নজরুল ইসলাম॥ প্রধান বিচারপতির পরিবারের আর্থিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। বিচারপতি সিনহা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে যথাযথ ভাবে আয়কর দিয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং তাঁর শ্যালকের বার্ষিক আয়কর বিবরণী নিরীক্ষা করছে তারা। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দুই কন্যা। একজন ভারতে থাকেন, অন্যজন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। তারা কীভাবে চলেন, বাংলাদেশ থেকে বৈধ অবৈধ পথে তাঁদের কোনো টাকা পয়সা পাঠানো হয়েছে কিনা। সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেছেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেকোনো ব্যক্তিরই আয়ের উৎস এবং তাঁর আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য খতিয়ে দেখতে পারে। এটাই আমাদের কাজ। এর মধ্যে অন্যকোনো যোগসূত্র খুঁজতে যাওয়া ঠিক না।’
এনবিআরের নথিতে দেখা যায়, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৯৭৪ সালে সিলেটে আইনপেশা শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি হাইকোর্টে এবং ১৯৯০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর বিচারপতি সিনহা হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে শপথ নেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি কত আয়কর দিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখছে এনবিআর। একই সঙ্গে বিচারপতি হবার পর তাঁর আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যপূর্ণতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বিচারপতি সিনহার স্ত্রীর সম্পত্তি, জমি-জমা, ব্যাংক হিসাব ইত্যাদির উৎস সম্পর্কেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তাঁর দুই মেয়েকে কীভাবে বিদেশ পাঠানো হলো সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান চলছে।
বিচারপতি সিনহা এবং তাঁর পরিবার অবৈধ পন্থায় কোনো অর্থ দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই তদন্ত কাজ করছে। গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রণালয় একটি অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে ‘বিষয়টি’ খতিয়ে দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়। ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের কাজ হলো অবৈধ অর্থ বিদেশ পাচার খতিয়ে দেখা। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার সময় এর নাম ছিল ‘এন্টি মানি লন্ডারিং ডিপার্টমেন্ট’। ২০১২ সালে এটির নাম পরিবর্তন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ‘প্রধান বিচারপতির দুই মেয়ে বিদেশে থাকেন, তাঁদের বাংলাদেশ থেকে কে, কারা, কীভাবে অর্থ পাঠিয়েছে তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহার সরকারি বাসভবনে তাঁর শ্যালক স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। তাঁর আয় এবং ব্যয়ের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর আয়ের উৎস সম্পর্কিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।