প্রেমের টানে শেরপুরে ছুটে এসে বিয়ে করলেন রুশ তরুণী

শেরপুর প্রতিনিধি॥ ০১ জুলাই- প্রেমিকের টানে সুদূর রাশিয়া থেকে শেরপুরে ছুটে এসেছেন সিভেতলেনা। প্রেমিক ধর্মকান্ত সরকারের গলায় মালা পরিয়ে বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে। ধর্মকান্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের ধীরেন্দ্র কান্ত সরকারের ছেলে। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টায় শেরপুর শহরের গোপাল জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে সনাতন ধর্মমতে যজ্ঞ সম্পাদন করে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন, শেরপুর শাখার সদস্যরা। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রেমিকের পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধব ও ইসকন ভক্তসহ প্রায় চার শতাধিক অতিথি। তাদের খাবারের তালিকায় ছিল পুষ্প অন্ন, ভুনা খিচুরি, সয়াবিনের রসাসহ ১৪ প্রকারের নিরামিষ। পারিবারিক ও ইসকন মন্দির সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাসের পর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য রাশিয়ায় যান ধর্মকান্ত। ভর্তি হন মস্কোর আছরাখান টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তেল-গ্যাস-পেট্রল জ্বালানি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর ব্যবসা শুরু করেন তিনি। একসময় যাওয়া-আসা শুরু হয় মস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণা কন্সিয়াসনেস’ (ইসকন) প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা মন্দিরে। ইসকনের নিয়মানুযায়ী মন্দিরের বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সেখানেই ২০১৩ সালে মন্দিরের গুরুদেব আনন্তাকৃষ্ণা মহারাজের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় রুশ তরুণী সিবেতলানা’র। পরে দীর্ঘদিন দুইজনের মধ্যে চলে ই-মেইলে আলাপচারিতা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ধর্মকান্ত সরকার দেশে চলে আসেন। দেশে চলে এলেও দুইজনের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। এর সূত্র ধরে এক মাস আগে বাংলাদেশে আসেন সিভেতলেনা। তারা কিছুদিন সন্ন্যাসীভিটায় থেকে চলে আসেন শেরপুর শহরের ইসকন মন্দিরে। দুইজনই যুক্ত হন এ মন্দিরের সেবামূলক কাজের সঙ্গে। পরে তারা পরস্পরের ইচ্ছায় প্রেমকে পরিণয় দিতেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সনাতন ধর্মীয় আচার অনুযায়ী শুক্রবার রাতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। ধর্মকান্ত সরকার জানান, বর্তমানে তিনি রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে হোটেল ব্যবসা করছেন। ২০১২ সালে মস্কোতে সভেতলেনা আর তিনি নিজেদের দীর্ঘদিনের জানাশোনা থেকেই পরস্পরের গলায় মালা পরিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা দুইজনই নিরামিশাষী এবং ইসকন অনুসারি। তারা যাতে দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারেন সেজন্য সবার প্রার্থনা কামনা করেছেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়ার আইন অনুসারে তারা বিয়ের জন্য নিবন্ধনের আবেদন করেছেন বলেও জানান। শেরপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য বলেন, “প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসা রাশিয়ান কন্যা সেভেতলানা’র সঙ্গে নালিতাবাড়ী সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের ধর্মকান্ত সরকারের বিয়ে হিন্দু ধর্মমতে সম্পন্ন হয়েছে। ধর্মকান্ত সরকার রাশিয়ায় থাকতেই তাদের মাঝে পরিচয়, অতঃপর প্রেম এবং পরিণয়। আমরা তাদের সুখী দাম্পত্যজীবন কামনা করি। ” শেরপুর ইসকনের সেবায়েত অপূর্ব জগন্নাথ দাশ ব্রহ্মচারী জানান, শুক্রবার রাত ৯টায় গোপাল জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মকান্ত সরকার ও সিভেত লেনার বিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ভালোবাসার পরিণতি বিয়েতে রূপ পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.