এই দেশটা কার?

আমার জানামতে এই দেশটাতো আমাদের। আর আমাদের এই দেশটা পেতে কত রক্ত, কত তাজা প্রাণ ঝড়েছে তাতো সবাই জানে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনীময়ে এই দেশ। দুই লক্ষ্যেরও বেশী মা বোনের ইজ্জতের বিনীময়ে এই দেশ। এই দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটির মালিক দেশের আপমর জনগণ। দেশের প্রতিটি স্থানে গমনাগমনের সুযোগ সুবিধা এবং মৌলিক অধিকার রয়েছে এই দেশের জনগণের। এটাই বাংলাদেশের সংবিধান; অধিকার হিসেবে এই দেশের নাগরিকদের দিয়েছে। কিন্তু সেই অধিকার কি ভোগ করতে পারছে এদেশের জনগণ। যারা জীবন বাজী রেখে দেশ স্বাধীন করেছে সেই মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যরাও পেয়েছে সেই সুযোগ – সুবিধা ভোগ করতে। না পাইনি এর প্রত্যক্ষ প্রমান আমি নিজে।
আজ আমার বলতে বিবেক কষ্ট দিচ্ছে এই ভেবে যে প্রত্যেকটি মানুষইতো এই যন্ত্রণার স্বীকার এবং দিনকে দিন এর উৎপাত আরো বেড়ে যাচ্ছে। তাই কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে নয় বরং সচেতন হয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার এবং সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করার সুযোগ দিয়ে কোন বিভেদ বা বিভাজন সৃষ্টি না করে এক এবং অভিন্ন উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায়ে এই লিখা। আমি ১৭ বছর যাবত ক্যান্টনমেন্ট এ স্থায়ী বাসিন্দা হয়েও বিভিন্ন হয়রানীর প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হয়ে এক বাংলাদেশী নাগীরিক হিসেবে নিজেকে ভাবতে লজ্জা এবং ঘৃণায় দিনকি দিন নিমজ্জ্বিত হচ্ছি অন্ধকারের দিকে। এইরকম অজ¯্র মানুষ আজ প্রতিবাদি হচ্ছে। কেন এই প্রতিবাদ? কেন্টনমেন্টের দাবীদারগণতো আমাদেরই সন্তান, ভাই, বন্ধু এবং আত্মীয়। আমাদেরকে অস্বিকার করেতো তাদের কোন অস্তিত্বই নেই।
ক্যান্টনমেন্ট এ বসবাসকারীগণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বীত সদস্য। কিন্তু চাকুরী জীবন শেষে কোথায় আপনাদের প্রত্যবর্তন? আপনাদেরকে তো পাবলিককি যেতে হয় এমনকি ক্যান্টনমেন্টের বাইরে গিয়েও কাজ করতে হয় তখনতো কেউ আপনাদের বাধা দেয় না। বরং যাতায়াতের সুবিধা বের করে দেয়। কিন্তু আপনারা কেন দেশের মানুষকে হয়রানি এবং কষ্ট দিচ্ছেন?  অসুস্থ এমনকি মুমুর্ষ মানুষটিকে পর্যন্ত সিভিল হলে ক্যান্টনমেন্টের ভিতর দিয়ে যাতায়ত করতে দিচ্ছেন না। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সেই সন্তানদেরকেও ফিরিয়ে দিচ্ছেন, গুরিয়ে দিচ্ছেন গারী। সম্মানীত ব্যক্তি যারা সর্বোচ্চ বেতন পান, টেক্স দেন এবং বড় পদে কোন কোম্পানীতে কর্মরত বা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এমনকি বিভিন্ন সমাজিক যোগযোগ মাধ্যম অথবা দলীয় কোন পদের সম্মানীত ব্যক্তিদেরকে কেন যাতায়তে বিঘœ সৃষ্টি করছেন? অযথা কেন নিজের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করছেন? নিজের আপনজন ও পরিবারের সদস্যদেরকে বিষিয়ে তুলছেন। ভবিষ্যত পরিণতী সম্পর্কে কি কিছু ভাবছেন?
আমরা এই শান্তিপ্রীয় দেশে আর কোন রক্তপাত দেখতে চাই না তাই সচেতন করার লক্ষ্যেই এই লিখাটি। দেশের বাইরে গিয়ে আর্মীরা বা আমাদের দেশের সোনার ছেলেরা সম্মান অর্জন করেছে। নিরীহ ও গরীবদেরকে সেবা করছে। বিনীময়ে অর্জিত হচ্ছে সবুজ ডলার আর দেশের সম্মান। কিন্তু দেশে কি করছেন? সম্পূর্ণ উল্টো বা বিপরীত কাজটুকুই করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ভেবে দেখনতো কি করা উচিত আর কি করছেন? আর্মীদের প্রতি সাধারণ মানুষের যে শ্রদ্ধা ছিল তা কিন্তু দিন দিন শুন্যের কোটায় নেমে যাচ্ছে। সতেচন হউন এবং জনবান্ধব এমনকি সেবার কাজে আরো গভীরভাবে মনোনিবেশ করুন।
আগে একজন আমী আহত বা মৃত্যুবরণ করলে দেশের মানুষ কাঁদত আর এখন একজন মরলে কাঁদাতো দুরের কথা বরং হাসাহাসি এমনকি অভিষাপ পর্যন্ত দেয়। কেন এমন অবস্থার দিকে যাচ্ছে ভেবে দেখেছেন কি? ডিজিটাল যুগে আপনারা কি ডিজিটাল হতে পারেন না। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে সাধারণের যাতায়তে বিঘœ সৃষ্টি না করে বরং সাধারণের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কটাকে আরো নিবির করে আগামীর জন্য নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন না। পুরাতন সেই সিভিলিয়ান শদ্ব বা এর পুরোনো ভাবগত আদর্শ থেকে বের হয়ে আসার এখনই উপযুক্ত সময়। নতুবা আরো বর ধরণের বিপর্যয় অপেক্ষা করবে আমাদের গর্বের ধনদের জন্য।
বর্তমানে এই আমি ডিপার্টমেন্টটি ব্যবসার দিকে মনযোগ দিয়ে এগুচ্ছে। এমন কোন প্রোডাক্ট বা ব্যবসার ক্ষেত্র নেয় যেখানে আর্মীদের পদচারনা নেই। আসলে আর্মীদেরকে নিয়ে আমরা গর্ব করতাম এবং করতে চাই। কিন্তু সেই গর্বের জায়গাটুকু দিনকি দিন বিলীন হতে  চলেছে। এমন অবস্থায় নতুন আঙ্গীকে ডিজিটাল ফরমেশনে আর্মীকে সাজাতে হবে। নতুবা সেই পুরাতন এবং প্রাগঐতিহাসিক মনোভাব আজ সমস্ত অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। আমার চার বছরের মেয়েটি আর ৯ বছরের শিশুটিও আর্মিদেরকে ঘৃণা করতে শুরু করছে। শুধু মাত্র ক্যান্টনমেন্টের ভিতর দিয়ে যাতায়তগত ত্রুটির কারণে। এই সমস্যার আশু সমাধান দরকার। আরেকটি উদাহরণ হল যে দুর্নাম পুলিশের কাধে ছিল তা কিন্তু দিন দিন ঘুচিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন পুলিশের উপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে এমনকি কোন পুলিশের মৃত্যু সংবাদ এমনকি অসুস্থ্যতার সংবাদে মানুষ আবেগ দিয়ে দু:খ অনুভব করছে। যা আগে আর্মীদের জন্য করত। কিন্তু এখন তার উল্টো হচ্ছে। কেন হবে? আর কিছু লিখে নিজেকে ছোট করতে চাইনা তাই সবিনয় পরামর্শ এই; এখনই উপযুক্ত সময় জনবিচ্ছিন্ন না হওয়ার। যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে হয়ত একদিন পাবলিক ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আর্মীদের চলাচলে বাধা এমনকি জনবিদ্ধের্শমুলক তুঘলকি কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে।
আসুন আমরা নিজের পরিবার, সমাজ এবং দেশকে সম্মান করতে শিখি ও নিজ দেশের সম্মান ও প্রশংসা অর্জন করতে সেবার মনোভাবের পরিবর্তন করি। মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখি এবং প্রয়োজনের সময় মানুষকে সহযোগীতা করি। এটাই হোক আমাদের সেবার কাজের শুরু এবং আগামীর গঠনমূলক ও অংশগ্রহনমুলক সহবস্থানের দৃষ্টান্ত। দেশ সকলের। আর দেশের সকলের তরে সেবায় নিয়োজিত হউক আমাদের গর্বের সন্তান আর্মীরা। দেশের বাইরে যেমন সুনাম অর্জন করে যাচ্ছে তেমনি দেশের মানুষের তরে আরে বেশীকরে অর্জীত হউক সুনাম এবং জনমানুষের ভালবাসা এবং সহমর্মীতা ও শ্রদ্ধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.