খোঁত ধরা কি বাঙ্গালীর স্বভাব!

ইদানিং একটি বিষয় চোখে পড়ার এমনকি দৃষ্টিগোচর হওয়ার অনেক কারণ আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব আঙ্গিনায় বিরাজমান। বহমান এই বিষয়টি আসলে আদতে কি আমাদের মধ্যে উত্তরাধীকারী সূত্রে পাওয়া ছিল নাকি ধার করে এনে আমাদের সংস্কৃতিতে জোর করে বসানো হয়েছে তা একটু ভেবে দেখবেন কি? বুদ্ধিমান জাতি, খ্যাতির শিখড়ে অবস্থান করে জ্ঞান- গরিমায় উচ্ছাসন নিয়ে পান্ডিত্ব্যের মহড়া দিয়ে যদি আমরা এই বিষয়টিকে খুঁজে বা অনুসন্ধান করে বের করতে পারি এবং আমাদের দৈনন্দিন চর্চা থেকে বাদ দিতে পারি তাহলে আমরা আরো অনেক উঁচু আসনে আসীন হতে পারবো। আমাদের অধীকারের সীমা এখন আকাশচুম্বী অবস্থানে অবস্থিত। তাই ঐখান থেকে আর নীচে নামিয়ে না আনার জন্য সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ জ্ঞাপন করে সবিনয় আবেদন ও নিবেদন রাখছি। অন্যের দোষ ধরা বা খোঁত ধরা স্বভাব থেকে বের হয়ে আসার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ ঐ সকল ধরাধারি করে বাংলাদেশ জন্ম নেয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত যা হয়েছে তার মধ্য থেকে কোন অর্জন বা দিকনির্দেশনা এমনকি কল্যাণকর কোন শুভ ফল বয়ে আনতে পারেনি। সুতরাং যা অর্জিত হয়েছে তা, হতাশার, দুঃখের, কলঙ্কের এমনকি জাতিকে টুকরা টুকরা করার ও সমূলে মুলোৎপাটন করে নি:শেষ করে ফেলার যাবতীয় কর্মকান্ড পরিলক্ষিত এমনকি দৃশ্যমান ইতিহাস হিসেবে বর্তমান ও বিরাজমান।
আমাদের দেশে সমাজের প্রতিটি স্তরেই এই খোঁত ধরা স্বভাবটি বিরাজমান এবং চর্চায় আগ্রগামী। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো এই খোঁত ধরা পরিহার করে যদি আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা বা ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করলে আগমী দিনের বাংলাদেশ হবে এশিয়ান টাইগার বা সকল দিক থেকে কিং সমতুল্য। আমি বিশেষ করে বোঝাতে চাইছি যেন আমরা নিজেদেরকে সম্বৃদ্ধ করতে এমনকি সামগ্রীক কল্যানের লক্ষ্যে একযোগে বিশ্বাস ও ভালবাসা এবং ক্ষমার মনোভাব নিয়ে কাজ করলে আমাদের উন্নয়ন গতি ও সম্বৃদ্ধিকে ঠেকায় কে? একজন আরেক জনের খোঁত না ধরে যদি নিজের বা আমার খোঁত কি তা খোজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় তাহলেই আমাদের সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারবো। সমস্যা সমাধানের জন্য বাইরের কারোর স্মরণাপন্ন হতে হবে না বা কারো কাছে ধর্না  দিতে হবে না।
এই কয়েকদিন ধরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে মায়া কান্না ভেসে আসছে ভয়াল জলোচ্ছাসের ন্যায়। জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি বন্যা, খড়া, প্লাবন এমনকি ঘুর্ণীঝর, সাইক্লোনসহ নানাহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ। আর এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা হয়েছে যার যার অবস্থান থেকেই কিন্তু। বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে বা হাওর অঞ্চলে বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা মোকাবেলার জন্য ক্ষতিগ্রস্তরাই প্রথমে এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক এবং গিয়েছেও। কিন্তু মিডিয়ায়, পত্র-পত্রিকার এমনকি সোসাল মিডিয়ায় সস্তা প্রচারণা ও মায়াকান্না ভেসে উঠছে আর সবচেয়ে আগে যে বিষয়টি চোখে পড়ে তা হলো ঐ বিষাক্ত খোঁত ধরা। সরকার এটা করেনি ওটা করেনি এমনকি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত। যত না দু:খ আমার তারচেয়ে বেশী না জানা ঐ মানুষগুলোর। মার চেয়ে মাসির দরদ বেশী ভাব সচেতন মানুষজন বা স্বঘোষিত বিবেকবান মানুষজন একবারও কি নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করেছেন আপনি ঐ মানুষগুলোর জন্য কি করেছেন? আপনার কি কোন দায়িত্ব নেই ঐ আপনার ভাষায় অসহায় ও নিরূপায় মানুষগুলোর প্রতি। যদি থাকে তাহলে কেন এগিয়ে যাচ্ছেন না ঐ মানুষদের পাশে। আমরা যদি সকলেই যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে যায় তাহলেতো ঐ দুর্যোগ আর দুর্যোগ থাকে না। বরং শোককে শক্তিতে পরিণত করার সকল উপাদান ও উপকরণই আমাদের মজুত আছে। শুধু ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল এবং সৎসাহস সর্বোপরি সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই সময়ের ব্যাপার বা সদিচ্ছার ও চর্চার বিষয়। যদি আমরা নেতিবাচক ঐ গুনটি (খোঁত) পরিহার করি এবং এ খোঁতে মজে না থেকে দেশ আমাদেরকে যে দায়িত্বটুকু দিয়েছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি তাহলে দশে মিলে করি কাজ হারি যেতে নাহি লাজ, দশের লাঠি একের বোঝা সত্যে পরিণত হবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সমস্ত পৃথিবীর সকল কৃর্তিকে টপকিয়ে বা ছাড়িয়ে।
প্রত্যেকটি মানুষেরই দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। সরকারের শুধু একার দায়িত্ব নয়। তবে যেহেতু সরকার সেবা করার অঙ্গিকার নিয়ে বা ব্রতী নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন সেহেতু আমাদের সাধ্য ও সামথ্যের সিমাবদ্ধতার গন্ডি পেড়িয়ে সরকারের বিপুল সমারোহ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া বা যেতে পারলে আরো মজবুত বৃত্তির মনোবল এবং সমাধানের গতি বৃদ্ধি পাবে। বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে বের হয়ে স্থিতিশীলতার মজবুর ভিত্তির উপর দিয়ে এগিয়ে যেতে পারব। সরকার ও সরকারের সঙ্গে যুক্ত সকল সংস্থাগুলির সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করে একসঙ্গে কাজকে এগিয়ে নিয়ে একটি বাস্তবমুখী দৃষ্টান্ত উন্মোচন করা যাবে।  বিশেষ করে সাধারণ জনগণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সার্বজনীন কাজসমূহ সম্পন্ন করণের লক্ষ্যে আমি, আপনি ও সে তার উপর আবার সরকার স্বয়ং আন্তরিকতার সহিত শক্ত বৃত্তি স্থাপিত হবে যা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করবে এবং শিখবে আগামীর বিশ্ব জনতা।
সরকার এবং জনগণ এক হয়ে উৎপ্রোতভাবে কাজ করলে কোন সমস্যাই সমস্যা নয় তবে সরকারের কিছু লোক এমনকি দলীয় কিছু লোক সর্বক্ষণ বিভিন্ন ধরনের লিখা দিয়ে সাধারণ জনতাকে বিপরীতাক্ষক মনোভাব বা নেতীবাচক মনোভাব নিয়ে পথ চলতে সাহায্য করছে। আসুন আমরা দোষ ধরার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসি। সরকার এটা করেনি উটা করেছে বা অমুক এটা করেনি ওটা করেছে এই মনোভাব পরিবর্তন আশু প্রয়োজন। এখন সময় এসেছে ভাবার আমি কি করেছি। এই বিষয়টি যদি আমরা সকলেই গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করি এবং সেইমত চর্চা ও কাজ করি তাহলে আমাদের জৌলুস এবং সুখ্যাতি আরো বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি স্থিতিশীল হবে আমাদের উন্নয়ন গতি, রাজনীতি এবং অর্থনীতি।
আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল দুর্যোগ মোকাবিলা করি। সন্ত্রাস, জঙ্গি, দুর্নীতি, ভেজাল, ক্ষরা, বন্যাসহ যাবতীয় সাময়ীক এবং দীর্ঘদিনের অবর্জনা দুর করি। আমাদের সকলের সম্মিলনই সরকারের অস্তিত্ব হউক এবং মনোবল বৃদ্ধি পাক আগামীর উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে মর্যাদার উচ্চাসনে তুলে ধরতে পাশাপাশি উন্নত দেশ এর স্বীকৃতি আদায় করে জাতি হিসেবে আমাদেরকে মাথা উঁচু করে পথ চলার অধিকারী করে তুলতে। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই আজ আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল ব্যক্তিস্বার্থের জলাঞ্জিল দিতে হবে; দেশের স্বার্থে জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে এক্যবদ্ধ হয়ে আগামীর সমৃদ্ধ ও উন্নন বাংলাদেশ বিনির্মান করতে হবে। সরকার যে পরিকল্পনা এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার অংশীদার হয়ে নিজেদেরকে ইতিহাসে স্থান করে নিতে হবে। অচিরেই আমাদের সকল অর্জন এবং সম্মান পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে শান্তির স্থিতিশীলতায়।
আসুন আমরা আমাদের ভুলগুলো শুধরে খোঁত না ধরে আগামীর বিশ্ব নেতৃত্ব এবং শান্তির স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যায়। সকলকে ধন্যবাদ এবং সালাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.