ভাষায়ও শালিনতা প্রয়োজন

ভাষা বা ব্যবহার এমন একটি ব্যাপার যা মুহুর্তেই পরিবেশ পাল্টে দিতে পারে। কখনো ভালো বা মঙ্গলের ইঙ্গিতবাহি আবার কখনো অমঙ্গলের বার্তাবাহী। আমাদের দেশে বা সমাজে এই ভাষারূপী বাক্যের উত্তপ্ত বিনিময়ে জর্জরিত হয় মানব সভ্যতার বিকাশমান যাত্রা। বিনষ্ট হয় পারিবারিক ও সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় সম্প্রীতি। এই ভাষার ক্ষেত্রে সমঝতা করা আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাসে ও আচরণে এমনকি ব্যবহারে কার্যকর করার এখনই উপযুক্ত সময়। যদি আমরা পরিবর্তন হতে না পারি এমনকি নিজেদেরকে শোধরাতে না পারি তাহলে সামনে আমাদের আরো কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। এখানে আমি কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে আগামীতে আমাদের কি করণীয় তার বিচার এবং কার্যকরী ব্যবহার স্ব স্ব ব্যক্তিতের কাধে ছেড়ে দিয়ে নিস্কৃতি পেতে চাচ্চি।
গত কয়েরকদিন আগে আমাদের আহৎকার জনাব ড. কামাল সাহেব অতি উত্তেজীত হয়ে যে কান্ডটি ঘটিয়েছেন তার ন্যায্য হিস্যা আমাদের জাতি পেতে শুরু করেছে। তাঁরমত একজন মানুষ কিভাবে ঐ ধরনের নোংরা আচরণ আরেকজন সম্মানীত ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রের বিচারালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তির সম্মুখে প্রকাশ্যে উচ্চারণ করেন? এটা আসলে আমাকে লজ্জায় ঘরকুনো হওয়ার দারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। কিভাবে ঐসকল মানুষদের নিয়ে আর গর্ব করব এবং আমাদের সংবিধান প্রনেতা বলে এমনকি বিজ্ঞ আইনজীবি বলে প্রচার করব…. তা ভাবিয়ে তোলেছে। ওনার ঐ জারাজ শব্দটি বা ইংরেজিতে আওড়ানো কথাগুলো সভ্যসমাজের কেউ বলতে পারে বলে মনে করি না। তারপরও বলব মানুষ মাত্রেই ভুল হয় এবং ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। দু:খের বিষয় হলো ঐ ঘটনার জন্য মাননীয় বিচারপতি তার ন্যায় বিচার দেখাতে পারেননি। হয়ত তিনি তাঁর ন্যায় বিচার এবং একটু কঠোরতা অবলম্বন করলে আগামী দিনে কেউ ঐ ধরনের দু:সাহস দেখাতে পারতো না। পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রধান কৌশলী যে ন¤্রতা, ধৈয্য ও সহনশীলতার পরিচয় বহন করেছেন তা আগামী দিনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ যারাই নতুন হিসেবে ঐ দায়িত্বে আসবেন তারা এই দৃষ্টান্তটুকু অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
একটি শিক্ষনীয় বিষয় হলো অনেকে গালাগালি দিবে এবং বেবুজ আচরণ করবে কিন্তু সম্মানী এবং জ্ঞানী সুধিজন সাবলিল ভাষায় ন¤্র জবাবের মাধ্যমে সকল কিছু মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবেন। অথবা নিরব থেকে বা প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য বা কথা না বলে সরাসারি ঐ লোকের সঙ্গে একান্তে আলোচনা করে শুধরিয়ে দিবেন। এটাই হওয়া বাঞ্চনীয়। সম্মান ও শ্রদ্ধা এবং সত্যকে মেনে নেওয়াই হল বাস্তবসম্মত অগ্রগতি ও উন্নতির চাবিকাঠি। এই চাকি কাঠির তরে সকলেই একত্রিত হওয়া সময়ের দাবি। এখানে একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যায় আমাদের বর্তমান আইনমন্ত্রী মহোদয়ের ন¤্র ও পরিশিলীত ভাষায় শালীনতা ও সতর্কতা মূলক ব্যবহারকে। তিনি কাউকে কটুক্তি এমনকি অশ্রদ্ধাও করেননি। কেউ তার বিরুদ্ধে বললে পাল্টা আক্রমনও করেন নি; যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সম্মান, শালিনতা, ধৈর্য্য ও শ্রদ্ধা পোষন করে মিডিয়ায় বলেন, এমনকি কোন কোন সময় অপারগতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এও বলেন মিডিয়ায় নয় বরং ওনার সাথে একান্তে বসেই সবকিছু বলব। এই যে বিনয়ী আচরণ তা আমাদের সকলের মধ্যেই চর্চা করা উচিত। যারা আমরা মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত এবং মিডিয়ার মাধ্যমে সকলকিছু অবগত তারা আসলেই উপরোক্ত বিষয়ের সারমর্মটুকু বুঝতে পারবো। একটু খোলাসা করি, যখন পিয়াস করিম মারা গেলেন তখন অনেকেই অনেক কটুক্তি করেছেন; এমনকি প্রধান বিচারপতিও আকারে ইঙ্গিতে অনেক কটুকথা বলেছেন; যুদ্ধাপরিদের ফাঁসি কার্যকরে অনেক কথাই হয়েছে কিন্তু মন্ত্রীর জবাব উপরোক্তই ছিল। তাই দৃষ্টান্তে আমাদের শিক্ষনীয় বিষয় বিরাজমান।
এই ভাষার সমযত আচরণ বা শালিনতা এখন আমাদের রাজনীতিবিদদের জীবনে প্রায় অনুপস্থিত। বয়োজৈষ্ট বা দলীয় পদে যারা বড় তাদের কথা বা পরামর্শ শোনার সময় এখন আর নেই বললেই চলে। কিন্তু এই দৃষ্টান্তটুকুই আগামীর শৃঙ্খল পথ চলার জীবনে বিশৃঙ্খল এবং উশৃঙ্খল কর্মকান্ডের বাস্তব রূপ লাভের এক দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকেও বের হওয়ার এখনই সময়। সকল দলেই এই লক্ষ্যণ বিরাজমান। তাই এর আশু সমাধান প্রয়োজন। বর্তমান আওয়ামীলীগে যা প্রাকাশ্যেই নেতাদের মধ্যে ভাব বিনিময়, আচরণ, কথা-বার্তায় এমনকি শালিনতায়ও পরিলক্ষিত হচ্ছে। তা যোগের চাহিদানুযায়ী কাম্য নয়। আসুন আমরা ভাষায় সমযত হই, শালীনতাকে ফিরিয়ে আনি, ব্যবহারে ও আচরণে আরো সতর্ক থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করি। বয়োজৈষ্টদের সমালোচনা না করে তাদের পরামর্শ গ্রহন করি। কে কি করেছে সেই দোষ-ত্রুটি না খুঁজে বা বলে নিজের দোষ-ত্রুটি খোজে সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করি। এটাই হবে আমাদের আগামী দিনের চলার পথের পাথেয়।
ঠিক একইভাবে সমাজ, পরিবার, বা কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হবে তাহলেই আমাদের হারানো মূল্যবোধ ফিরে পেয়ে শান্তি ও স্থিতিশীল এবং আনন্দ নির্ভর মর্যাদাশীল এক জাতিতে পরিণত হতে পারব। আমাদের এই অগ্রগতি ঠেকানোর কোন মত, পথ, শক্তি আজও পৃথিবীতে আবিস্কৃত হয়নি। তবে যদি আমরা পরিবর্তন না হয় তাহলে আমরা নিজেরাই এর বাধা হয়ে দাঁড়াবো। তাই সকলের প্রয়োজনে এই “ভাষায়ও শালিনতা” আনয়ন এখন আমাদের যোগোপযোগী সময়ের ডিজিটাল দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.