মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে সরকারের আন্তরিকতা

মাদ্রাসা শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যার মাধ্যমে খোদায়ী মূল্যবোধ এবং জাগতিক জীবনে লোভ-লালসার উদ্ধে থেকে নির্ভেজাল জীবন-যাপন করার যাবতীয় শিক্ষা লাভ করা যায়। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সু-সম্পর্ক রেখে শান্তিপূর্ণ জীবন ধারণের এবং পরকালীন কল্যাণের নিমিত্তে সুদ্ধ ও সহীহ্ জীবন উপভোগ করার একটি জননন্দিত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও বটে। কিন্তু এই শিক্ষাকে নিয়ে চলেছে ব্যবসা, রাজনীতি এবং কোমলমতি ও সরলমতা ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অপকৌশলে ব্যবহারের হাতিয়ার স্বরূপ ব্যবহার করছে দিনকি দিন। এমতাবস্তা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার আন্তরিকতার সহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কারণ এই আলেমদ্বয় হবে স্বচ্ছ-সুন্দর এবং সমাজের সুম্মানীত শ্রেণীর একজন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিভিন্ন মিথ্যা এবং অপসংস্কৃতি ও অপরাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটচালের হাতিয়ারে পরিণত হয়ে সেই সম্মান, গ্রহণযোগ্যতা এমনকি কর্মসংস্থানের পথটুকুও আজ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বড় দু:খের সহিত বলতে হচ্ছে শৈশবে যে ওস্তাদ বা হুজুর আমরা দেখেছি এবং শিখেছি তার অভাব এখন উপলব্দি করছি। কারন: সততা, আন্তরিকতা, ভালবাসা, খোদার প্রতি ভীতি এবং খোদায়ী বা আখেরাতের শিক্ষার গভীরতা এখন নেই বললেই চলে। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশী প্রতিয়মান হয় রাজনীতি বা অর্থনীতির অথবা পুজিবাদী নীতির চর্চার। আর এই দেখে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এই সকল সু-শিক্ষিত আলেমদের স্ব-শিক্ষিত আচরণ থেকে।
পুজিবাদি সমাজের লোভী ও ব্যবসায়ী এবং অন্তরে সৃষ্টিকর্তাতে বিমুখ মানুষজন বাজ্যিক আবরণে লোক দেখানো ফরহেজগারী হাসিল বা কায়েমের লক্ষ্যে মৌসুমী দ্বীনি শিক্ষা বা ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনে ব্যস্ত এবং সরলমনা মানুষদের চোখে পর্দাফেলে নিজেদের কামিয়ামী হাছিল করে যাচ্ছে। এই কামীয়াবীতে আমাদের আলেম সমাজের মুখ্য ভুমিকাও অনেকটা দায়ী খোদা বিরোধী বা মূল্যবোধ বিবর্জীত কাজের প্রসারের ক্ষেত্রে। সেই নির্লোভ এবং অর্থ-বিত্তহীন জৌলুসবিহীন জীবনে ফিরে গিয়ে যদি সঠিক দ্বিনী শিক্ষায় মানুষকে আবারো সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে পুণ: একত্রিকরণ করা যায় তাদের সমাজে ফিরে আসবে সুশৃঙ্খলা এবং নৈস্বর্গীক ঐশ্বরিক বা খোদায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা।  আমাদের সকল ধর্মের শিক্ষা ব্যবস্থাটা বহুধা বিভক্ত এবং এই বিভক্তির কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে ফেতনা-ফাসাদ। আজকের আলোচনায় আমি শুধু আমাদের মুসলিম ধর্মের কতিপয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করব। (১) এখানে হেফজ্ খানা বা কারীয়ানা নামে প্রচলিত শিক্ষায় শুধু কোরআন শরীফ সহীহ্ভাবে মুখস্ত করানো হয়। বাংলা, ইংরেজী এবং আরবীর আর কোন শিক্ষা এখানে নেই। তাই কোরআনে হাফেজদ্বয় শুধু কোরআন শরীফ ত্রিশ পাশা মুখস্ত দিয়েই জীবন যাপন করেন আর যা স্বআগ্রহে অর্জন করে তা ব্যবহার করে দুনিয়াবী জীবন পরিচালনা করেন। যারা কোরআন শরীফ পুরোটা মুখস্ত করতে পারেনি, তাদেরকে বলা হয় ক্বারী। তারা সহীহ্ বা শুদ্বস্বরে কোরআন পাঠ করতে পারেন। তার সংখ্যাও সমাজে অনেক।
(২) আরেকটি শিক্ষা হলো হারেজি বা ক্বওমী নামে পরিচিত। তারা শুধু আরবী, ফার্সী, উর্দূ ভাষায় কোরআন, হাদিছ এবং বিভিন্ন কিতাব পাঠ করে অর্থসহ বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখেন। এবং এই শিক্ষার মাধ্যমে কোরআনের বিশদ জানা ও বোঝা এবং সেই আলোক পথ চলার মাসলা- মাসায়েল বা ফতোয়া দেয়ার অধিকার এবং ক্ষমতা রাখেন। মাঝে মাঝে দিয়েও থাকে। এই ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা যদি আরবী, উর্দূ ও ফার্সীর সঙ্গে সঙ্গে বাংলা, অংক এবং ইংরেজীটাও আয়ত্ব করত তাহলে তাদেরকে মডারেটর এমনকি আরো উচ্চ পর্যায়ের অধিকারী হয়ে সমাজ, রাষ্ট্রে এমনকি পরিবারেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারতো।
(৩) আরেকটি শ্রেণী আলীয়া মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত। যেদি আমাদের আধুনিক বাংলা এবং ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের সমন্বয়েই গঠিত। ঐখানে শুধু পার্থক্য হল কিছু আরবী, হাদিছ এবং ইসলামী ইতিহাস বিষয়ক গুরুত্বসহকারে পড়ানো হয়ে থাকে। যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়। সেই আলোকে এই মাধ্যম থেকে যারা পাস করেন তারা সকল চাকুরীর ক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন এবং সমাজে একটি বিশাল ভুমিকাও রাখেন।
(১-১) এই শ্রেণীগুলোর বাইরে শুধু এতিমখানা নামক আরেকটি ধর্মীয় শিক্ষার স্তর বা শ্রেণী চালু রয়েছে যা এক নাম্বারের সঙ্গে খুবখু মিল। ঐখানে প্রথমটির মতো শুধু কোরআন মুখস্ত বা শুদ্ধস্বরে পাঠ করানো শিখানো হয়। এখানেও যুযোপযোগী পদক্ষেপ আশু দরকার।
আমরা বলার বা লিখার কোন যুক্তিকতা নেই কারণ এই দেশে সকলেই আমার চেয়ে অনেক অনেক জ্ঞানী এবং সম্মানীত; সুতরাং সেই জ্ঞানীজন এবং সম্মানীত মানুষজনই চিন্তা করে পরিকল্পনা মাফিক এগুবে এটাই প্রত্যাশিত এবং সকলের কামনা। তবে মাঝে মাঝে কিছু লিখলে; যদি কোন কাজে লাগতে পারে এই ভেবে আমার লিখার অবতারনা। আলীয়া মাদ্রাসা শ্রেণীর যেহেতু সরকারী স্বৃকৃতি রয়েছে তেমনি করে ক্বওমী মাদ্রাসা শ্রেণীর স্বৃকৃতির লক্ষ্যে সরকার আন্তরিকভাবে গত ৭ বছর যাবত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্বওমীর জন্য বোর্ড গঠন করে সিলেবাসে পরিবর্তন করে যুগোপোযোগী শিক্ষার সঙ্গে মিল রেখে আধুনিক এবং উন্নতর শ্রেণীর আলেম বা দ্বীনি শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সুযোগ করে দিয়েছে। এটা যদিও মানতে আলেম শ্রেনী নারাজ। কিন্তু অগ্রসরমান পৃথিবী এই শিক্ষাকে মেনে নিয়ে সরকারের পরিকল্পনায় অগ্রসর হয়ে নিজেদেরকে উঁচু মাত্রায় দ্বার করাতে কেন ঐ কতিপয় বা গুটিকতেক মানুষের অনিহা তা সাধারণ মানুষ কিভাবে গ্রহণ করছে তা ভেবে দেখার বিষয়। তবে বিশ্বের এই অগ্রসরতাই নিজেদেরকে ভুল বা মিথ্যা খোঁড়া যুক্তির উপর দ্বার করিয়ে না রেখে এগিয়ে আসুন প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে নিজেদেরকে এমনকি আগামী প্রজন্মকে যোগ্য হিসেবে দ্বাঁড় করাতে।
সরকারের সর্বশেষ সংযুক্তি হলো ক্বওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সার্টিফিকেট কে মার্ষ্টাস এর সমমর্যাদা দেয়া। এটি একটি উদার এবং যুগান্তকারী সাহসী সিদ্ধান্তও বটে। এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলছি, সরকার প্রধানের আন্তরিকতা এবং যুগোপযোগী মডারেট ভালবাসা শুধু গ্রহণই নয় বরং আরো কার্যকরি নতুন কোন দিগন্তের উন্মোচন করুন। যাতে আগামী দিনে আপরা যোগ্য এবং দেশ গঠনে, উন্নয়ন গতিতে ভুমিকা রেখে সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরো গতিশীল প্রসারতা আনয়নে সহায়তা করুন। নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন করে ইতিবাচক মনোভাব জাগ্রত করুন।
ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি মার্ষ্টস এর ঘোষনার পর বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাব দেয়ার ইচ্ছা আমার নেই তেমনি সরকারের ও নেই। কারন প্রতিটি ভাল কাজের সমালোচনা আমাদের দেশে চিরায়ত শ্বাসত নিয়মই বলা চলে। এই নেতিবাচক দিকের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন। ইতবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং উৎসাহ-উদ্দিপনা যোগানো এমনকি আগামী দিনে নতুন আরো সৃজনশীল কর্মকান্ড চালানোর রাস্তা দেখানো বা বাতলিয়ে দেওয়াই ছিল আমাদের সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাজ কিন্তু তার বিপরীতে যাওয়াই যেন এখন সংস্কৃতিতে পরিণত করতে বা জোড় করে ধরে রাখতে চাইছে। আমি বলতে চাই এই সংস্কৃতির অবসান হয়েছে এবং আমাদেরকে নতুন সংস্কৃতিতে এগিয়ে এসে নিজেদেরকে নতুনভাবে নিয়োজিত করতে হবে নতুন এক ইতিবাচক, পরামর্শক, গঠনমূলক এবং বস্তুনিষ্ঠতার দিকে এগিয়ে যাওয়া লক্ষ্যে।
তাই আসুন আমরা সকলে মিলে একটি ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন দেশ গঠনে একত্রে সেই স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জ্বিবীত হয়ে এগিয়ে যাই। যেন আগামীতে আমাদের ভ্রাতৃত্বের মিলবন্ধন বা সেতুবন্ধন আরো মজবুত হয় এমনকি পৃথিবীর বুকে আরো সম্বৃদ্ধি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। পরিশেষে আরো একটি বিষয় দৃষ্টি দিয়ে যেতে চাই… আমাদের এতিমখানা বা হাফেজি বা হেফ্জখানার প্রতি। ঐ কেন্দ্রে যদি আরবীর ন্যায় বাংলা এবং ইংরেজি ও অংক পাঠ দানের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বাস্তবায়ন করা হয়; তাহলে ঐ  সাধারণ জ্ঞান বা বেসিক জ্ঞান আহরণের ব্যবস্থাটুকু বাধ্যতামূলকভাবে করানোর ফলে সমাজের উন্নয়ন গতি এবং শান্তি ও স্থিতিশিলতার ভিত্তি আরো মজবুত হবে বৈকি। ঐ হাফেজদ্বয় এবং ক্বারীদ্বয় ও পাবে গতিশীল নতুন এক উদ্যমে পথ চলার নব দিগন্ত। এই অল্প কথার বেড়াজাল থেকে এর গভীরতা ও প্রসারতার ব্যাপ্তি জড়িয়ে যাক সমাজের প্রতিটি স্তরে সেই কামনা করে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে এই পর্ব শেষ এবং আগামী পর্বের অপেক্ষায় থেকে বিদায়…।

Leave a Reply

Your email address will not be published.