শেখ হাসিনার মেমোরি কার্ড…

রাইসলাম॥ গল্পটা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান। একটি বিভাগের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য। প্রস্তাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তিনটি নাম পেশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিব এভাবেই ফাইল পেশ করলেন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য। প্রধানমন্ত্রী ফাইল নিয়ে ডাকলেন সচিবকে। তিনজনের সম্পর্কে আদ্যেপান্ত বললেন। তারপর জানালেন, তৃতীয় জনই এই পদের যোগ্য। সেভাবেই ফাইল অনুমোদিত হলো। পরে মোল্লা ওয়াহেদ তিনজন সম্পর্কেই খোঁজ নিলেন। তারপর দেখলেন, প্রধানমন্ত্রী তিনজন সম্পর্কে যা বলেছেন, তা হুবহু সত্য। এটা একটা উদাহরণ। এরকম উদাহরণ অনেক দেওয়া যাবে, যেখানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতা, আমলাদের হাড়ির খবর অনেকের চেয়ে বেশি জানেন।
একজন নেতাকে নিয়ে এলাকায় সমস্যা হচ্ছে। লোকজন এলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ নিয়ে। যারা এলো, তাঁদের একজনকে প্রধানমন্ত্রী বললেন, সমস্যা তো সে নয়, সমস্যা তুমি। অমুক দিন তুমি মিটিং করে তাঁর বিরুদ্ধে কেন কথা বললে। প্রতিদিন এরকম ঘটনা ঘটছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিশক্তি, চিন্তা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতার নতুন নতুন দিগন্ত  উন্মোচিত হচ্ছে। এই গুণটি ছিল বঙ্গবন্ধুর। জাতির পিতা কাউকে একবার দেখলে, বহুবছর পরও তাঁকে নাম ধরে ডাকতে পারতেন। অনেক সময় ভরা মজলিশে বঙ্গবন্ধু কারো নাম ধরে ডেকে, তাঁকেই চমকে দিতেন। শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সূত্রে বঙ্গবন্ধুর অনেকগুলো গুণই পেয়েছেন, কিন্তু একটা গুণ অনেক বেশি পেয়েছেন, তা হলো স্মৃতিশক্তি।
এক সময় আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদকে জীবন্ত ডিকশনারি বলা হতো। শত শত ফোন নাম্বার তিনি মুখস্থ বলতে পারতেন। তোফায়েল আহমেদ নিজেই বললেন, এই অভ্যাসটা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে তিনি শিখেছেন। জাতির পিতা প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক কর্মীর নাম, তাঁর ছেলে-মেয়েদের খোঁজ খবর সবই জানতেন। এখন এই খবর রাখেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য এ প্রসঙ্গে একটি গল্প বলছিলেন। ইউনিউন পরিষদের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় শেখ হাসিনা প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান মনোয়ন প্রত্যাশীর আদ্যোপান্ত মুখস্থ বলছিলেন। বোর্ডের সবাই এটাতে বেশ অবাক হয়ে যায়। জাতির পিতা কর্মীদের কথা সব সময় স্বরণ রাখতেন। শেখ হাসিনা শুধু দলের কর্মী নয়, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিদেরও হাড়ির খরব রাখেন। কিছুদিন আগে, সচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য একজনের ব্যাপারে আপত্তি উঠল, প্রধানমন্ত্রী ওই আপত্তির বিরোধিতা করে, তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সচিব হয়েছেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে খোঁজ রাখা যেমন জরুরি, তার চেয়েও জরুরি সঠিক খোঁজ খবর রাখা এবং খোঁজ খবরের ভিত্তিতে তাঁকে মূল্যায়ন করতে পারা। শেখ হাসিনার অনন্য গুণের একটি হলো, মানুষ চিনতে পারা। তিনি তথ্য উপাত্ত তো সংগ্রহ করেনই, পাশাপাশি, সেই তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে পারেন দারুন ক্ষমতায়। এই কারণেই  হয়তো রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনা এক নতুন উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন। তার শক্ররাও বলেন, শেখ হাসিনার মেমোরি কার্ড কত বড়? সব কথা তিনি মনে রাখেন কীভাবে? এই স্মৃতিশক্তি কি তাঁর সব থেকে বড় শক্তি? সিদ্ধান্ত গ্রহণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার?

Leave a Reply

Your email address will not be published.