বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে সুইডিশ ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবান

বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিন্ন সমৃদ্ধি ও দু’দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদার হতে সুইডেনের বাণিজ্য ও শিল্প নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দু’দেশের সমৃদ্ধি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিনিয়োগ, ব্যবসা ও উদ্ভাবনী বাণিজ্যে আমাদের অংশীদার হতে সুইডেনের ব্যবসায়ী ও শিল্প নেতৃবৃন্দকে জোরালোভাবে উৎসাহিত করছি।
প্রধানমন্ত্রী গত শুক্রবার সকালে সুইডিস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রোজেনব্যাড সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ-সুইডেন বিনিয়োগ ফোরামের বাণিজ্য সংলাপে ভাষণকালে এ আমন্ত্রণ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি খুবই উদার। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। আমরা ইইউ, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে এবং এ ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল জিটুজি ভিত্তিতে বিশেষভাবে চীন, ভারত ও জাপানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা অনেক হাই-টেক পার্কও গড়ে তুলছি- আমি আমাদের উন্নয়ন প্রয়াসে অংশীদার হতে সুইডেনের কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনে আনন্দিত যে সুইডেন ও বাংলাদেশে অবস্থিত উভয় দেশের বাণিজ্য পরিষদের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এই পদক্ষেপ দু’দেশের বাণিজ্যে ঘনিষ্ট সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে বাংলাদেশ সুইডেন সম্পর্কের উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী উলফ পার্মের নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করে এবং ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইউরোপের প্রথম সমর্থনকারী দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সে সময় থেকে এই সম্পর্ক জোরদার থেকে জোরদার হয়ে বর্তমানে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে তা গভীর ও শক্তিশালী হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকের এই আয়োজন দু’দেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগের লক্ষ্যসমূহ অর্জনে আরো উৎসাহ জোগাবে। আমি বিশ্বাস করি দু’দেশের বিজনেস কমিউনিটি মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ও তথ্য ব্যবহারে এই সুযোগ কাজে লাগাবে। শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ একটি সফল দেশ এবং এ দেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহৎ পোশাক রফতানিকারী দেশ। তৈরি পোশাক খাতের মত অন্যান্য খাতেরও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওষুধ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৮৩টি দেশে রফতানি হয়। শেখ হাসিনা বলেন, মেধা শিল্প, আইসিটি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতও দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পও সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখন সমুদ্রগামী হালকা ও মাঝারি আকারের জাহাজ বাংলাদেশে নির্মিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা,স্বাস্থ্য ও সেনিটেশন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির মতো ক্ষেত্রগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে দ্রুত একটি অর্থনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। দেশে এখন প্রক্রিয়া ভিত্তিক, বহুমুখিকরন এবং মূল্য সংযোজন অর্থনীতি রূপান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ইনক্লুসিভ উন্নয়নের জন্য একটি রোল মডেল হিসাবে বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাইসঅথারহাউস কফারের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে আগামী তিন দশকের মধ্যে দ্রুত ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অগ্রসরমান তিনটি দেশের মধ্যে একটি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অথনীতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তিনি বলেন, এ বছর আমরা ৭.২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জণ করেছি। জনসংখ্যার তুলনায় ভূমি কম হলেও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বাবলম্বীতা অর্জণ করেছে। তিনি বলেন, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ি বৃক্ষায়ন, মৎস চাষ, চাল এবং আলু উৎপাদনে বিশ্বে দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এই সফলতার মূল চাবি কাঠি হচ্ছে সরকারি সহায়তায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কৃষিকার্যে অবদান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০২১ সালের মধ্যে দেশ ডিজিটালাইজড এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সুইডেনের এ্যান্টারপ্রাইজ ও ইনোভেশন মন্ত্রী বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া এফবিসিসিআই’র সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলামও পৃথক বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এবং শ্রম সচিব মাইকেল শিফার প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সুইডেনের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষে সুইডেন-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল, স্টকহোম এবং নরডিক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সুইডেনের এ্যান্টারপ্রাইজ ও ইনোভেশন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.