মা দিবস

তাজুল ইসলাম নয়ন: মা শব্দটির কোন ব্যখ্যা দেয়ার মত কোন অবিধান আজও আবিস্কৃত হয়নি বিশেষ করে আমার কাছে। মা, এই শব্দটি হৃদয়, আত্মা ও মস্তিস্কের গভীর থেকে উৎসরিত হয়ে শব্দের মাধ্যমের বের হয়ে আসে, যা শুনা ও বাঝা এমনকি উপলব্দি করা যায়। এই শব্দের বা ডাকের বর্ণনা দেয়ার মত সাহস বা ক্ষমতা আমারতো নেই-ই এমনকি বিশ্বজগতে কারো আছে বা ছিল কিনা তা আমার সন্দেহের তালিকায় প্রথম। আমি মায়ের বিকল্পও কিছু পাইনি। মা একটি মধুর ডাক এবং এই মধুর ডাকের সঙ্গে এখন অনেক কিছুই যুক্ত হয়েছে এবং হবে এটাই স্বাভাবিক।
আর এই যুক্ততা কিন্তু মায়ের বা মা ডাকের  অথবা শব্দের যে গভীরতা ছিল তাতে ভাগ বসিয়ে দিন দিন হালকা স্তরে নিয়ে এসেছে। তাই মাঝে মাঝে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনারও প্রতিফলন সমাজে বিরাজমান। আজ আমি বলতে পারি মায়ের জন্য কোন দিবস প্রয়োজন জন ছিল না বা আমার কাছে নেই এখনও। বিশেষ করে আমাদের সমাজে একান্নবর্তী পরিবার এবং শেষ সময়ে মা-বাবা তাঁর প্রীয় সন্তানদের সঙ্গে ও সান্নিধ্যে থাকবে এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে শান্তিতে কবরে শায়ীত হয়ে জান্নাতে বসবাস করবেন। এখন দেখছি মায়ের সেই অধিকারকে ছোট করে একটি দিন ঘটা করে স্মরণ বা পালন করে যাচ্ছে আমাদের এই অতি বুদ্ধিমান জাতি/ প্রজন্ম। আর সেই দিবসটি হলো মা দিবস। আমি একজন নিঃবোধ সন্তান এবং ক্ষুদ্র নাগরিক হিসেবে ঐ বুদ্ধিমানদেও এমনকি উঁচু স্তরের মানুষদের মত এই মা দিবসটি গ্রহন করতে পারিনি বা তাদের সঙ্গে নিজেকে একাত্মতা করতে পারিনি। সৃষ্টিশীলতার জন্য এই দিনটিকে এবং এর উদ্ভাবকদেরকে সাধুবাদ জানাই এমনকি শ্রদ্ধা করি কিন্তু মায়ের অধিকারে সময় ও ক্ষণ ঠিক করে দেয়ার জন্য আক্ষেপ করে বলি এই অধমের সামনে যেন চীর অটুট বন্ধন কোট কারণে একটি মুহুত্বের জন্যও বিচ্ছিন্ন বা ছেঁদ না ঘটে। আমার কাছে প্রতিদিন প্রতিটি সময়ই মায়ের কথা, শিক্ষা, আদর্শ এবং দিকনির্দেশনা ও আগলে রাখার মহুর্ত হউক চীর জাগ্রত। আমি কোন বিশেষ দিনে মাকে স্মরণ করতে চাইনা বরং প্রতিটি মুহুত্বই আমার কাছে মায়ের সবকিছুই বিশেষ গুরুত্ববহ। আমি কোন দিবসের জালে মাকে ছোট করতে চাই না। বছরের ৩৬৫ দিন বা যতদিন আল্লাহ তাকে আমার মাঝে রাখবেন ততদিনই তিনি আমার দৃষ্টিসীমায় এবং তাঁর খেদমত করা আমার প্রতি আল্লাহর আদেশ ও আমার নিত্যদিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমনি করে তিনি আমার সৈই দশ মাস দশদিন থেকে আমার আজকের অবস্থানে আসা পর্যন্ত যতœ, সেবা, ভালাবাসাসহ সকলকিছুর যোগান দিয়ে নিয়ে এসেছেন। কিতাবের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মা শব্দটির শতাধিকবার এর ও বেশী এবং বাবা শব্দটির একাধিক ব্যবহার উল্লেখ করে বলেছেন “তোমার পিতা মাতাকে সেবা কর, পিতা মাতাকে অনুসরণ করার মাধ্যমেই আমাকে খুঁজে পাবে। পিতা-মাতার পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত।” অরো অনেক . . .
হাদিসেও মোহাম্মদ (সঃ) বলেছেন আমাকে দর্শনের বা দেখার চেয়ে তোমার মা বাবাকে সম্মান ও সেবা করা উত্তম। বিশেষ করে ওয়াসকুরুনীর মা যখন অসুস্থ ছিল তখনই তিনি ওয়াস কুরুনীর চিঠির উত্তরে লিখেছিলেন তোমার অসুস্থ্য মায়ের সেবা করে আমার খাঁটি আশেক ও প্রীয় মুমিন হয়ে যাও। আমাকে দেখার চেয়ে তোমার মায়ের সেবা উত্তম।
ভাইয়েরা আমি আপনাদের পোষ্টগুলি দেখে খুব খুশী হয়েছি এবং উৎসাহিত হয়েই বলছি আসুন এই একটি বিশেষ দিনে যেভাবে মাকে স্মরণ করছি এবং বিভিন্ন প্রকাশ এর দ্বার উন্মোচন করেছি… ঠিক তারই ন্যায় আমরা নিত্যদিন মায়ের সেবা যতœ করি এবং দুনিয়াবী ও আখেরী ছওয়াব খাছেল করি। আমাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হই।
কথায় আছে ক্ষেতের ইটা ক্ষেতেই ভাঙ্গে; সুতরাং যদি আমরা আমাদের মায়ের সেবা যন্ত না করি তাহলে আমরাও আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে সেইরকম আশা করতে পারি না। কিতাবের একটি আয়াত উল্লেখ করছি “তোমরা যে রকম আশা কর, ঠিক সেই রকম তোমরা আগে করে দেখাও। তাহলে তোমার প্রতিও সেইকরম হবে।” তাই ভায়েরা আমার বক্তব্য শুধু যে মায়ের জন্য তা কিন্তু নয়; বরং তা আমাদের নিজেরও জন্য এমনকি আমাদের দায়িত্বটুকু সততা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য। যেন আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তনের পর কোন জুট জামেলায় না পড়ে নিশ্চিত খোদার সান্নিধ্য উপভোগ করে যাওয়ার একটি ব্যবস্থা পাকাপোক্ত থাকে।
এখানে মাকে নিয়ে বেশী লিখলাম কারণ মা দিবসকে উপলক্ষ্য করেই এই লিখা; অন্যদিন বাবাকে নিয়েও লিখার আকাঙ্খা রয়েছে। মায়ের কষ্ট এবং মনের ইচ্ছা তাঁর সন্তানরা বুঝবে কারন মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক নারীর। আমরা যারা মা-বাবা হয়েছি আশা করি এই বিষয়টি উপলব্দি করতে পারছি। যদি কোন ঘাটতি থেকে থাকে তাহলে এখনই উপযুক্ত সময় শুধরে নেয়ার। আসুন সকল গ্লানী এবং ঝড়া ও ফাটল জনিত বিচ্ছেদ ভুলে গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক পুণ:স্থাপন করি এবং নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি। আগামী দিনে আমাদের মা-বাবাত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত রাখি। স্বচ্ছ কাচের মত একটি স্বচ্ছ জীবন উপভোগ করি। আগে নিজে যা প্রত্যাশা করি তা করে দেখাতে ব্যস্ত হই।
খোদা আমাকে ও আমাদেরকে সহায়তা করুন। আমিন॥

Leave a Reply

Your email address will not be published.