টিআইএন॥ অনলাইন পত্রিকাগুলোকে নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোতে আনতে তৈরি করা জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা সোমবার (১৯ জুন) মন্ত্রিসভায় উঠছে। এখানে প্রস্তাবিত খসড়াটি অনুমোদনের পর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট আকারে প্রকাশ হলেই তা কার্যকর হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী গঠিত জাতীয় সম্প্রচার কমিশনই অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা করবে। জারি করা বিধি-বিধান যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে কিনা তাও ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এই কমিশন।
সব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সংবাদ ও প্রকাশিত বা প্রচারিত অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ছয় মাস বা এক বছর পরপর প্রতিবেদন নেবে কমিশন। পরবর্তীতে তা পেশ করা হবে সরকারের কাছে। যে কোনও অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনও করবেন তারা। জানা গেছে, নীতিমালা পরিপন্থী তথ্য প্রকাশ এবং দেশের বিদ্যমান আইন লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পেলে সংশ্লিষ্ট অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে কমিশন। স্বপ্রণোদিতভাবেও তারা এই কাজ করতে পারবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবে সরকারকে।
এছাড়া কমিশন আইনের বাস্তবায়ন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিধিবিধান প্রণয়নের জন্য অংশীজনদের পরামর্শ নেবে। অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের (সরকার) জন্য একটি অনুসরণীয় নিয়মকানুনও তৈরি করবে কমিশন। প্রস্তাবিত নীতিমালা চূড়ান্ত করার সময় নতুন কোনও বিষয় যোগ করা কিংবা পরিবর্তন আনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, (সোমবার) মন্ত্রিসভায় ওঠার পর সবকিছুই জনতে পারবেন।’ তবে এর আগে কয়েক দফায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা দিতেই অনলাইন গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হবে। এজন্যই অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা করা হচ্ছে।’
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সংবাদপত্রের জন্য ১৯৭৩ সালের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যক্ট থাকলেও অনলাইন পত্রিকা পরিচালনার জন্য দেশে কোনও আইন, নীতিমালা ও অধ্যাদেশ নেই। সে কারণে নীতিমালা জরুরি। ২০১২ সালে সরকার একটি খসড়া তৈরি করলেও তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এরপর অনলাইন গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। সম্প্রতি নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে বলেও গণমাধ্যমকে জানান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধন দিতে ইতোমধ্যেই তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করছে সরকার। তদন্ত শেষ হলে নিবন্ধন দেবে তথ্য মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় আরও যা থাকছে:- অনলাইন গণমাধ্যমের খসড়া নীতিমালার তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার সংক্রান্ত বিষয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধর ইতিহাস সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। সব ধর্মের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই সংবাদ পরিবেশনের কথাও উল্লেখ রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে। তবে কৌতুক বা পরিহাস করার জন্য আঞ্চলিকতা রাখা যাবে না। পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ধারাকে তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকেও তুলে ধরতে হবে সংবাদে। অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত বা সম্প্রচারে কোনও প্রকার অসঙ্গতিপূর্ণ, বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত দেওয়া যাবে না। সব তথ্য-উপাত্তে উভয় পক্ষের যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকতে হবে।
সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, তথ্য-উপাত্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে প্রচার বা প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তা, স্বাস্থ্য বার্তা, গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা, সরকারের জারিকৃত প্রেসনোট, সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রভাষাকে যোগ্য মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তথ্য পাঠ, প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বাংলা প্রমিত বানান বা উচ্চারণের মান শিথিল করা যাবে না।
অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওয়েজ বোর্ডের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীর বেতন-ভাতা দিতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা আবশ্যকীয়।
বিজ্ঞাপন প্রকাশের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিদেশি কূটনীতিক ও জাতীয় বীরদের অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তবে গণসচেতনতা ও সমাজসংস্কারমূলক বিজ্ঞাপনে দেশের স্বনামধন্য নাগরিকদের সম্মতি নিয়ে বিজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ভাষা, দৃশ্য কিংবা নির্দেশনা কোনও ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অনুভূতির প্রতি পীড়াদায়ক হতে পারবে না। তবে ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না, এমন ধর্মীয় চিত্র প্রকাশ বা প্রদর্শন করা যেতে পারে।
সব তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার করার ক্ষেত্রে দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট-১৯৬৩, তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬, কপিরাইট, ট্রেডমার্কস, প্যাটেন্টস-ডিজাইন ও জিআই আইনসহ অন্যান্য মেধাসম্পদ আইন বা দেশের প্রচলিত আইন ও তার অধীন বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে বা জাতীয় নীতিমালার পরিপন্থী কোনও তথ্য উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ ও সম্প্রচার করা যাবে না।