছি এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করবেন এবং আগামী নির্বাচনে বিজয়ী বীরের মতো জাতির সামনে উপস্থিত হবেন এবং দল ও দেশকে সম্মানসহ আগামী দিনের উন্নয়ন গতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন। বিশ্লেষণাত্মক লিখা লিখতে শেষ হবেনা আমার জীবদ্দশায়ও তাই প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা অনুধাবন করুন এবং এগিয়ে যান আগামীর সুনিশ্চিত বিজয়ের তরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.