বিচারপাতিদের জবাবদিহিতা ও নিয়োগ বিধি

তাজুল ইসলাম নয়ন ॥ বাংলাদেশের ইতিহাসে বার বার কালো মেঘের ছায়ায় আচ্ছন্ন হতে দেখেছেন অনেকেই এবং আরো দেখার সুযোগ যেন না হয় সেই জন্যই প্রতিটি সেক্টরে এমনকি প্রতিটি স্তম্ভে আরো গভীরভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের ভিত্তি হলো বাংলাদেশ সংবিধান। এই সংবিধানকেও যুগোপযোগী করা উচিত। কারণ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

বার বার আমরা সংবিধান নিয়ে কথাবর্তা এমনকি টানা হেচড়া শুনেছি। সেই বাহাত্তরের সংবিধান ছিল এবং আছে ও থাকবে। আর ঐ সংবিধানকে যুগোপযোগী করে তোলাই হবে আগামী সংসদ এবং দেশবাসীর চাওয়া। কারণ এই নিয়েতো আর কম জলঘোলা করা হয়নি। সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া বাংলাদেশ সরকার যে সংবিধান প্রণয়ণ করেছিলেন তা শীরধায্য কিন্তু সেই শিশুবয়সের সংবিধানের সংগে নতুন কিছু যুক্ত করে যোগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি মাত্র।

এখানে আমি কয়েকটি বিষয়ের আলোকপাতে এই দেশের একজন নাগরীক হিসেবে কিছু পরামর্শ রাখতে চাই যা ভেবে দেখতে পারেন। কারণ আমরা আর নিজেরা নিজেরা মৌখিক এবং লৌকিক ও মনের গহীনে দ্বন্ধ এমনকি হানাহানি, বিবাদ ও মারামারিতে জড়াতে চাই না। সদ্য হওয়া প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের জনগণের যে ক্লেশ তৈরী হয়েছে তার পরিসমাপ্তি কল্পে এমনকি পূর্বের কিছু ঘটনার কারণে সৃষ্ট হওয়া ক্লেশ ও বিদ্ধেশের বিশবাস্প আজও সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এই কুড়ে খাওয়ার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যেই আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে অসাধ্যকে সাধন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে ক্লেশ ও বিদ্ধেশবীহিন জীবন এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দিকে।

আমরা জানি মহামান্য বিচারপতিগণকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন কিন্তু দিয়েছেন বিভিন্ন সুপারিশের ভিত্তিতে। এখন ঐ সুপারিশবিহীন নিয়োগ পক্রিয়ায় আমাদের যেতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন বিসিএস ক্যাডার যারা আইন পেশায় স্বীকৃত সেই বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখবেন। নন ক্যাডার থেকে আর বিচারপতি নিয়োগ দান করা সময়োচিত হবে না। কারণ ঐ নন ক্যাডার বাহিনীই যুগে যুগে বিভিন্ন সাংঘর্ষিক এবং স্বজাতিতে জাতিতে বিবেদ-বিভাজন সৃষ্টি করে গেছেন। যার জন্য আজ বঙ্গালী জাতিও বিভক্ত এবং যে জাতি নিজ থেকে বিভক্ত হয়ে যায় সেই জাতির উন্নতি সাধন খুবই দুরুহ হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ত হলো জবাবদিহীতা। এই জবাবদিহীতা একটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্ব স্ব বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের কাছে জবাবদিহীতা যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি জবাবদিহীতা জনগণের কাছেও প্রয়োজন। এমপি, মন্ত্রী; প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ সকলেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কাছে জবাবদিহীতা করতে বাধ্য এবং করেন। কিন্তু বিচারপতিদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হওয়া সমীচিন নয়। বরং তাদের জবাবদিহীতাটা আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন। প্রথমত সৃষ্টিকর্তার কাছে, দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রের কাছে। সংসদ থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সকল স্তরে জবাবদিহীতা করা বাধ্যতামূলক আবশ্যকীয় হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা জনগন আশা করি অতি শীঘ্রই এই জবাবদিহীতা এবং নিয়োগ বিধির পরিবর্তন ও পরিমার্জন যুক্ত হয়ে সংবিধান যুযোগপযোগী ভাবে আমাদের আগামীর প্রয়োজনে কাজ করবে।

এই বিষয়টি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের পরামর্শ মাত্র। গ্রহন ও বর্জন করার অধিকার সকলেরই সংরক্ষিত। আমি মাত্র মনের কোণে জামাটবাধা কথাই বললাম।

শ্রদ্ধেয় বিচারপতিদের বিচারিক ক্ষমতা সম্পূর্ণ স্বাধীন এখানে কোন হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। তবে ঘোষ, আত্মীয়তা এমনকি বন্ধু-বান্ধব দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বিভ্রান্তিমূলক বা অন্যায়মূলক রায় এর বহি:প্রকাশ ঘটলে যে ব্যবস্থা রয়েছে তাকে অক্ষুন্ন রেখে আর কি কি করা যায় … সেই ক্ষেত্রে তার ঐ স্বজনপ্রীতি রায়ের আলোকে জবাবদিহীতা আবশ্যকীয়। যদি ঐ ধরণের জবাবদিহীতা বজায় রাখা যায় তাহলে হয়তে এই ধরণের অনাকাঙ্খিত রায় আর জাতির কপালে তিলক আটতে পারবে না।  এখানে সর্বজন শ্রদ্ধেয় নিয়োগ দাতা রাষ্ট্রপতি এবং যার কাছে সংসদগণ দায়বদ্ধ সেই প্রধানমন্ত্রী যদি কোন বিতর্কীত বিষয়ে পরামর্শ এবং ব্যক্তিকে সংশোধন করে আগামী দিনের সকল রায় ঘোষণার ব্যাপারে ন্যায় ও সতাতা রক্ষার ব্যবস্থা করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা যায় তাহলে হয়ত জনগন আরো বেশী আস্থাভাজন হয়ে বিচারবিভাগকে সহযোগীতা করে যাবে এবং সম্মানীয় বিচারকদের আর কোন দোষারোপ বা নেতিবাচক কোন বিরুপ মন্তব্য করবে না। আমরা বিশ্বাস করি সদিচ্ছা একটি বিশাল আশির্বাদ আর এই আশির্বাদকে কাজে লাগীয়ে এগিয়ে গেলেই হয়ত আগামী দিনে আরো সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার চর্চা প্রর্তক্ষ করা যাবে। আমাদের দেশে ন্যায় পরায়নতার এবং নিরপেক্ষতার চর্চার ঘাটতি রয়েছে আর এই ঘাটতির আলোকে এখ নপর্যন্ত সকল কালো মেঘের থাবা আমাদের সহ্যকরে যেতে হয়েছে।

আমরা মানুষ এবং আমাদের ভুল হবেই। আর এই ভুলের জন্য খেসারতও দিতে হচ্ছে এবং হবে। তবে একজন সম্মানিত পদে অধিকারীর ভুলের জন্য সমগ্র জাতি মিলে খেসারত দিবে তা হয় না। সেই জন্যই জবাবদিহীতা গুরুত্বপূর্ণ। জবাবদিহীতার উদ্ধে উঠে কেউ ন্যায় এবং নিরপেক্ষ কাজ কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, ভবিষ্যতে হবে না এবং  অতিতে হয়ওনি। তবে ন্যায় ও নিরপেক্ষ কাজ একমাত্র সম্ভব আল্লাহ তায়ালার দ্বারা (খোদা, ভগবান, ঈশ্বর এক কথায় সৃষ্টিকর্তার দ্বারা)। তাই মানুষকে জবাবদিহীতার বাইরে রেখে কাজ করতে দেয়টা হবে স্বেচ্ছাচারিতা ও সৈরাচারী মনোভাব জাগ্রত রেখে ন্যায়পরায়নতা এবং স্বজনপ্রীতির সংমিশ্রনে পথ চলতে বাধ্য করা। দুই নৌকায় পা দিয়ে আসলে কাজ করা যায় না।

আইনে থাকা উচিতঃ ঐ পদে আসীন ব্যক্তি কি কথা এবং কতটুকু কথা বলতে পারবে আর কতটুকু পারবে না। কারন পাবলিকলি বেশী বা অতিরিক্ত কথা বলা একটি অভিষাপে পরিণত হয়েছে আমাদের এই ডিজিটাল যুগে। কথাগুলো পাটিগণিতের ন্যায় হচ্ছে। আর ভাষা না বুজে ভুল করছে একদল আর বুজে সঠিক পথে এগুচ্ছে আরেক দল। সুতরাং এই কথার পাটিগাণীতিক হিসাব নিকাস থেকে বের হয়ে সমাজ ব্যবস্থাকে শান্তিপ্রীয় করে রাখাই মুখ্যম উদ্ধেশ্য হয়ে আচরণ বিধি প্রণয়ন সময়ের দাবি।

প্রতিবাদ, বিরুপ মন্তব্য এবং সমালোচনার ডিফেন্সিব জবাব দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বরং নিরব ভাষায় সকল কিছু সহ্য করে ঐ সমালোচক, প্রতিবাদকারী এবং বিরুপ মন্তব্যকারীদের কর্ণপাত না করে সম্মান প্রদর্শন করাই এখন সময়ের দাবি। তাই সকল কিছু সহ্য করে অভিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেলে হয়ত আগামী দিনে সমালোচনা ও বিরুপ মন্তব্যকারী এবং প্রতিবাদকারী আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ ঐসকল করে সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কোন ফলপ্রসুতা না এলে কে আর এইসকল করে বেড়াবে। তাই ভেবে দেখা উচিত কি করা যায় ঐ সম্মানীত ব্যক্তি এবং পদের সম্মান রক্ষার্থে।

পুরাতন ঘুণেধরা জ্ঞানীদের কাছে কোন চাওয়া পাওয়া ও মতামত চাইনি কারণ এই পর্যন্ত তাদের কোন মত ও পথ জাতির ক্রান্তিকালে কোন কাজে আসেনি। এখন নব্য এবং উদীয়মান জ্ঞান ও উর্বর মস্তিষ্কের উদার মানুষজনই পারেন জাতীর প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি, আনন্দ, নিশ্চয়তা এবং আশা নিয়ে আগামীর কল্যাণে পথ চলতে এবং চালাতে।

সবাই ভাল থাকুন … আবার দেখা হবে নতুন কোন প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.