আ.লীগ ক্ষমতায় থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে ইনশাল্লাহ – জননেত্রী শেখ হাসিনা

বিপ্লব চক্রবর্তী॥ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার (৮/৭/১৭) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একথা বলেন। সভায় দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করবে এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা ১০ বছর মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহন করি, ২০১০ থেকে ২০২০। ২০২০ সালে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবো। আমি চাই, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে এই জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো। তখন নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আবারো জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঈঙ্গিত দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের উন্নয়ন, মানুষের উন্নয়ন। এর বাইরে যখনি যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে দেশে। কাজেই বাংলাদেশের জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে জনগণ কীভাবে, কাকে চায়।
সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে জনগণ উন্নয়নের সুফল পায় না মন্তব্য করে টানা দুই মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জানে, এটা প্রমাণিত। এটা মাথায় রেখে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে যেসব কাজ হাতে নিয়েছি সেসব বাস্তবায়ন করেছি। যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে আরও একটার্ম ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন। নির্বাচন জনগণের সাংবিধানিক অধিকার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আমরা এবছর দেশের সর্ববৃহৎ বাজেট দিয়েছি, এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামীতে আরও বড়ো বাজেট দিতে পারবো।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জনসংযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং গণতন্ত্রের ধারাবহিকতা বজায় রাখতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন আসলেই বিএনপি নানারকম টালবাহানা শুরু করে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচনে যায়নি, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু জনগণ যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য মানুষ হত্যা করেছিল। তার আগে ৫৮২ টি স্কুল পুড়িয়েছিল। তারা যে মানুষ হত্যা করেছে পুড়িয়ে পুড়িয়ে নিশ্চয়ই সেটা বাংলাদেশের জনগণ ভুলে যায় নি, ভুলে যাবে না। কাজেই এরা ক্ষমতায় থেকে লুটপাট দুর্নীতি করে, তাদের আমলে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নিশ্চয় এটা ভুলে যায়নি জনগণ। কাজেই জনগণের কাছে সেই কথাগুলো তুলে ধরতে হবে।
প্রায় একঘণ্টার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতির একাধিকবার বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। ওইসব নির্যাতনের চিত্র তিনি সারাদেশে নেতাকর্মীদের প্রচার করার তাগিদ দিয়ে বলেন, আমি বুঝি না আমাদের নেতাকর্মী কীভাবে বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা ভুলে যায়। আমাদের নেতাকর্মীরা হয়তো উদার, তারা মনে হয় সব ভুলে গিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওরা যে অত্যাচার করেছে আমরা তার কিছুই করিনি। আমরা তো প্রতিশোধও নিইনি। তারপরও তারা থেমে থাকেনি। নির্বাচন ঠেকানোর নামে সারাদেশে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। আর ক্ষমতায় থাকতে এমন কোনো জেলা বাকি নাই যে, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার হয়নি, খুন করেনি। আমার উপস্থিতিতে আমাদের অফিসে পর্যন্ত তল্লাশী চালিয়েছে। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় আমাদের দলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই সিলগালা করে দিয়েছিল। আমার বাসায়ও কয়েকবার হামলা করেছে। আর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের অফিসে তো সবসময় ব্যারিকেড দেওয়াই থাকতো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উদার বলে হয়তো অতীত ভুলে যান। আর বুদ্ধিজীবিরাও এগুলো ভুলে যান।
বিএনপি আমলে সারাদেশে যতো জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের সকলের তালিকা তৈরি করার জন্য শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, এগুলোর আর্কাইভ থাকা উচিত। সবার জানা দরকার। অতীত ভুলে যাওয়া উচিত না। অতীত ভুলে গেলে এগুনো যায় না। বিএনপি চেয়ারপারসন সততার অভাবে কোর্টে হাজিরা দিতে যান না অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, সততার শক্তি থাকলে তো কোর্টে যেতে ভয় পাওয়ার কথা না। আমর নামে মামলা হয়েছে, আমি তো ভয়ে লুকাইনি। আর উনি মামলার ভয়ে কোর্টে যান না।
আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনে বিশ্বাসী মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ ভোটের মালিক, জনগণ ভোট দেবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’ এই শ্লোগান কিন্তু প্রথম আমরাই শুরু করেছি। আমরা সবসময় নির্বাচনে বিশ্বাসী। নির্বাচন চেয়েছি। ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। তারপরও দলটি টিকে আছে। আর দেশের সাধারণ মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। আজকে দেশে মঙ্গা নাই, খাদ্যের অভাব নাই, ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি আমরা। দেশের উন্নয়নের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.