বিশ্বমঞ্চে কিমকে উড়িয়ে দেবার হুমকি… ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ ইঙ্গিতটা ছিলই। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার মঞ্চে সারা বিশ্বের প্রতিনিধির সামনে প্রথমবার মুখ খুলবেন তিনি। আর প্রথমেই এক হাত নেবেন কিম জং উনকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক তেমনটাই করলেন। বিশ্বমঞ্চে প্রকাশ্যেই বলে দিলেন, উত্তর কোরিয়া ‘বেশি বাড়াবাড়ি’ করলে কার্যত তাদের ধ্বংস করে দেবে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘‘আমেরিকার ক্ষমতা প্রচুর। সেই সঙ্গে ধৈর্যও। কিন্তু নিজেকে বা নিজের মিত্র পক্ষকে যদি বাঁচাতে হয়, তা হলে আমাদের কাছে উত্তর কোরিয়াকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।’’ কিমকে ‘রকেট ম্যান’ বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘উনি তো আত্মহত্যার পথে হাঁটছেন।’’
বস্তুত কয়েক মাস ধরে একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জের মুখে রেখেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। খুব সম্প্রতি শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা সেরে ফেলেছেন কিম। তাঁর এক একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা যত ভারী হয়েছে, ততই সুর চড়েছে কিমের। উত্তর কোরিয়ায় বসে আমেরিকার বিভিন্ন শহরকে ধ্বংস করার হুমকি দিয়ে গিয়েছেন তিনি। মাস কয়েক আগে প্রশান্ত মহাসাগরীয় মার্কিন দ্বীপ গুয়ামকে উড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন কিম। জবাব দিয়েছিলেন ট্রাম্পও। জানিয়েছিলেন, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরাও। কালই কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন বাহিনী মহড়া চালানোর সময় আসল বোমা ফেলেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনী। তবে কিমকে কড়া ভাষায় আক্রমণের পাশাপাশি একটা সময় কিছুটা সুর নরমও করেছেন ট্রাম্প। বলেছেন ‘‘আমার মনে হয় না, উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংসের প্রয়োজন হবে। কারণ পিয়ং ইয়ংয়ের কাছে এখন একটা রাস্তাই খোলা আছে, সেটা হল পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ।’’
অথচ ট্রাম্প আজ শুরুটা কিন্তু করেছিলেন ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করে। ‘‘আমেরিকায় আমরা কারও উপর নিজেদের জীবনধারা চাপাতে চাই না। বরং চাই প্রত্যেকেই নিজের মতো করে নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠুক।’’ ঠিক এর পরেই আবার তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি কিন্তু চাইব, সবার আগে আমার নিজের দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে।’’ নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে যে তিনি অন্যকে ধ্বংস করতে দু’বারও ভাববেন না, তা আজ ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
পিয়ংইয়ংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব পাশের জন্য আজ চিন আর রাশিয়ার সহযোগিতাও চেয়েছেন ট্রাম্প। কালই চিন আর রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। এবং দু’পক্ষই জানিয়েছেন, তাঁর চান শান্তির পথে হাঁটুক আমেরিকা আর উত্তর কোরিয়া। কিম যদিও আগে ভাগেই বলে রেখেছিলেন তাঁদের উপর যত বেশি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হবে, তত দ্রুত তাঁরা নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে আজ ইরানকেও এক হাত নিয়েছেন ট্রাম্প। বারাক ওবামার আমলে করা ওই চুক্তিকে তিনি বাতিল করার কথা ভাবছেন বলেও জানিয়ে রেখেছেন। দেশের অভ্যন্তরীণ পরমাণু কর্মসূচিতে অন্য কারও নাক গলানো বরদাস্ত করা হবে না বলে বরাবর দাবি করে এসেছে তারা। কাল খোদ প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি কিমের সুরেই হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘‘এ ভাবে চললে আমেরিকা তছনছ হয়ে যাবে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published.