শেখ হাসিনাকে উৎখাতে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি প্রশিক্ষণ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জাল বিস্তার করেছে জঙ্গি সংগঠন শাহাদাত-ই আল হিকমা। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ এবং বর্ধমানে গোপন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প পরিচালনা করছে জঙ্গি সংগঠনটি। ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ এক প্রতিবেদনে শুক্রবার এ খবর দিয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টালিজেন্স ব্যুরোর সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে তিনটি জেলায় কমপক্ষে ১৫টি মাদ্রাসায় এই প্রশিক্ষণ শিবির চলছে।

এই গোয়েন্দা তথ্য পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, যে মাদ্রাসাগুলি এই প্রশিক্ষণ শিবির চলছে, সেগুলি চিহিৃত করার চেস্টা করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে যুগশঙ্খ লিখেছে, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এখন কোনঠাসা। বাংলাদেশে আইনশৃংখলা বাহিনী এবং ভারতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার সাঁড়াশি চাপে জেএমবি ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেই জায়গায় মাথা চাড়া দিয়েছে অখ্যাত শাহাদত ই আল হিকমা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই সংগঠনটির পিছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই রয়েছে।

মূলত আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের টাকাতেই এখন ওই জঙ্গি সংগঠনের কাজকর্ম চলছে। করাচি থেকে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসে দাউদের টাকা। সেই টাকা পাচার হয়ে চলে আসছে পিশ্ছিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলিতে।

গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে পত্রিকাটি লিখেছে, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর সামনে আসে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার জন্য কীভাবে জেএমবি চক্রান্তের জাল বিস্তার করেছিল। শাহাদাত ই আল হিকমাও একদম জেএমবির ছকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছে।

Jongi training in pos bongo

জেএমবি যেমন পশ্চিমবঙ্গের মকিমনগর বা শিমুলিয়ার মাদ্রাসাগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতো, এই সংগঠনটিও সেইভাবেই মাদ্রাসাগুলিকে ব্যবহার করছে। এই সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্যই হল বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকাকে উচ্ছেদ করে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা। বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের কোনও কোনও সংখ্যালঘু নেতা যোগাযোগ রাখেন বলেই গোয়েন্দারা জানিয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে ভারতীয় পত্রিকাটি লিখেছে, চট্টগ্রামের টেকনাফের বাসিন্দা মাওলানা আসিফ নামে এক জঙ্গি এখন শাহাদাত ই আল হিকমার প্রধান। পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের জাল বিস্তারের জন্য রাজ্যের শাসকদলের এক নেতার সঙ্গে সে যোগাযোগ রাখে। ওই নেতার সঙ্গে নিষিদ্ধ একটি ইসলামী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। ওই নেতার মাধ্যমেই মূলত পশ্চিমবঙ্গের শাহাদাত ই আল হিকমার জন্য অর্থ আসে।

পত্রিকাটি লিখেছে, আগে মালদা জেলায় এই সংগঠনের জাল বিস্তৃত ছিল। কিন্তু মলদায় জাল নোটের কারবার এবং গরু পাচারের জন্য গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারি থাকায় উত্তর দিনাজপুরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদ এবং বর্ধমানে জেএমবির পুরনো নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়েই আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে। জেএমবির স্লিপার সেলগুলিই এখন শাহাদাত ই আল হিকমার ছাতার তলায় সক্রিয়।

২০০৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে শাহাদাত ই আল হিকমার জন্ম। কাওসার হোসেন সিদ্দিকি নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক ছিলেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। প্রথম থেকেই এই সংগঠনের পেছনে ছিল দাউদ ইব্রাহিমের প্রত্যক্ষ সহায়তা। বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তার পরেই রাজশাহী থেকে সংগঠনের সদর দপ্তর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামের দুর্গম নাইক্ষ্যংছড়িতে। এখন চট্টগ্রামে থেকেই সংগঠনের কাজ চলে।২০১৪ সাল থেকে জেএমবির বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান শুরু হওয়ার পরেই এই সাহাদাত ই আল হিকমাকে সক্রিয় করা হয়। এর আগে এই সংগঠনটিকে হুজি এবং জেএমবির মতো সংগঠনের সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহার করা হত।

Leave a Reply

Your email address will not be published.