আমার দায়িত্ব কি? দায়িত্ব পালন হচ্ছে কি আমার দ্বারা

রজত শুভ্র সরকার॥ সুইজারল্যান্ডের একটা ঘটনা বলছি— রাস্তার পাশে একটা বিড়ালকে মল ত্যাগ করতে দেখে সে পথ দিয়ে যাওয়া সেখানকার এক মন্ত্রী তার গাড়ি থামালেন। বিড়ালটি মল ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর সেই মন্ত্রী গাড়ি থেকে নামলেন, পকেট থেকে টিস্যু বের করে সেই মলগুলোকে নিজ হাতে ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন। অতঃপর হাত ধুয়ে তিনি যাত্রা শুরু করলেন।
জাপানের একটি ঘটনা বলছি— নয় বসরের একটি বালক সুনামি তে তার বাবা, মা, ভাই, পরিবার সবাইকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সেখানে এক আশয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেন। প্রচন্ড শীত আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছেলেটি যেন মারা যাবে এই অবস্থা। ভলান্টিয়াররা রুটি বিলি করছেন। ছেলেটিও লাইনে গিয়ে রুটির আশায় দাঁড়ালো। এক বিদেশী সাংবাদিক দেখলেন যে পরিমান রুটি মজুত আছে সেটা লাইনের সবাইকে পোষাবে না। ছেলেটি হয়তো রুটি পাবে না। সাংবাদিক তার ভাগের রুটি দুটো ছেলেটিকে দিয়ে দিলেন। ছেলেটি ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সহিত রুটি গ্রহন করলো। এবং যেখানে রুটি ভাগ হচ্ছে সেখানে গিয়ে আবার জমা দিয়ে লাইনে এসে দাঁড়ালো। দৃশ্যটি দেখে সাংবাদিক কৌতুহলের সাথে জিজ্ঞেস করলেন — এই কাজ কেন করলে খোকা?
খোকা উত্তর দিলো, বন্টন তো ওখান থেকেই হচ্ছে — ওনাদের হাতে থাকলেই সবাই সমান ভাগে ভাগ পাবে। তাছাড়া লাইনে আমার চেয়েও ক্ষুধার্ত লোক থাকতে পারে। আপনি সহানুভুতি দেখাতে গিয়ে বন্টনে অসমতা এনেছেন। এই লজ্জায় সাংবাদিক নিজে নিজে অপরাধ বোধ করতে লাগলেন। নয় বছরের বাচ্চার কাছে কি বলে ক্ষমা চাইবেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
এখন আসা যাক আসল বিষয়ের দিকে: দেশ জলাবদ্ধতায় ভরে গেছে— আপনি সরকারকে একটা গালি দিয়ে” উন্নয়নের জোয়াড়ে ভাসছে বাংলাদেশ” — এই বলে একটা উপহাস মূলক স্টাটাস দিলেন। ব্যাস এখন আপনার কাজ শেষ— এইযে একটু দাঁড়ান!!! হ্যাঁ আমি আপনাকেই বলছি ” বাংলাদেশ” শব্দটা উচ্চারন করতে লজ্জা করেনি আপনার?
আজকে কাঁচা বাজার করে পলিথিন টা কোথায় ফেলেছেন? প্রেমিক/ প্রেমিকার সাথে রোমান্টিক ভাবে চিপস খাওয়ার পর চিপসের খালি প্যাকেটটা কোথায় ফেলেছেন? বাদামের ছোকলা কোথায় ফেলেছেন?
শুনুন— আপনি নিজেই তো একটা ” জলাবদ্ধতা”!! যদি জিজ্ঞেস করি ঠিক মতো ট্যাক্স আদায় করেছেন? তাহলে কি উত্তর দেবেন? বাসার ময়লা আবর্জনা ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেনে অথবা খালে ফেলে এসেছেন কেন? ডাস্টবিন কি চোখে দেখেন নি? খাওয়ার পর কলার খোসাটা রাস্তায় নিক্ষেপ করেন কেন? নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা যায় না? সিগারেট জ্বালিয়ে দিয়াশলাইয়ের কাঠি আর সুখ টান দিয়ে সিগারেটের পরিত্যাক্ত ফিল্টার এর অংশটা রাস্তায় না ফেলে নিজের পকেটে জমিয়ে রাখতে পারেন নি? বলতে পারবেন আজকে আপনি অফিসে গিয়ে ঘুষ নেন নি? দূর্নীতির ফাইলে সাইন করেন নি? কথায় কথায় ঢালাও ভাবে সরকার; সিটি কর্পোরেশনকে গালি দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরশন হয় না। দেশটা শুধু সরকারের নয়। আপনারও। আমাদের সবাইকে নিয়ে দেশ। আমরা ১৬ কোটি মানুষ। আমাদের ৩২ কোটি হাত। এই ৩২ কোটি হাত যদি একদিন দুর্নীতি না করে, একদিন অফিসে ঘুষ না নেয়, একদিন কলার খোসা রাস্তায় না ফেলে, খালে অথবা ড্রেনে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে —তাহলে মাত্র ১৬ দিনে কিংবা ৩২ দিনে দেখবেন দেশ পালটে গেছে। চলুন প্রত্যেকে নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি। দেশের জন্য দৈনিক অন্তত একটা ছোট ভালো কাজ করি। ১৬ কোটি মানুষ প্রতিদিন ১৬ কোটি ভালো কাজ করবে, একটা দেশকে উন্নয়নের জোয়াড়ে ভাসিয়ে নিতে এর চেয়ে আর বেশি কি লাগে?
আসুন, উপহাস না করে ধারনা পাল্টাই। হাতে হাত রেখে একসাথে কাজে কর্মে বলে উঠি ” উন্নয়নের জোয়াড়ে ভেসে উঠুক বাংলাদেশ”

Leave a Reply

Your email address will not be published.