নির্বাচনী হাওয়া বইছে, সেই হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কে

আখের॥ আওয়ামী লীগ টানা দুই দফা ক্ষমতায় রয়েছে। ক্ষমতায় থাকলে বিরোধী দলের রাজনীতিকে যেমন নাই করে দেওয়া যায় বা সবখানেই সরকারি দলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়, তেমনি এর অনেক কুফলও ভোগ করতে হয়। দেশ পরিচালনার বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যর্থতা ও অদক্ষতার দায় খুব স্বাভাবিকভাবেই সরকারি দলকে নিতে হয়।
ক্ষমতায় থাকলে দল অজনপ্রিয় হয়। দলীয় নেতা-কর্মীরা বাড়াবাড়ি করেন, নানা অপকর্ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ও সাংসদের ভূমিকায় স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। সরকার যদি আগামী  নির্বাচনকে একটি স্বচ্ছ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মর্যাদা দিতে চায়, তবে সেই নির্বাচনে পরপর দুবার সরকার পরিচালনার পর আওয়ামী লীগ কী নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে?
বিভিন্ন সূত্রে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চমক হবে সম্ভবত প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন। বর্তমানে যাঁরা সাংসদ রয়েছেন বা যাঁরা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান, তাঁদের ব্যাপারে গোয়েন্দা মাধ্যমসহ নানা সূত্রে তথ্য সংগ্রহ করেছে সরকারি দল। বর্তমান সাংসদদের একটি বড় অংশ আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না বলে শোনা যাচ্ছে। দলে এত দিন খুব প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান হিসেবে বিবেচিত ছিলেন কিন্তু স্থানীয় বা জাতীয়ভাবে যাঁদের ভাবমূর্তি খারাপ, তাঁরা এবার মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন। এর বদলে দলের সমর্থক স্বচ্ছ ও ভালো ভাবমূর্তির বেশ কিছু প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী সমঝোতা করতে পারে বাম ও প্রগতিশীল কিছু দলের সঙ্গে, যাতে পরিচিত ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কিছু নেতাকে সংসদে নিয়ে আসা যায়।
রাজনীতির বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলে দেওয়া যায় না। আর বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে আগাম কিছু ধারণা করাও বেশ কঠিন। কারণ, বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে যেসব ধারণা করা হয়, সেই বাস্তবতা পাল্টাতে সময় লাগে না। ফলে দলগুলোর কৌশলও পাল্টে যায়। এখন যে বিএনপি নিজেকে নির্বাচনের জন্য ‘সদাপ্রস্তুত’ বা ৩০০ আসনে ৯০০ প্রার্থী তৈরি বলে আওয়াজ দিয়ে আসছে, শেষ পর্যন্ত দলটি যে নির্বাচনে যাবেই, তার শতভাগ নিশ্চয়তা কি এখনই দেওয়া যায়? আগামী নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপির কোনো উপায় নেই; এমন আত্মবিশ্বাস অনেক আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে আমরা শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু এই ‘আত্মবিশ্বাসই’ কি শেষ কথা? অথবা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের আলোচ্য কৌশল কি দলটি আসলেই নেবে? নাকি নির্বাচনে জেতার জন্য খারাপ ভাবমূর্তির প্রার্থীদেরই শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাতে হবে? তা হাওয়ার বিপরীতে সময় বলে দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.