বাঙালি ও বাংলার ইতিহাস

তাজুল ইসলাম॥ একদিন গণভবন থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর মাঝ পথে বঙ্গবন্ধু গাড়ি থামিয়ে বলেন, বাবুবাজার যাও। চাউলের দাম কতো তা যাচাই করতে হবে। এদিকে তাকে পাহাড়ারত গাড়ি অনেক দুরে চলে গেছে। বঙ্গবন্ধুর কথায় গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে দৌড়ে গিয়ে ব্যবস্থা নিতে হলো। এই সময়ে বঙ্গবন্ধু গাড়িতে একাই বসে ছিলেন একেবারে নিরাপত্তাহীন।
আবার কখোনো বলতেন, মিরপুর বস্তিতে যাব। বস্তির মানুষ কিভাবে আছে তা দেখতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে দেশের রাষ্ট্রপতি বা দেশের প্রধান তার নির্দেশতো অমান্য করার কোন অবস্থা আমার বা অন্য কারো ছিলো না। মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের কারণে প্রায় সময়ই এমন পরিস্থিতিতে পড়তো হতো। তিনি বলেন, একদিন আমি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম স্যার, আমাকে দুইটি ওয়ারলেস সেট কিনে দিন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ওয়ারলেস সেট দিয়ে তুই কি কবরি। তখন বলেছিলাম, স্যার কোথাও যাওয়ার সময় মাঝপথে মত পাল্টাচ্ছেন তখন আপনাকে অনিরাপদ রেখে ছুটতে হয়। ওয়ারলেস সেট থাকলে আপনাকে একা ফেলে দৌড়ে যেতে হবে না। বঙ্গবন্ধু তখনও আমার কথায় সাড়া দেননি।
বঙ্গবন্ধুর চিফ সিকিউরিটি অফিসার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরও বলেন, সে সময় ই. এ. চৌধুরী নামের একজন এসপি ছিলেন। তাকেও ওয়ারলেস কেনার বিষয়ে জানিয়েছিলাম। একদিন এসপি ই. এ. চৌধুরী আমাকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ারলেস সেট প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে বললেন। তখন এর দাম কতো জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, ২২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আরও বেশি দামের রয়েছে।
এ সময় ওয়ারলেস সেটের দাম শুনে ধমক দিলেন এবং বললেন আমার দেশের মানুষ না খেয়ে মরে যাচ্ছে, যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ, পাকিস্তান দেশটাকে ধবংস করে ফেলে রেখে গেছে আর তুই আমার নিরাপত্তার জন্য ওয়ারলেস কিনতে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করবি।
তখন উদাহরণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু বলেন, জন কেনেডিকে মেরে ফেলেছে। তার নিরাপত্তার জন্য কতো ব্যবস্থা ছিল। কই এতো নিরাপত্তায় ও তো কেনেডিকে বাচাঁনো যায়নি। আল্লাহ যখন মৃত্যু লিখে রেখেছে তখনই আমার মৃত্যু হবে। এভাবেই ওয়ারলেস সেট কেনার বিষয়টি বাতিল করে দেন বঙ্গবন্ধু।
মহিউদ্দিন বলেন, যে মানুষটি বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি দেশকে অঙ্কন করলেন, দেশের মানুষকে নতুন একটি দেশ উপহার দিলেন, সেই মানুষটির মনোভাব, জয় বাংলার প্রতি তার ভালোলাগা ও আত্মদান নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তারা দেশেরই শক্র। জয় বাংলাই বঙ্গবন্ধুর স্লোগান, জয় পাকিস্তান নয়।
-মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন চিফ সিকিউরিটি অফিসার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.