প্রধান বিচারপতি সিনহা আপনাকে শ্রদ্ধাসহ বিদায়

ফাহাদ বিন হাফিজ॥ বিদায় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধান বিচারপতি। বিদায় এ কারণে যে, প্রধান বিচারপতির একমাসের ছুটি গ্রহণের মধ্যে দিয়ে মূলত: প্রধান বিচারপতির অধ্যায় শেষ হলো। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী নভেম্বরে আবার তিনি দীর্ঘ ছুটিতে যাবেন। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট শীতকালীন ছুটিতে যাবে। ছুটির পর জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট খুলবে। প্রধান বিচারপতি ৩০ জানুয়ারি আবার প্রধান বিচারপতি হিসেবে বেঞ্চে বসবেন, কেবল বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতার জন্য।
প্রধান বিচারপতিকে অবশ্যই ধন্যবাদ। ধন্যবাদ এজন্য শেষ পর্যন্ত তিনি ষড়যন্ত্রের ফাঁদ থেকে সরে আসতে পেরেছেন। সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একগুয়েমীর পথ পরিহার করেছেন। ষড়যন্ত্রকারীদের চিনতে পেরেছেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ সালে শপথ নেন। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি নানা বিতর্কে জড়িয়ে পরেন। বিশেষ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব আদালতের গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় রাজনীতির ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রায় নিয়ে তাঁর কথোপকথনের টেপ প্রকাশিত হয়। এই সময় বিচারপতি সিনহা একজন গণমাধ্যম কর্মী এবং দুজন মন্ত্রীকে আদালত অবমাননার দায়ে দন্ডিত করেন। এই রায়ের পর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য এক বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত, প্রধান বিচারপতির এত কথা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। সরকারের নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয়, অধ:স্তন আদালতের বিচারকদের আচরণ বিধি নিয়ে। আর এই বিরোধ বিস্ফোরণে রূপ নেয়, ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় নিয়ে। আপিল বিভাগ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করলে সংসদে উত্তপ্ত বিকর্ত হয়। আওয়ামী লীগ রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ করে। জবাবে প্রধান বিচারপতিও পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে বিতর্কে ঘি ঢালেন। এর মধ্যে সরকারের দুজন ব্যক্তি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী আইনমন্ত্রী, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। অন্যদিকে, ‘রায়ের একটি শব্দও বাদ দেওয়ার মতো নয়’ ড. কামাল হোসেনের এই বক্তব্যের পর প্রশ্ন ওঠে কে লিখেছেন ওই রায়?
উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট ছুটি হয়। এ সময় সরকারের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির একটি সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট অবকাশে গেলে কানাডা এবং জাপানে যান। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরে আসেন। এসময় তিনি তাঁর অফিসেও বসেন। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে চান। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে সময় দেননি। ২৩ সেপ্টেম্বর এর পর থেকে ড. কামাল হোসেন বিএনপি পন্থী একাধিক আইনজীবী তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তাঁকে দায়িত্ব চালিয়ে যাবার জন্য তাঁরা সাহস দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি ছুটিতেই গেলেন। ছুটিতে যাবার চিঠি পাঠিয়ে তিনি তাঁর বাসভবনে যান। এ সময় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে, তিনি সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকৃতি জানান। মূলত: তাঁর এই ছুটির আবেদনের মধ্যে দিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর ঘটনা বহুল অধ্যায় শেষ হলো। আর ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ এর পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে ভেস্তে গেলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.