নইসলাম॥ ঈদুল আযহার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকার মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষনা করেছিলেন এবারের ঈদে তিনি ও তার কর্মীবাহিনী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করবেন। তিনি ঢাকা এবং এর বাসিন্দাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে সেবা দিতে চান। প্রত্যেকের মনের চাহিদানুযায়ী এবং নগরবাসীর সুস্থ্য জীবন ও পরিবেশের নিশ্চয়তা দিয়ে এই মেয়রদ্বয় কাজ করে যাচ্ছেন। এবার কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুতগতিতে অপসারণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। মেয়র আনিসুল হক অসুস্থ থাকায় উত্তর এবং দক্ষিণের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দেখভাল করছেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। ঈদের পূর্বে তার বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে রাজধানীর প্রায় ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ হয়ে যায়। গত সোমবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বর্জ্য রাখার জায়গাগুলো পরিষ্কার করে সেখানে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে দেয়া হয়েছে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করে নগরবাসীকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেয়ায় মেয়রকে অনেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। গত সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মুগদা-মান্ডা, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, রাজারবাগ, আরামবাগ, সেগুনবাগিচা, গোপিবাগ, পল্টনসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর বর্জ্য অনেকাংশেই সরানো হয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় নতুন করে কোরবানি হওয়ায় নতুন বর্জ্য জমছে, সেগুলোও দ্রুতগতিতেই সরানো হচ্ছে।
সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে কথা হয় আমাদের প্রতিনিধির। মেয়র বলেন, ‘আমরা উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। ঈদের দিন বেলা ২টা থেকে গতকাল ২টা পর্যন্ত ঘোষিত সময়ের মধ্য ৯০ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করতে পেরেছি। এটা চলমান রয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট বর্জ্য অপসারণ করা হবে।’
ঈদুল আজহার কোরবানি দেয়া যায় তিন দিন পর্যন্ত। তিন দিনে ঢাকা দক্ষিণে ১৮ হাজার মেট্রিক টন ও উত্তরে ১০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য হতে পারে বলে ঈদের আগেই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন মেয়র সাঈদ খোকন।
মেয়র বলেন, রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত দক্ষিণে তিন হাজার ট্রিপে ১৪ হাজার মেট্রিক টন ও উত্তরে এক হাজার ৬৮৬ ট্রিপের মাধ্যমে আট হাজার ২৭০ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট বর্জ্য দ্রুত সময়ে অপসারণ করা হবে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে কথা হয় খিলগাঁওয়ের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নঈমের সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদের দিন থেকেই আমার অঞ্চলের কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই অঞ্চলের বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। এই অঞ্চলের বর্জ্য শতভাগ অপসারণ করা হয়েছে। তবে আজও কিছু কিছু জায়গায় কোরবানি দেয়া হচ্ছে, সেগুলোও দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপসারণ করা হবে।’
কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতনের সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের মেয়র ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২৪ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের। আমরা ঈদের দিন থেকেই বর্জ্য অপসারণ শুরু করি, তা ঈদের দিন বিকালের মধ্যেই আমার ওয়ার্ডের বর্জ্য শতভাগ অপসারণ করতে পেরেছি।’
ঈদের আগে সিটি করপোরেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, এবার ঢাকায় প্রায় চার লাখ ৭৫ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশুর বর্জ্য সরিয়ে নিতে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করবেন। যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশ দূষণ এড়াতে এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২৫টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৯টি স্থান পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। তবে গতবারের মতোই নগরজুড়ে রাস্তা ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য বেশি দেখা গেছে।
সোমবার রাজধানীর দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট থেকে বাঁশের খুঁটি সরিয়ে নেয়া হলেও আবর্জনা রয়ে গেছে। পরিচ্ছন্নতার কাজে থাকা একজন শ্রমিক বলেন, আমরা পরিষ্কার করছি, তবে পুরো সাফ করতে আরও সময় লাগবে।
শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠে অস্থায়ী হাটের বাঁশের খুঁটি সরানো হলেও আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়নি। হাটের গরু রাখা হয়েছিল রেলওয়ে কলোনির বিভিন্ন ভবনের সামনেও। সেসব আবর্জনাও পুরোপুরি পরিষ্কার করা হয়নি। তবে প্রধান সড়কের আবর্জনা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে কোনো এলাকার বর্জ্য অপসারণে দেরি হলে সিটি করপোরেশনের হটলাইন ০৯৬১১০০০৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আমাদের লোকজন সব সময় মাঠে আছে। কোথাও এরকম থাকলে আমাদের জানান, আবর্জনা সরানো হবে।