মুর্তিও কথা কয়

বাক স্বাধীনতাহীন বস্তু বা মনুষ্য সৃষ্টি সৃজনশীলতার বিকাশ যখন কথা কয় তখন বিভিন্ন আঘাতে জর্জরিত হয় বিবেক। প্রশ্নাতিত হয়ে উঠে জাগ্রত মূল্যবোধ ও চৈতন্যের চারণভূমীর লীলার খেলারূপী কীর্তন। এই কির্তনের পক্ষে ও বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায় আমাদের সমাজ, বিবেক এবং এই দুটোর বিপরীতাক্ষক কিছু বিকৃত রূচী ও মনণের অজ্ঞ মানুষজন। বাংলাদেশের মানুষ এই কয়েক মাস খেলেছে দোলনচলে নানারূপী মুর্তিমান খেলা। করেছে নানা কীর্তি যা ঐ মুর্তির চেয়েও বিবেক বিসর্জনে বর্জিত কাজ। আর এই সকল দেখে মুর্তিটিও মুখ ফুটে দু চারটি কথা বলে আমাদের বিবেক এবং সভ্যতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ধিক্কার দিয়ে গেলো বৈকি। যে মুর্তিটি কোনদিনই কথা বলার সাহস, ক্ষমতা এবং অধিকার ছিল না কিন্তু আমাদের কৃতকর্মের কারণে সে মুখ ফুটে কথা বলে ইতিহাসের পাতায় নিজেকে স্থান করে নিয়ে গ্রীনিজ বুকে ঠায় করে নিলো নতুন ডিজিটাল সভ্যতার কালে অধ্যায়ের ধাক্কার ও এর ধিক্কারের। শুনতে কি মধুরই না লাগে কিন্তু আসলেই কি তাই?
আমাদের সমাজে দুই শ্রেণীর মানুষ ছিল আগে জানতাম। কিন্তু এখন দেখছি আরো দুই শ্রেণী যুক্ত হয়ে মোট ৪ শ্রেণীর মানুষ এই কুকৃত্তির পক্ষে, বিপক্ষে ও মৌন সমর্থন এবং আইনি সমর্থন এমনকি শক্তি ও ক্ষমতার মহড়ার। ভাবতে অবাক লাগে এই সকল অনাকাঙ্খিত ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। যাক সবই যুগের এবং নিয়তির চাহিদার নির্মম পরিহাসই মাত্র। কোর্ট আদেশ মুর্তি সরাতে হবে; মাননীয় প্রধান মন্ত্রীরও অপছন্দ এই মুর্তিতে; পাশাপাশি আমাদের শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজেরও দাবী মুর্তি অপসারণের। সবমিলিয়ে এটি সরাতেই হবে। কারন ইসলামে মুর্তি পুজা বা মুর্তি হারাম এবং এই মুর্তির দ্বারা যদি কোন সৌন্দর্য এবং কীর্তির ও না বলা কথার বহি:প্রকাশও হয় তাহলেও এই মুর্তি প্রকাশ্যে মহামান্য কোর্ট এর সম্মুখ্যে দৃশ্যমান সঠিক হয়নি। যদিও মুর্তির পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি ও লোক রয়েছে। তারপরও বলব যা কিছু সৃষ্টি এবং কীর্তিমান তা সবই মানব সভ্যতার কল্যাণের তরে। সবই মানুষের উপকারের লক্ষ্যে। কিন্তু যদি এই মানুষই অপছন্দ করে এমনকি এই উপকার গ্রহণ করতে রাজি না হয় তাহলে এর কোন প্রয়োজন নেই দৃশ্যমান থাকার। তবে প্রয়োজনীয়তা এবং উপলব্দিতে অনুধাবন করার জন্য জনসচেতনতা চালিয়ে যেতে হবে যাতে করে এর দৃশ্যমান প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবি এবং চাহিদায় রূপান্তরিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করাই হবে শুভ এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
শেষ পর্যন্ত মুর্তিটি প্রাণ ফিরে পেল এবং অপসারিত হলো। যদিও প্রাণ ফিরে পেয়ে স্ব-ইচ্ছায় অধিকার ত্যাগ করেনি কিন্তু ক্ষমতা এবং শক্তির সঙ্গে কুলাতে না পেরে আত্মসমর্পন করে ক্ষমতার শক্তির দাপটে পরাজিত হয়ে অপসারিত হলো। কিন্তু এখানেই শেষ নয়… শুরু হলো নতুন অধ্যায়…. কেউ কেউ এই অপসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং আগামী দিনের যে কোন বাক স্বাধীনতাহীন মুর্তির বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্ছারণ করেছেন। আবার কেউ কেউ এই মুর্তি সরানোর পিছনে কোর্টের আদেশের সাফাই গেয়েছেন। আবার কেউ কেউ এই মুর্তির প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে হোক আর না ভেবেই হোক প্রতিবাদ করেছেন, কর্মসূচী দিয়েছেন। অনেকে প্রতিবাদে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে একটি বাক-স্বাধীনতাহীন মুর্তির কত ক্ষমতা তা দেখিয়েছেন এবং বৃদ্ধাঙ্গূলী প্রদর্শন করেছেন আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি। যাদের এই ক্ষমতাটুকুও নেই। প্রতিবাদ এবং পক্ষে ও বিপক্ষে কিছু বলা এমনকি করে দেখানোর। যাই হোকে মাটির তৈরী মৃত একটি মুর্তি যা দেখিয়েছেন তা যদি আমাদের দেশের সরকার এর বাইরের বিরোধীদলগুলো করে দেখাতে পারতেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশ আরো এগুতো।
কি আর বলব; কোর্ট এবং শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজ ও আমাদের আস্থা ও ভরসার ভীত শেখ হাসিনা, তিনিও একজন প্রকৃত মুসলীম হিসেবে এই মুর্তির অপসারণ চেয়েছেন; আর এর পরিপেক্ষিতে মুর্তি অপসারিত হয়েছে। সকলেই মেনে নিয়েছে এবং এখানেই এর যবনীকাপাত টানা উচিত। এর বাইরে কিছু করতে যাওয়া বোকামী ছাড়া আর কি? আর এই বোকামির সুযোগেই বোবা মুর্তিটি কথা বলে ফেলল এবং আমাদের সমাজকেও বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে আগামীর করণীয় ঠিক করতে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেল । এই মুর্তি কান্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রত্যেককে এগিয়ে যেতে হবে সার্বিক কল্যাণের তরে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার লক্ষে। নতুবা পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই যে যাই করি না কেন ভাবতে হবে সবকিছুই যেন মানুষের কল্যাণের তবে এবং সৃষ্টিকর্তার সান্নির্ধ্য লাভের উদ্দেশ্যে হয়। সকল কৃতকর্মের ফল যেন হয় সকল মানুষের কল্যানের জন্য বা উপকারের জন্য। আরো ভাবতে হবে কোন ধর্ম বা বর্ণের এমনকি গোত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন উপকারীতা গ্রহনে সকলে সজাগ থেকে বর্জনের দিকে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এই মুর্তির আদর্শীক শিক্ষা এবং মৌলিক শিক্ষা ও যৌবিক এর বাস্তবসম্মত শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। আন্দোলন এবং বিভিন্ন কর্মসূচীর সঙ্গে যুক্তরা এগিয়ে যেতে হবে নতুন কোন সৃষ্টির লক্ষ্যে। পুরাতন ঐ ঘষামাজা আন্দোলন ও কর্মসূচীর বাহুবন্ধন থেকে নিজেদেরকে বের করে মুক্ত বিহঙ্গের মত নব উদ্যমে নব আবিস্কারে মত্ত থাকতে হবে। সমাজকে এমনকি দেশকে দেখাতে হবে নতুন কিছু। সভ্যতাকে নতুনর্ত্বে সাজিয়ে তুলতে হবে। মুর্তির ন্যায় নিরব ভুমিকায় নানাহ শিক্ষার দৃষ্টান্ত রাখতে হবে। এই হোকে আমাদের আগামী দিনের চাওয়া বা প্রত্যাশা।
রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের দেশে পবিত্র রমজান
রমাদানাল মোবারক। মুসলিম উম্মা রোজা রাখা শুরু করে দিয়েছে। আজ থেকে শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে রোজা। আর আগামীকাল থেকে শুরু হবে আমাদের দেশে। তাই রোজার মাহাত্ব এবং উদ্দেশ্য পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়িত এবং পালিত হউক আমাদের দৈনন্দিন কাজে। ন¤্রতা এবং ভদ্রতা, পরমতসহিষ্ণুতা, ধৈয্য ও শয্যগুণ, ভালবাসা-ক্ষমা, সর্বোপরি সেবার মনোভাব বজায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। এই রোজার তিনটি ধাপের কার্যকারীতা অক্ষুন্ন রেখে আমাদের জীবনে কাজে লাগিয়ে এর ফজিলত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।  রহমত, বরকত এবং মাগফিরাত। এই সবই সৃষ্টিকর্তার উপহার এবং আরো উপহার হলো এই রমজানে কোন কিছুরই হিসেব নিকেশ নেই। ভাল-মন্দ বিচারে নয় বরং সকল ভাল কাজ হওয়ারই তরে মহান খোদা তায়ালা শয়তানকে এবং এর শয়তানিকে একমাসের জন্য বন্দি করে রাখবেন। তাই আমাদের সকল মুসলিম উম্মা এখন মুক্ত বিহঙ্গের মত শুধু ভাল কাজই করে যাবেন।
যেহেতু শয়তান বন্দি সেহেতু আর হিসেব নিকেশ এর প্রয়োজন নেই। শুধু রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে এর মাহাত্ম অনুধাবন করে এগিয়ে যাবেন। আগামী সংখ্যায় রোজার প্রকৃত তাৎপর্য নিয়ে কিছু লিখব। রমজানের শুরুতে সকলকে রমাধানাল মোবারক বলে আগামীর প্রতিক্ষায় রইলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.