নগরে জলাবদ্ধতার দায় কার

নগর জীবনে অভ্যস্ত মানুষগুলো দিন দিন জিম্মি হয়ে পড়েছে নাগরিক জলাবদ্ধতার কাছে। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন সফল উদ্যোগ চোখে পড়েনি এই কয় বছরে। বরং দিন দিন আরো খারাপ অবস্থানের দিকে নিমজ্জিত হচ্ছে এই নাগরিক জীবন। নাগরিক জীবনের মানোন্নয়নের জন্য সরকার আন্তরিকভাবে মরিয়া হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের সদিচ্ছার কোন কমতি নেই। কিন্তু কেন এই সমস্যা থেকে নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষগুলো নিস্তার পাচ্ছে না? কি এমন অদ্ভুদ রহস্য বিরাজমান এই জলাবদ্ধতার সঙ্গে? আমার যদি স্মৃতিভ্রম না হয় এবং স্মৃতিরোমন্থন সঠিক হয় তাহলে বলতে পারি আগে এত অল্প বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। নাগরিক জীবনে কোন ভোগান্তির কারণও হতো না। কিন্তু এখন একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা তলিয়ে ভোগান্তির শুরু হয় এমনকি স্তব্ধ হওয়ার উপক্রম হয় জীবনের চলমান গতি। আগে বছরে এক দুইবার এর স্বীকার হতে হতো অতি বৃষ্টির কারণে। আর এখন প্রতিনিয়তই হচ্ছে। এর কারণ কি? আমরা কি এই জনদূর্ভোগকে অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ক্ষতির ভয়াভহতার সমপর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি না। জিরো টলারেন্স নীতি কি জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি না।
হরতাল, সভা সমাবেশ, সন্ত্রাস, দুর্নীতির করাল ঘ্রাসের সমপর্যায়ে কি এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতাকে নেয়া যায় না। নাগরিক জীবনের এই যন্ত্রনা কি লাঘব করার কোন উপায় বের করে ফলপ্রসুতা ভোগ করার সুযোগ করে দেয়া যায় না। জনগন যাদের হাতে এই দায়িত্ব দিয়েছে তারাতো তাদের নিজের প্রয়োজনেই ব্যস্ত এমনকি উপর তলার মানুষদের সুখের জায়গাকে আরো সুখের করার লক্ষ্যে জনগনের জন্য আরো জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করার মহা কাজে ব্যস্ত। সকল ভাল রাস্তা কেটে খানাখন্দ সৃষ্টি করে নতুন রাস্তার ও সৌন্দর্য বর্দনের কাজে নিয়োজিত। সাধারণ জনগনের কাজে লাগার মত এমনকি নষ্ট রাস্তা মেরামত করার সময় এবং সুযোগ নিয়ে ভাবার মত সময় তাদের নেই। ফাকা বুলি আওড়িয়ে বেড়ানোর সময় তাদের যথেষ্ট আছে। সময় আসছে একদিন ঐ ফাকা বুলির পিঠে বুলি দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার। অফিসে গেলে কোন পরামর্শ এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষে… তখন লর্ডখ্যাত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাম্বরা ভাব ও অমানুষসুলভ ব্যবহার পেয়ে মর্মাহত হয়ে ফিরে আসা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। দেখা করার কোণ সুযোগ বা সময় না পেয়ে মানুষজন এখন হতাশ ও দু:খবোধ নিয়ে ফিরে আসে। অতি পরিচিত জনও ক্ষমতার মসনদে বসে অপরিচিত হয়ে পড়ে ঐ কর্মকর্তাদের আচরণ এবং উদ্ধ্যত্বের কারণে।
সরকার এবং দলীয় সমর্থন নিয়েই আজকে যারা এই নগরগুলোর দায়িত্ব নিয়েছেন তাদেরকেতো প্রথমে চিন্তা করতে হবে জনগণ তারপর দল এবং সরকার। এখনতো দেখছি এই তিনের একটিও তারা চিন্তা-ভাবনায় রাখছেন না। বরং বিদেশীদের খুশী এবং উন্নত আবরণে সম্বৃদ্ধ দেশের বাহিরেতে লেপা-পোছা দুধের মত সাধা ভাব দেখানোতে ব্যস্ত। কাজের কাজ না করে অকাজের পোদ্দারীতেও ব্যস্ত। আমি বলতে চাই আপনারা আমাদের সহযোগীতা নিচ্ছেন এবং নিবেন আমরা আপনাদেরকে সহযোগীতা করব এবং করে যাচ্ছি কিন্তু আমাদের জন্যওতো আপনাদের ভাবতে হবে। আমরা আপনাদের মানুষিক, আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ সকল ধরণের সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছি এবং রাখব। আমাদের বিষয়গুলো সুস্পষ্ট যে, জনদূর্ভোগ লাগবের জন্য তড়িৎ পদক্ষেপ নিয়ে কাজ শুরু এবং শেষ করুন। শহরের ভাঙ্গাচূড়া রাস্তা মেরামত করুন।
সরকারের উন্নয়ন গতিকে ম্লান করে দিচ্ছে এই ছোট ভুলগুলো। জলাবদ্ধতার কারনে সৃষ্ট সমস্যা এখন যদিও মানুষের মুখরোচক হাসি ও তামাসার কারণ কিন্তু বাস্তবে এই মুখরোচক তামাসাই আমাদের কান্নার কারণ হয়ে দাড়াবে। সুতরাং কান্নার পরিস্থিতি যেন না হয় সেই দিকে এখনই দৃষ্টিদেয়া দরকার। সবকাজই যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করতে হবে বা গুরুত্বারোপ করে আদেশ দিতে হবে তা কেন? প্রত্যেকের দায়িত্ব কি আমরা সুন্দরভাবে সুসম্পন্ন করতে পারি না। যারা এই জলাবদ্ধতার সঙ্গে জড়িত সেই সম্মানীত ব্যক্তিদেরকে বলতে চাই আপনাদের নেয়া সকল কিছুই দৃশ্যত ভাল কিন্তু পদক্ষেপ যেটা আগে নেয়ার দরকার ছিল সেটা সঠিকভাবে না নেয়ার কারণে আজ আপনারাও বিব্রত হচ্ছেন। তবে জনগণের দায়িত্ব যেহেতু আপনাদের এবং আপনারা এই জনদূর্ভোগ লাগবে যত দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন ততই মঙ্গল আমাদের আগামীর জন্য। আমরা আমাদের চলমান অগ্রগতি এবং উন্নয়ন ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন এবং অব্যাহত রাখতে চাই; তাই যেন কারো ভুল পদক্ষেপ বা গাফিলতির জন্য সেখানে কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় তা আমরা কেউই চাই না। সময় থাকতে এর আশু সমাধান করুন। সমস্যা কিন্তু চিহ্নিত এবং এর শেষান্তে পৌঁছার জন্য দরকার জরুরী ভিত্তিতে কাজ শুরু এবং শেষ করা। দয়া করে এই কাজটুকু করুন। যদি জনগণের আরো কোন সহযোগীতা প্রয়োজন হয় তাহলে জনগণও সেই সহযোগীতা করতে প্রস্তুত।
জনগণ যাদের উপর দায়িত্ব দিয়েছেন এবং আপনারা দায়িত্ব নিয়ে যে পরিশ্রম করছেন তার জন্য আমরা আপনাদেরকে সাধুবাদ জানাই এবং আরো জনগুরুত্ব নির্ভর কাজগুলো শেষ করার জন্য পদক্ষেপ নিন এবং জনগণের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক হউক পারিবারিক ও বন্ধুত্ব নির্ভর। জনদূরত্ব সৃষ্টি হয় এমন আচরণ ও কাজ করা থেকে বিরত থাকার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আগামী দিনে আপনাদের উপর নির্ভর করছে সরকারের সফলতা। তাই সরকারের আন্তরিকতা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনাকে তড়ান্বিত করার জন্য দরকার আপনাদের আন্তরিকতা ও জনগণনির্ভর সফলতা। জনগণের সেবক হিসেবে জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং তোলাই হবে আমাদের সকলের সর্বাঙ্গীনভাবে কাম্য। এই জনগণই আগামীদিনে আমাদের সেবার দায়িত্ব দেয়ার কর্ণদ্বার হিসেবে আর্বিভুত হবে। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়াই হবে সরকার, দল এবং জনগণের জন্য মঙ্গলময়। এই মঙ্গলময় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হতে সকলেই এখন উন্মুখ। তাই সকলকে নিয়েই কাজে নেমে পড়–ন এবং সকলের অংশগ্রহণেরই সকল জঞ্জাল শেষ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.