কেয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় পানির মাঝখানেসহ দুর্গম এলাকায় ৭টি স্কুলে নতুন ভবন হচ্ছে

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ॥ শুক্রবার, ০২ জুন ২০১৭, বর্ষায় গ্রামটির চার পাশে পানি থাকে। মাঝখানে বসবাস। বের হলে নৌকা নিয়ে যেতে হয়। এছাড়া উপায় নেই। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় অবস্থিত এ গ্রামটির নাম রউয়াইল। এখানে রয়েছে দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস। লোকসংখ্যা ৬ শতাধিক। দূর থেকে এ স্থানটি দ্বীপের মত মনে হবে। এখানের শিশুরা যাতে শিক্ষা বঞ্চিত না-হয়, এজন্য পানির মাঝখানে মাটি ভরাট করে ২৩ শতক জমির ওপর ১৯৭৩ সালে ‘রউয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা শতাধিক। শিক্ষক সংখ্যা ৩ জন। এ স্কুলের সবদিক পানিতে থৈ থৈ করছে। নৌকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এ অবস্থা দেখলে মনে হবে তারা যেন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাঠশালায় এসে শিক্ষাগ্রহণ করছে।
২০১৪ সালের শেষের দিকে রউয়াইল এলাকার বাসিন্দা শ্রীকান্ত সরকার হবিগঞ্জ-সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা আসনের এমপি কেয়া চৌধুরীর কাছে স্কুলের এ অবস্থার সঙ্গে গ্রামের সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। এমপি কেয়া চৌধুরী এ গ্রামটি পরিদর্শন করে স্কুল, শ্মশানঘাট ও রাস্তার উন্নয়নে বরাদ্দ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নিয়ে আসা বরাদ্দক্রমে উন্নয়ন হয়েছিল। তবে স্কুলটিতে একটি মাত্র ভবনে চলে আসছিল শিক্ষা কার্যক্রম। এর পরেও একাধিকবার এমপি কেয়া চৌধুরী এ গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। তেমনিভাবে তিনি নবীগঞ্জ ও বাহুবলের হাওরসহ দুর্গম এলাকার স্কুলগুলো পরিদর্শন করে বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন করেছেন।
অবশেষে এমপি কেয়া চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ এর আওতায় ‘এডুকেশন ইন ইমার্জেন্সি’ খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলায় ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ অনুযায়ী অচিরেই নির্মাণ শুরু হচ্ছে। এসব স্কুলগুলো হলো- বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্নানঘাট ২নং খাগাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্নানঘাট নিদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রউয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ নাদামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নবীগঞ্জ সদর গুজাখাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া এমপি কেয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় বাহুবলের নোয়াঐ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বশিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দুর্গম স্থানে এসব স্কুলে ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এমপি কেয়া চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন- “এমপি হবার পর থেকে বিভিন্ন দুর্গম এলাকা পরিদর্শন করেছি। জননেত্রীর কাছ থেকে একে একে বরাদ্দ এনে স্থান স্থানে দিয়েছি। বরাদ্দক্রমে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। চলমান রয়েছে উন্নয়ন।”
তিনি বলেন- “আমার কাজই উন্নয়ন করা। তাই বসে থাকতে পারছি না। এবার জননেত্রী সরকারের কাছ থেকে ৭টি প্রাথমিক স্কুলে নতুন ভবন নিয়ে আসতে পেরে ভাল লাগছে।” তিনি বলেন- “যেখানেই প্রয়োজন উন্নয়নের। সেখানেই, নেত্রীর উপহার হিসেবে উন্নয়ন পৌঁছে দিচ্ছি।” উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের শেষ দিকে পানির মাঝখানে রউয়াইল স্কুল সম্পর্কে এ প্রতিবেদকের লেখা একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। সে সময়ে সংবাদটি প্রশংসা পায়। এবার দুর্গম হাওর এলাকার রউয়াইলসহ ৭টি স্কুলে নতুন ভবন হচ্ছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ৭টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের সংবাদ পেয়ে মহাআনন্দে রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার তৃণমূল লোকেরা। নতুন ভবন এনে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি কেয়া চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.