ট্রাফিক বিরম্বনা

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ গত ২০/০৯/২০১৭ইং রোজ বুধবার বিকেল এক ঘটনার খন্ডচিত্র। যা প্রায়শই বা হরহামেশাই দেখা যায়। তবে এই বিরম্বনার অবসান হওয়া দরকার। নতুবা জন অসন্তোষ সৃষ্টি এবং ট্রাফিক সার্জেনটের দৌরাত্বের অকল্যানে জীবন নাশের মত ঘটনা ঘটতে পারে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় গারির মালিককেও ড্রাইভার ভেবে যা তা বলে বসে। মনে হয় ড্রাইভাররা কোন মানুষই না। ট্রাফিকের দায়িত্ব সেবা করা; কিন্তু খরবদারী করা নয়। এটা মনে রাখতে হবে। এই বিষয়টি যদি মনে না থাকে তাহলে ট্রাফিক এর দায়িত্ব না নেয়াই ভাল। আমি যা বলছি বা লিখছি তা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। যা আমার সঙ্গে ঘটেছে, এমনকি অন্যের সঙ্গে ঘটেছে যা আমি প্রত্যক্ষ করেছি।
বিশেষ করে বিপনী বিতান বা শপিং মলের সামনে গাড়ি রাখা যাবে না তা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যায় আচরণ। তাহলে সরকার নেই ঐ দোকানগুলোকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিল। ঐ স্বীকৃত দোকানের সামনেই ঘটে যত বিপত্তি। গত বুধবারের বিষয়টি ছিল বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউ এর বাটা দোকানের সামনে। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বাটা দোকানে ঢুকে মাত্র জুতা দেখ একজোড়া কিনে দাম পরিশোধ করে বের হব। এমন সময় আমার ড্রাইভার এসে বলে ভাই গাড়ি সার্জেন ধরেছে। আমার গাড়িটি বাটা দোকানের সামনে পার্কিং করা; শুধু যে আমার গাড়ি তা কিন্তু নয়, ওখানে আরো ১০টির মতো গাড়ি কেনা কাটার জন্য পার্কিং করা ছিল। আমি ভদ্রলোক ট্রাফিক সার্জেনকে বিনয়ের সঙ্গে জিঞ্জেস করে বললাম ভাই কি হয়েছে। ওনি বললেন অবৈধ পার্কিং এর জন্য মামলা হবে। তাই মামলা দিচ্ছি। তখন বললাম ভাই এই সব গাড়িগুলোকেই কি মামলা দিয়েছেন নাকি শুধু আমার গাড়িটাকে দিবেন। ওনি বললেন কথা কম বলেন। তখন আমি বললাম দয়া করে মামলা দিবেন না । কারণ মামলা দেবার মত কোন অপরাধ এই গাড়িটি করেনি। আর আপনাকে আমার উপর খবরদারি করার জন্য সরকার রাখেনি বা আমরা ট্রেক্স দেইনি। আমি আমার পরিচয়টি দিলাম এবং বললাম আমি আইনও জানি এবং আইন পালন করি এমনকি অন্যকে করাতে সাহায্য করি। সুতরাং মামলা দিবেন না।
তখন ওনি বলে মামলা দিবো। আমি ওনাকে বলি মামলা দেয়ার আগে এই দোকানগুলো এখান থেকে উঠিয়ে আসুন। নতুবা এখানে কোন মামলা দেয়া যাবে না। দেখা গেলা ভদ্রলোক সার্জেন্ট ধীরে ধীরে অভদ্র হতে শুরু করল। তখন আমি বললাম এখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটবে যা দেখে সারা জীবন তোমার মনে থাকবে অভদ্রতা এবং অন্যায়ের শাস্তি কখনো কখনো সাথে সাথেও পাওয়া যায়। আমি বললাম ৭৫ পয়সা জরিমানা দেয়ার বিধান এখনও আছে; যদি আমি অন্যায় করি। আর তুমার অন্যায়ের শাস্তি কিন্তু অনেক হবে। তখন সে মামলা লিখল আর আমি ধৈয্য ধরে তাকে কিছু না বলে তার বসকে ফোন দিয়ে বললাম এই ঘটনা তখন তিনি ফোনটি ঐ সার্জেনকে দিতে বলে এবং দিলাম।
সার্জেন আমার নামে নালিশ দিয়ে বলল মামলা দিবে তখন তার বস তাকে মামলা না দিয়ে দু:খ প্রকাশ করে চলে যেতে বললে; সে দু:খ প্রকাশ দুরের কথা মহা প্রলয়ের ভাব নিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করে। আমি বলতে চাই এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
আরো একটু গভীর গিয়ে বলি; এই বছরের গোড়ার দিকে মতিঝিলের আরামবাগে আমার পত্রিকার অফিস এবং পতিনিয়ত ছাপা হয়। মাঝে মাঝে ঐ প্রেসে আমি যাই; কখনো মেয়ে বা কখনো ছেলেকে নিয়ে। ঠিক একদিন গেলাম এবং গাড়ি পার্কিক করলাম ডালাস নামক বিখ্যাত দোকানের সামনে। যেখানে আরো ৫০এর মাত গড়ি পার্কিং করা ছিল। আমি আমার মেয়েয়ে কিছু কিনে দেয়ার জন্য দোকানে ঢুকলাম এবং কিনে বের হয়ে দেখি গাড়ির চাকায় তালা ঝুলাচ্ছে। আমি ঐ সার্জেন্টকে বললাম ভাই সাহেব কি করছেন। এখানেতো পার্কিং এর অনুমতি আছে আর যদি অনুমতি না থাকে এই এলাকায় কাজের জন্য আসা মানুষগুলো কোথায় রাখবে তাদের গাড়ি দেখিয়ে দিন। তাহলে আর এখানে রাখব না। তারপর বললাম ভাই আমার গাড়িটিতে তালা দিয়েন না আমি বহুজাতিক মানুষ এবং এখানে এসেছি সম্পাদক এবং প্রকাশক এর দায়িত্ব পালন করতে। কাজটি আমাকে করতে দিন নিশ্চিত মনে, তখন ওনি বলে আমার কিছু করার নেই, বললাম কার করার আছে, তখন বলে আমার বসের; জিঞ্জেস করলাম আপনার বস কোথায় বসে বা এখন কোথায়? তিনি বলে ঐ বস্কে। ঠিক আছে আমার এই কার্ডটি দিয়েন। আর আমি কাজ শেষ করে আসছি আপনার বসের কাছে। বলে প্রেসে গেলাম।
একঘন্টা পর প্রেস থেকে ফিরে এসে ব্যস্ত রাস্তা ক্রস করে মেয়েকে নিয়ে ঐ বস্কে গেলাম এবং যথারিতি পরিচয় দিয়ে বললাম তখন ঐ ভদ্রলোক বিনয়ের সঙ্গে বলল আপনার গাড়ির তালা খোলা আছে। ধন্যবাদ দিয়ে ফিরে এলাম এবং যথারিতী গরমের তীব্রতায় পরিশ্রম ও অনাকাঙ্খিত বিড়ম্বনার অবসান হলো।
আরেকটি ঘটনা একই বছর গোড়ার দিকে গোলশান সার্কেলে এম কে ইলেক্টনিক্স দোকানের সামনে। পার্কিং প্লেসে পার্কিং করে কেনাকাটা করছি। এমন সময় একজন ভদ্রলোক এসে আমার গাড়িতে আঘাত করছে। ঐদিন শুক্রবার হওয়ায়, ড্রাইভার ছুটিতে আমি নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। তখন দোকানের স্যালসম্যান আমাকে বলে স্যার সারজেন্ট আপনাকে ডাকছে। আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হলো ভাই সাহেব। তিনি বলেন আপনার গাড়ির কাগজ দেখব। তখন বললাম আমার গাড়ির সব কিছুই পরিস্কার। কোন যামেলা নেই, তখন বলে দেখান, আমি বললাম দেখবেন, ঠিক আছে চলেন, গিয়ে কাগজ বের করে দিলাম তিনি কাগজ নিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে কোন কিছু না বলে। আমি ওনাকে বললাম ও ভাই কোথায় যাচ্ছেন আমার কাগজটা দিয়ে যান। তখন বলে আপনার গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হবে। তখন বললাম মামলা দিবেন না এটা অন্যায় হবে। আমি কেনাকাটা শেষ করে আসছি। এই বলে গিয়ে কেনাকাটা শেষ করলাম এবং আমি আর আমার এক আমেরীকান বন্ধু দুপুরের খাবার খেয়ে আসলাম। সে বলে তোমার দেশের ট্রাফিক অসৎ। পার্কিং এলাকায় কেন মামলা হবে, এটা অন্যায়। তখন আমি বললাম এটা হলো তাদের ক্ষমতার দম্ভ এবং ব্যক্তিগত আয়ের একটি উৎসও বটে।
আমি ঐ কাগজ নেয়া সার্জেন্ট সাহেব খুজে না পেয়ে দায়িত্বরত পুলিশকে বললাম ঘটনা; তখন ওনি ঐ সার্জেনকে খুঁজে বের করে দিল। ঐ ভদ্রলোক এক দোকানে বসে এসির বাতাস খাচ্ছে আর দিব্বি কথা বলছে। তখন আমি গিয়ে বললাম ভাই আমার আর সময় নেই; সব কাজ শেষ এখন কাগজগুলো দিন যাই। সে বলে মামলা হবে। তখন কথা না বাড়িয়ে আমার স্বভাব সুলব পুলিশ অফিসারকে ফোনে বললাম; তখন তিনি ফোনে কি বলল, জানলাম না এবং দেখলাম কাগজগুলো আমাকে দিল। আমি বিরক্ত হয়ে কিছু না বলে চলে গেলাম। বলেনতো এই যদি হয় আমাদের সেবার ধরন তাহলে কিভাবে আমরা টেক্স পরিশোধ করব এবং ধৈয্য ও সম্মান প্রদর্শন করব?
এবার বলি আরো কঠিন একটি পরিস্থিতি মুখোমুখি হওয়ার কথা। গত বছর আমর তিনজন বন্ধু এক অফিসিয়াল প্রোগ্রামে খাগড়াছড়ি যাচ্ছিলাম। একজন আমেরীকান ইনভেষ্টর বন্ধু ও আর একজন আমেরিকান দক্ষ নারী কর্মকর্তা ও আমার ড্রাইভার। আমি ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে না দিয়ে নিজে গাড়ি চালাচ্ছিলাম নিরাপত্তার জন্য। আমি আর আমার বন্ধু গল্প করে ধীরলয়ে এগুচ্ছি। কারন দাউদকান্দি থেকে বিশাল জ্যাম। এই জ্যামের মধ্যে এক পুলিশ আসল এবং আমার গাড়িতে একটি বর্জাঘাতসূলভ লাঠির আঘাত করলো। যাতে আমরা ভিতরে বসা সবাই হতভম্ব হয়। কিছুক্ষণ পড়ে জানালার গ্লাস খুলে বলি ভাই কি হয়েছে; আপানি গাড়িতে আঘাত করলেন কেন? এই কথা বলতে না বলতেই সেই আমাকে আমার মুখে এক ঘুষি মারে এবং সামনের দিকে হেটে যাচ্ছে। এই অবস্থা দেখে আমাদের বিদেশী বন্ধু লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। অনেক্ষণ পরে আমি বের হয়ে গিয়ে আর ঐ পুলিশ নামের কলঙ্ককে খুজে পাইনি। তখন ঐ এলাকার দায়িত্বরত ট্রাফিক সম্ভবত এ এসপি সাহেবকে ঘটনাটা বলি; কিন্তু তিনি কোন ভ্রুক্ষেপ না করে বলে আপনার অন্যায় হয়েছে তাই সে মেরেছে। এই কথা শুনে মনে আরো রাগ হলো এবং ওনাকে বললাম আপনি পড়ালেখা করেছেন নাকি পড়ালেখা ও প্রশিক্ষণ বিহীন এই বাহিনীতে দায়িত্ব পেয়েছেন। এইভাবে অনেক কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এসপি মহোদয় এলেন এবং সরি বলে দু:খ প্রকাশ করলেন। কি আর কথা কুকুরের কাজ কুকুরে করেছে তাই বলে কি আমার মত অধমের সাজে ঐ কাজে সায় দেয়া।
শেষ মেষ ক্ষমা করে ফিরে এলাম। শেষ উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঐ ঘটনা বললে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মনের জালা গোছাতে সাহায্য করে। আরো অনেক ঘটনার স্বাক্ষী হয়েই রইলাম। সামান্য একটু প্রকাশ করে ঐ ধরনের বিরম্বনা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার আহবান জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.