নববর্ষের আলিঙ্গণে রাঙ্গিয়ে যাক আমাদের জীবন

প্রকৃতির নিয়মে প্রতিবারের মতো এবারেও আমাদের জীবনে আসলো পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ মানে, রংচটা আনন্দ, উপলব্দি, বিশ্লেষণ, হিসেব-নিকেশ, রসনা বিলাসের নিসর্গ, কৃষ্টি ও কালচারের মিলন মেলা, সার্বজনীন আনন্দ উপভোগের উপলক্ষ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার জাগরণ, সকল মত ও পথের একত্রে চলার সর্বঙ্গীন আয়োজন, সর্বোপরি বাঙালীর বাঙালীত্ব ধরে অগ্রসর হওয়ার একটি দিকদর্শন মাত্র। আমরা জাতি হিসেবে এই সুন্দর মুহুত্তগুলো উপভোগ এবং কিছু কষ্টের মধ্যেদিয়ে অতিক্রম করে এসেছি প্রতিবারের ন্যায় এবারও। আমাদের এই মহা-মিলন মেলায় আগে ছিলনা কোন উঁচু নিচু ভেদাভেদ কিন্তু এখন কালের পরিক্রমায় যুক্ত হয়েছে উঁচু ও নিচু ভেদাভেদ। যা পাহাড়সম বিস্তর মরুভুমির ন্যায় খুঁটিগেঢ়ে বসতে চাচ্চে আমাদের অমলিন এই নিসর্গের মাঝে। যতই দিন যাচ্ছে ততই দিনটি পর্যবসিত হচ্ছে প্রাচ্যের ছোয়ায় এবং অর্থ ও বির্ত্তের মহড়ায়, ব্যবসায়ী লালসায়। এই লালসার স্বীকারে হারিয়ে যেতে পারে আমাদের প্রকৃত বর্ষবরণ  ও এর তাৎপর্য।
এবারের বর্ষবরণে ছিল পুলিশ এর বিশেষ নজরকারা ভালবাসা। যদিও সড়কের মুখ বন্ধকরে একটু বেকায়দায় ফেলা হয়েছিল কিন্তু তাদের আপ্যায়ন ও ব্যবহারে ছিল মুগ্ধতা। তাদের জনবান্দব সেবায় সেই সেবকের ভুমিকা এবং প্রকৃত সেবার মহিমা। সাধুবাদ জানাই দুরদর্শী সরকার এবং এর সংশ্লিষ্ট সকলকে। সুন্দর মুহুত্বকে নির্ভেজাল এবং নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় দেশবাসীকে ঐকের আলিঙ্গনে আবদ্ধ করার জন্য। আরেকটি বিষয় শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রশংসা করছি যে, আমাদের দেশের ভিতর আরেকটি শক্তিশালী দেশ হল কেন্টনমেন্ট, যেখানে মানুষের কোন সম্মান নেই, সময়ের মূল্য নেই, এমনকি যে উদ্দেশ্যে কেন্টনমেন্ট ও এর বাহিনী সৃষ্টি সেই মহান মহানুভবতা ভুলে জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া জায়গাগুলোও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে একটু সময় ক্ষেপনের পর সুযোগ ঘটল দুর্ভেদ্য রাস্তাদিয়ে গমনাগমনের। যে বাহিনী বিদেশ গিয়ে মানব সেবায় দেশের সম্মান বৃদ্ধি করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যা দেখে ও শুনে গর্ভে বুক ভরে যায়; আর সেই বাহিনীই কিনা দেশের ভিতর হয়ে উঠে প্রাণহীণ এক অদ্ভুদ আচরণের স্বাক্ষী বহনকারী ভীনগ্রহের কোন ক্ষমতাধর মানবীয় গুনাবলীর বাইরের জীব হিসেবে। আমার এই লিখা কাউকে ক্ষেয় বা কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং সময় থাকতে দেশের মানুষের ভালবাসার সঙ্গে নিজেদেরকে জড়িয়ে নিন এবং আগামীতে আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধিতে সকলকে সহযোগীতা করুন। এই দেশ একটি এবং অখন্ড বাংলাদেশ। এই দেশের ভিতরে আমরা সবাই এক এবং অভিন্ন। এই অভিন্নতা অক্ষুন্ন রাখুন এবং সকলের সঙ্গে সহমত পোষণ করে নাগরিক অধিকার ভোগ করুন। আমরা সবাই ভাই ভাই এবং আপনারা আমাদেরই কোন মা-বাবার সন্তান। এটা ভুলে গেলে চলবে না। এটাই আমার এবং আপনার মূল। এই মূলে আঘাত বা শিকড়কে ভুলে গেলেই আমাদের অস্তিত্বের বিলীন হয়ে যায়। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর চেকপোষ্ট বসিয়ে লোক ও যান চলাচলের ব্যবস্থা উন্নত করুন এবং জ্যাম এমনকি গাড়ি ঢুকতে না দেয়া থেকে বিরত থাকা আমাদের আগামীর জন্য মঙ্গলই বয়ে আনবে বৈকি। আরেকটি বিষয় সদয় দৃষ্টির জন্য বলতে হচ্ছে ষ্টিকার এর টাকার ক্ষেত্রে বৈষম্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে এমনকি ষ্টিকার চাহিদা মাফিক না পাওয়া একটি বিরম্বনার সামিল বলে মনে হচ্ছে। উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি ভেবে দেখলে আগামী দিনের সুসম্পর্কে আরো গতি এবং ভার্তৃত্বের বন্দন মজবুত এমনকি শ্রদ্ধার জায়গা মসৃণ ও উন্নতির বিস্তৃতি ঘটবে।
পহেলা বৈশাখ পালনে যে রঙ্গিনতা বা বাহ্যিকতা ফুটে উঠেছে তা থেকে এখনই আমাদেরকে বের হতে হবে। নতুবা এর মহাত্ব আর আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে বলে মনে হয় না। এই বৈশাখতো কোন মজা বা বাজ্যিক আবরণের মধ্যেই সিমাবদ্ধ নয়, বরং আত্মিক অনুশোচনা ও জাগরণ এমনকি নতুন উদ্যোমে আগামীর পথা চলায় নির্মলতা বজায় রেখে এগিয়ে যাওয়াই এর মূল লক্ষ্য। আসুন লক্ষ্য স্থির করে পাপ-পঙ্কিলতা ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করি এবং নতুন এক পবিত্র জীবনের স্বাধ আহ্লাদ নির্ভর প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাই। দেশমার্তৃকার তরে নিজেকে সমর্পন করি যেন আগামীর সম্বৃদ্ধি ও স্থীতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মানে নিজেকে শরীক করতে পারি।
সন্ত্রাস, জঙ্গি, ভেজাল, নকল প্রতিরোধ ও এর প্রতিরোধকল্পে সতেচনতা সৃষ্টিতে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি সেই দিকে সচেষ্ট থেকে আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়দিপ্ত অঙ্গিকারে আবদ্ধ হয়। দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার হই এবং নিজেকে দূর্নীতির বেড়াজাল থেকে মুক্ত রাখার শপথে বলিয়ান হই। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয় এবং এর বাস্তবায়নে কাজ করি। প্রতিটি পদক্ষেপে এই অঙ্গিকারের বাস্তবায়ন ঘটাতে সচেষ্ঠ থাকি। উন্নয়ন এর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে এগিয়ে যাই নতুন আঙ্গিকে নবরূপে। হিংসা বিদ্ধেষ, স্বার্থের দ্বন্ধের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে ভালবাসা এবং ক্ষমার ব্যবহার চর্চার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যায়। উদার মনোভাবে নতুন মাত্রা যোগ করে এই বৈশাখী সাজকে, আনন্দকে, উদ্ধিপনাকে, স্বপ্নকে এমনকি ত্যাগকে ধরে রেখে আগামী একটি বছর নিজের জীবনের পূর্ণতা অর্জন করি। তাহলেই বদলে যাবে আমাদের দেশ, থাকবে না কোন সন্ত্রাস, জঙ্গি, ভেজাল, নলক, দূর্নীতি এবং নৈরাজ্য মূলক কর্মকান্ড। আমি আপনি সকলে মিলে এগিয়ে গেলে হয়তো আগামী ২১ বা ৪১ প্রয়োজন হবে না তার আগেই এই দেশ পৌঁছে যাবে তার উদীয়মান কাঙ্খিত লক্ষ্যে। বাঙ্গালীরা নেতৃত্ব দেবে বহিবিশ্বকে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে আমাদেরকে অনুসরণ করবে বিশ্ববাসী। আসুন সেই প্রত্যাশা পূরণে আমরাই পারি, আমরাই পারব এবং করে দেখাব প্রত্যয়ে এগিয়ে যাই। জয় হউক আমাদের ঐক্যের এবং ভাতৃত্বের। জয় বাংলা, বাংলাদেশ চিরজীবি হউক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.