দেশরত্ন শেখ হাসিনা…মানবিক নেতৃত্বের পাঠশালা

টিআইএন॥ বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তনয়া প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ভেবেছিলাম রবি ঠাকুরের ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ আমার এই প্রিয় সঙ্গীত দিয়েই শুরু করব। কিন্তু অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গে পুরো বাঙালী জাতি বর্তমানে এক কঠিন মানবিক বিপর্যয় পর্যবেক্ষণ করছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে সে দেশের অতি প্রাচীনকাল থেকে বসবাসকারী মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক জান্তার নেতৃত্বে ঘৃণ্য-ধিকৃত নৃশংস ও বর্বরতম হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি সভ্যতার ইতিহাসে আজ এক ব্যতিক্রম নির্মম বাস্তবতা। বিশ্বনিন্দিত এই জঘন্য অপরাধ কর্মের পেছনে যার শুধু সমর্থন নয়, প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের কারণে শান্তির জন্য নোবেল বিজয়ী সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিশ্ব বিবেককে করেছে যারপরনাই লজ্জিত।
রোহিঙ্গা জাতিসত্তার নিধনকল্পে যে কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে এবং এই অমানবিক, অমানুষিক হত্যাযজ্ঞের ফলে যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নারী- শিশু-পুরুষ তথা আবালবৃদ্ধ জনতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সামান্য আশ্রয়ের খোঁজে স্র্রোতের মতো প্রতিনিয়ত ঢুকে পড়ছে, তা এক মারাত্মক সঙ্কট ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে। কিন্তু জাতির জনকের সুযোগ্য তনয়া অত্যন্ত সাহসী ও নির্ভীক কণ্ঠে বিশ্বে বিরল অনবদ্য মানবিকতায় ঘোষণা দিয়েছেন ‘বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষ যেখানে পেট ভরে খেতে পাচ্ছে, সেখানে পাঁচ-সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের যোগান দেয়া দেশের জন্য কোন কঠিন কাজ নয়। আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে আমরা তাদের পাশে থাকব।’ এক অত্যন্ত উঁচু মার্গের বিশ্ববরেণ্য ও নন্দিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সরকারপ্রধান হিসেবে সুদৃঢ় ও সুস্পষ্টভাবে বলেছেন ‘এটি মিয়ানমার সরকারের সৃষ্ট সঙ্কট, এই সঙ্কট তাদেরই সমাধান করতে হবে। এই বিতাড়িত জনগোষ্ঠীকে স্বসম্মানে, স্বমর্যদায় সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে।
অতীব দুঃখের সঙ্গে তবুও এই মহান নেত্রীর ও মহীয়সী রমণীর জন্মদিনে কিছু লেখার ঐকান্তিক ইচ্ছাটাকে হৃদয়বন্দী করা যাচ্ছে না। সকলের হয়ত জানা যে, মানব অভিজ্ঞতার স্বরূপ উন্মোচনের যে কয়টি পন্থা বা আদর্শ প্রচলিত সমাজে সর্বত্রই গ্রহণযোগ্য তা হলো জানা, অনুভূতি ও ইচ্ছা। এই তিনটি প্রত্যয়ের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে সত্য, সুন্দর ও শুভ। এই তিনটি মৌলিক উপাদানকে ধারণ করেই আমাদের মাঝে প্রতি বছর আসে ঋতু জগতের অন্যতম ’শরতকাল’। পুত-পবিত্র, শান্ত-সৌম্য, মঙ্গল আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে সাদা মেঘের ভেলা ও বাঙালীর অতি প্রিয় সাদা কাশফুলের প্রাণঢালা অভিবাদন। রবি ঠাকুরের আরেকটা সঙ্গীতের মাধ্যমে এই দিনটিকে বরণ ও স্মরণ করতে চাই ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’। এই শুভ্র শরতেই যার জন্ম তিনি আর কেউ নন, বাঙালীর হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত, প্রাণস্পন্দনে সঞ্চারিত এবং জ্ঞান প্রজ্বলনে উচ্ছ্বসিত সেই মহান নেত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা ও মানবিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি-দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, এই মহান নেত্রী সম্পর্কে যে সব উক্তি বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ করেছেন, তার উদ্ধৃতি প্রয়োজন। Mr. John Kerry, The Former US Secretary of State “Bangladesh is growing in the vision of Bangabandhu under the strong leadership of Sheikh Hasina.” The Former Indian President Mr. Pranab Mukherjee বলেছেন “The strong leadership of Sheikh Hasina has set Bangladesh on the road of progress and prosperity.” The Former British Prime Minister Mr. David Camerone “Sheikh Hasina’s leadership in socioeconomic development and ensuring gender equality is unmatched and also an example for the world to follow.” Indian present Prime Minister Mr. Narendra Modi-“Bangabandhu founded Bangladesh and his daughter Sheikh Hasina saved it.” Princes Anne, Daughter of UK’s Queen Eli ’abeth I বলেছেন- “Sheikh Hasina has demonstrated an exemplary commitment for women empowerment, rooting out militancy and terrorism, and strengthening democratic institutions.”

Mr. Ban Ki-Moon, Former UN Secretary General-বলেছেন Under the leadership of Sheikh Hasina, Bangladesh has the potential to emerge as a key player in addressing the climate change and disaster risk reduction issues at the international level. “ Veena Sikri, Former Indian High Commissioner in Dhaka বলেছেন -Khaleda Zia had denied the presence of terrorists and Indian insurgents in Bangladesh when she was in power, but Prime Minister Sheikh Hasina has uprooted them.” Mr. Shashi Tharoor M.P, Former Under Secretary General Of United Nations (UN) and Chairman of the Parliamentary Standing Committee on External Affairs, India বলেছেন “Sheikh Hasina’s government has not just denied terrorist and militant groups shelter; it has actively intercepted them, arrested their leaders, and even handed wanted terrorists over to the Indian government” উল্লিখিত বক্তব্য থেকেই সমগ্র বিশ্বে এই নেত্রীর অবস্থানের সুদৃঢ়তাকে অতি সহজে উপলব্ধি করা যায়।
উল্লেখ্য, যে কয়টি বিশ্বখ্যাত পুরস্কার বা অধিৎফ শুধু এই নেত্রীকে নয় পুরো বাঙালী জাতি-রাষ্ট্রকে বিশ্ব দরবারে এক ঈর্ষণীয় পর্যায়ে মর্যাদাসীন করেছে, সেগুলো হলো ২০০০ সালে ‘Pearl S Buck ’ Award, ২০১০ সালে যথাক্রমে সহস্র্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিশেষ করে শিশু মৃত্যু হার ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘ পুরস্কার এবং ‘Indira Gandhi Peace Pei “e’, ২০১১ সালে ‘ICT Award’, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে UNESCO কর্তৃক যথাক্রমে’ Cultural Diversity ’ এবং ‘Tree of Peace Award, ২০১৩ সালে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ‘United Nations South-South’ Award, ২০১৪ সালে ‘United Nations South-South Cooperation Visionary Award, ২০১৫ সালে যথাক্রমে ‘Women in Parliament Global Forum’ Award, ‘ICT in Sustainable Development’ Award এবং ‘Champion of the Earth’ Award, ২০১৬ সালে ‘Planet 50-50 Champion’ and ‘Agent of Change’ Award ইত্যাদি।
এটি সর্বজনবিদিত যে, ব্রিটিশ শাসিত ভারত বর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৪০ সালের ‘লাহোর প্রস্তাব’ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই প্রস্তাবটির প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার প্রধান কারণ এই প্রস্তাবেই সর্বপ্রথম উত্থাপিত হয়েছিল তিনটি দেশের প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ মুসলিম অধ্যুষিত দুটি অঞ্চলকে ঘিরে দুটি এবং বাকি অঞ্চলকে ঘিরে আরেকটি পৃথক দেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মুসলিম অধ্যুষিত সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রা ও আঙ্গিকের দুটি অঞ্চল ঘিরে পাকিস্তান নামের একটি দেশ এবং হিন্দু অধ্যুষিত বাকি অঞ্চলকে ঘিরে ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ১৫ আগস্ট ভারত নামের আরেকটি দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তান নামক উল্লিখিত দেশটির পশ্চিম অংশের বর্তমান নাম পাকিস্তান এবং পূর্বে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরের অংশের নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামে এ রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠার পটভুমি ছিল বড় করুণ, যন্ত্রণাদায়ক এবং রক্ত-ক্রন্দনের হাহাকারে ভরা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে এই বাঙালী জাতিকে ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতির মোকাবেলা করে প্রচন্ড তীব্রতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে লড়তে হয়েছে।
৮০ হাজার সেনা সদস্য, ২৫ হাজার মিলিশিয়া, ২৫ হাজার বেসামরিক বাহিনী এবং প্রায় ৫০ হাজার রাজাকার, আলবদর ও আলশামস সম্মিলিত পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে এক লাখ পঁচাত্তর হাজার বাঙালী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনী হিসেবে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার অকুতোভয় ভারতীয় সেনা সদস্যদের। বিনিময়ে ত্যাগের প্রকৃতি, মাত্রা ও ত্যাগীর সংখ্যা ছিল অসংখ্য। যদিও ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড আলমানাকের মতে ১০ লাখ ও নিউইয়র্ক টাইমস্ (২২ ডিসেম্বর ১৯৭২) অনুসারে ৫ থেকে ১৫ লাখ, কম্পটনস এনসাইক্লোপিডিয়া ও এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা অনুযায়ী এটি ছিল ৩০ লাখ প্রাণ বিসর্জন (যেটি প্রতিষ্ঠিত সত্য) এবং বিপুল সংখ্যক জননী, জায়া ও কন্যার অতি সযতেœ রক্ষিত সম্ভ্রম। (মুহম্মদ জাফর ইকবাল; ২০০৮)
জাতির ভাগ্যে অধিকতর বেদনাদায়ক কালো অধ্যায়ের আরেক সৃষ্টি হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, যে দিন জাতির জনককে সপরিবারে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে বিদেশে অবস্থান করার কারণে বেঁচে গেলেন জাতির জনকের অত্যন্ত আদরের তনয়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। অনেক নির্যাতন, নিপীড়ন ও বন্দী জীবনকে পরাভূত করে এ দেশের মাটি ও মানুষের আস্থা, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় ¯িœগ্ধ শরতকালে জন্ম নেয়া বাংলার কাশফুল কন্যাই হচ্ছেন আজকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, ধরিত্রী; সমুদ্র; সীমান্ত; মঙ্গাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন বিজয়ী দেশরতœ শেখ হাসিনা। উন্নয়নের সকল সূচকে ঈর্ষণীয় অর্জনের গৌরবগাথায় বিশ্ব দরবারে সমাদৃত আজ বাংলাদেশ এক বিস্ময়কর ও অভাবনীয় অগ্রগতির স্মারক যার সফল রূপকার হচ্ছেন দেশরতœ শেখ হাসিনা, জাতির জনকের ‘হাচু’ (হাসু) এবং শহীদ বঙ্গবন্ধুর সন্তানদের প্রিয় ‘হাচু (হাসু) আপা’।
প্রাচ্যের আধুনিক উন্নয়ন নায়কের যে নামটি অতি সম্মানের সঙ্গে বিশ্ব পরিমন্ডলে উচ্চারিত, তিনি হচ্ছেন মালেশিয়ার ড. মাহাথির মুহাম্মদ। ২২ বছরের অত্যন্ত দক্ষ, যোগ্য ও প্রজ্ঞার রাষ্ট্রÑ প্রশাসনের মাধ্যমে যিনি মালেশিয়াকে একটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অতি উঁচু মার্গের প্রাচ্যখ্যাত উন্নত দেশে সমৃদ্ধ করেছেন। তার বিভিন্ন ভাষণে যে বার্তাটুকু অত্যন্ত নিপুণভাবে বিশ্ববাসীকে পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তা হলো চমৎকার দুটি প্রত্যয়; ক) Honesty (সততা) ও খ) Opportunity (সম্ভাবনা) অর্থাৎ সততার কর্ষণ, চর্চা, বিকাশ ও বিস্তার এবং সচল সূযোগগুলো কাজে লাগিয়ে অপার সম্ভাবনাকে জাতির কল্যাণে নিশ্চিত করা। অতুলনীয় এই ব্যক্তিত্বের প্রাণস্পন্দন ছিল তার দেশের জনগণের আস্থা, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। দৃঢ়চিত্তে পশ্চিমা বিশ্বের সকল লুম্পেন বুর্জোয়া ব্যবস্থা ও সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে আপন শক্তিতে মহিয়ান হয়ে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে প্রজ্বলিত করেছেন।
ঠিক একই রকম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার অনেক ভাষণে যে বিষয়টি দাবি করেছেন- ‘সত্যের জয় অনিবার্য’ এবং ‘সততার জয়ও অবশ্যই অনিবার্য’ তথা বলিষ্ঠচিত্তে নির্ভীক স্বাধীনসত্তায় আতœপ্রত্যয়ী এ মহীষয়ী নেত্রী তথাকথিত উন্নত শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু ও অপপ্রচারণা এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল অশুভ চক্রান্ত ও প্ররোচণাকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র এবং পদ্মা সেতু নির্মাণকে নিয়ে যে মিথ্যা নাটকের অবতারণা তার স্বরূপ যথার্থভাবে বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে বিশাল অঙ্কের প্রয়োজনীয় বাজেটের আওতায় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞ এক অভূতপূর্ব সাফল্য ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। কবি সুকান্তের কবিতার বিখ্যাত কয়টি পংক্তি আজ বাঙালীর আবেগী এবং অবিনাশী শক্তিকে নতুন করে শাণিত করেছে; ‘শাবাশ বাংলাদেশ, এই পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়- জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’।
দেশের উন্নয়নের একটি প্রধান খাত জনশক্তি রফতানি, যার মাধ্যমে প্রবাসীদের উপার্জিত আয় দেশের রেমিটেন্স প্রবাহকে সমৃদ্ধ এবং আর্থিক বুনিয়াদকে করে শক্তিশালী। অনেক চক্রান্তকে অতিক্রম করে বাংলাদেশের কম শিক্ষিত/প্রশিক্ষিত ও দক্ষ/অদক্ষ এই মানব সম্পদ বিশ্বের প্রায় শ্রমবাজারে অত্যন্ত পরিশ্রমী যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে দেশের ভাবমূর্তি করেছেন অতিশয় উজ্জ্বল। এই অন্যতম উপার্জন খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থে আজ দেশে রিজার্ভ ফান্ডের পরিমাণ প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উল্লেখ্য, যে অভাবী ও হতদরিদ্র্য দেশের এই মানব সম্পদ কি নিদারুণ কষ্টকে ধারণ করে প্রবাসী জীবনযাপনের মাধ্যমে কঠিন পরিশ্রমের বিনিময়ে যে অর্থ উপার্জন করছেন তা জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের বক্তব্যে উঠে আসে এভাবে ‘Too maû workers still nwo live in the worst conditions having least access to basic services and fundamental rights of themselves; thus making them disproportionately vulnerable to extortions, violence, discrimination and marginali’ation..’ (প্রফেসর ড. এএইচএম জেহাদুল করিম; ২০১৬)
প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা যেটি সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বক্তব্য অনুসারে ইতোমধ্যেই নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশ তথা গড় মাথাপিছু আয় প্রায় ১৪০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি উন্নীত হয়েছে। ২০১৫ সালে ESCAP-এর আর্থ- সামাজিক, পরিবেশ-প্রতিবেশ সূচক অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও বাংলাদেশের অবস্থান পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
৫ এপ্রিল ২০১৭ প্রকাশিত Human Development Index Report অনুসারে পৃথিবীর প্রায় ১৮৮টি দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা খাত, গড় আয়ু, রাজনীতি ও পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদি বিবেচনায় অর্থাৎ অতি উচ্চ মানব উন্নয়ন, উচ্চ মানব উন্নয়ন, মধ্য মানব উন্নয়ন এবং নি¤œ মানব উন্নয়ন পর্যায়ে উন্নীতকরণের ধাপ চিহ্নিত করে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ১৪২তম। বর্তমান দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.১ শতাংশ, মাথাপিছু জিডিপি ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৯০ লাখ, বেকারত্বের হার ২.৪ শতাংশ ইত্যাদির পরিসংখ্যান জাতির জনকের সোনার বাংলা বিনির্মাণে উর্বর ক্ষেত্রকে উপস্থাপন করে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক জীবন ব্যবস্থার একটি স্বাধীন দেশ উপহার দেয়ার স্বপ্ন থেকেই দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করেছিলেন। জাতির কাছে বঙ্গবন্ধুর আবেদনটুকু ছিল ‘আমার গরিব জনগণ যেন মোটা ভাত খেয়ে এবং মোটা কাপড় পরে শান্তিতে থাকতে পারে।’ গরিব মেহনতী জনতার সুগভীর দরিদ্রতাকে উৎপাটন করে একটি ক্ষুধামুক্ত – দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনিমার্ণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সুদৃঢ় লক্ষ্যস্থির নিশ্চিত করে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
১৯৪৭ পূর্বে বহিঃঔপনিবেশিক এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের আন্তঃঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোয় আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে সামগ্রিক নিষ্পেষণের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ বাঙালী জাতি বহু রক্তের বিনিময়ে লাল সবুজের পতাকার এই দেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম করেছে। এ জাতির ভাগ্য জাতির সমগ্র জনগণই নির্ধারণ করবে। মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনা তথা বাঙালী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কাঠামোয় একটি সুখী-সমৃদ্ধ শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরতœ শেখ হাসিনা আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ উৎপাদন এবং তার যথার্থ ব্যবহারে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালে আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশবাসীর সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ইস্পাত কঠিন আত্মপ্রত্যয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটিই আজকের দিনের প্রত্যাশিত প্রার্থনা।
লেখক : ডঃ ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ, উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published.