বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্কই জনকল্যাণের সুযোগ সৃষ্টি করেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এস কে কামাল॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে দারিদ্র্যমুক্ত করে জনগণের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলোর পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুতারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সবসময়ই জনকল্যাণের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে… এখানে কোন দেশটি বড় আর কোনটি ছোট -এটা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা একটি সার্বভৌম দেশ। কাজেই আমরা সবসময় একে অপরকে সম্মান করি এবং বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেই, কারণ বন্ধুত্ব ছাড়া বিবাদপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলে কিছুই অর্জন সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এখানে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনার জবাবে একথা বলেন। ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং তাঁর নেতৃত্বে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি’র উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান এল কে আদভানী এবং ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক নির্মলা সীতারমন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, দুই দেশের যে কমন জলজসম্পদ রয়েছে সেগুলোকে একীভূতভাবে ব্যবহার করা উচিত এবং দু’দেশের মধ্যে কমন নদীগুলোর পানি বন্টনের ওপরই আমাদের উভয়ের ভবিষ্যত নির্ভর করছে।
তিস্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরো একবার এই ইস্যু সমাধানে তাঁর সরকারের দৃঢ় আকাক্ষার কথা পুনর্ব্যক্ত করে শীঘ্রই এটি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন। আর এটি হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় প্রচন্ড করতালির মধ্যে তিস্তা প্রসঙ্গে তাঁর শংকার কথা ব্যক্ত করে বলেন, দিদি মনি (মমতা ব্যানার্জি) তিস্তা ইস্যুতে আর কি করবেন তিনিই জানেন এবং আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর তিনি আরো নতুন কিছু বিষয় আলোচনায় এনেছেন। যদিও মোদি জি (নরেন্দ্র মোদী) আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আমরা এখানে আছি এবং দেখছি তিনি কি করেন।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ প্রদানে রাজী হওয়ার জন্য মমতা ব্যানার্জিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা পানির জন্য দাবি করে বিদ্যুৎ পেয়েছি। যা হোক, কিছুতো একটা পাওয়া হল। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সেই দেশ, যারা আমাদের স্বাধীনতায় সহযোগিতা করেছে। আমাদের যে কোন দুর্দিনে সবসময় আমাদের পাশে থেকেছে। আমরা একই মর্যাদা এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধণে আবদ্ধ হয়ে আমাদের জনগণের, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। দারিদ্র্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সাধারণ শক্র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ভিত্তির ওপর এবং একই ধরনের সাধারণ আকাংক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত। যার মূলে রয়েছে স্বাধীনতার সামগ্রিক মূল্যবোধ, গণতন্ত্র এবং মৌলিক মানবাধিকার ও আইনের শাসন।
তিনি বলেন, এই সম্পর্কের ভিত্তি রচনা হয় বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রারম্ভে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। এরপর থেকে যতই দিন গেছে এই সম্পর্ক আরো গতিশীল, পরিপূর্ণ এবং কৌশলগত পূর্ণতা লাভ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.